প্রযুক্তি ডেস্ক
বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে স্মার্টফোনের ব্যবহার মানুষের কঠিন কাজকেও সহজ করে দিয়েছে। স্মার্টফোনের মাধ্যমে ঘরে বসেই প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নেওয়াসহ দূর-দুরান্তের খবরাখবর মুর্হূতেই জেনে নেওয়া যাচ্ছে।
প্রতিনিয়তই স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। ব্যবহারকারীরা হরহামেশায় তাদের ব্যক্তিগত ও কর্মক্ষেত্রর গুরুত্বপূর্ণ গোপনীয় সব তথ্য স্মার্টফোনে রাখছেন। এতে অনেক সময় প্রিয় স্মার্টফোনটি চুরি হয়ে গেলে অনেকেই বিপদের সম্মুখিন হন।
প্রিয় স্মার্টফোনটি চুরি হয়ে গেলে অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েন। কী করবেন সেটা বুঝতে পারেন না। প্রথমত, চুরি হওয়া স্মার্টফোনটি খুঁজে পেতে আপনার নিকটস্থ থানায় জিডি করতে হবে। কারণ স্মার্টফোন ও ফোনে থাকা সিম দিয়ে হয়তো অপরাধীরা গুরুতর কোনো অপরাধ করতে পারেন। এতে সব দ্বায়ভার আপনার ওপর চলে আসতে পারে।
জিডি করার সময় অবশ্যই স্মার্টফোনের যাবতীয় তথ্য, সেটের মডেল নম্বর ও সিমের তথ্য দিয়ে কবে, কখন কীভাবে ফোনটি হারিয়ে গেল, তা বিস্তারিত জানাবেন। আর অবশ্যই ফোনটির আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল স্টেশন ইক্যুপমেন্ট আইডেনটিটি) নম্বর বা ফোনের সিরিয়াল নম্বর গুরুত্বসহকারে উল্লেখ করবেন।
আপনার ফোনের সিরিয়াল নাম্বার জানতে *#০৬# নম্বর ফোনের কি প্যাডে লিখলে পর্দায় ১৫ সংখ্যার একটা নম্বর দেখা যাবে। মুঠোফোন হারিয়ে গেলে এই ১৫ নম্বরটা জানা থাকলে, পুলিশের সাহায্যে সহজেই মুঠোফোনটির অবস্থান জানা যাবে।
এরপর ফোনের মধ্যে থাকা সিমকার্ডের কলসেন্টারে ফোন করে সংযোগটি বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
জিডি করার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ফোনটির অবস্থান সনাক্ত করা সম্ভব। আপনার ফোন খুঁজে বের করার জন্য একজন তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত থাকবেন। তাকে যতটা সম্ভব ফোনটি খুঁজে পেতে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করা উচিত।
এছাড়াও আপনার চুরি হওয়া স্মার্টফোনটি খুঁজে পেতে সরাসরি র্যাব অফিসে যোগাযোগ করে লিখিত অভিযোগ করতে পারেন। সেই সঙ্গে হারিয়ে যাওয়া ফোনটি ফিরে পেতে আইনি সহায়তা চাইতে পারেন।
আইনী প্রক্রিয়া ছাড়াও আপনি নিজে থেকেই আপনার হারিয়ে যাওয়া প্রিয় স্মার্টফোনটি খুঁজে বের করতে পারেন। সেই পদ্ধতিটি হলো স্মার্টফোনের লোকেশনের মাধ্যমে। এজন্য আপনাকে অ্যান্ড্রয়েডের জন্য গুগল সেটিংস থেকে সিকিউরিটিতে যেতে হবে। সেখানে ‘রিমোটলি লোকেট দিস ডিভাইস’ অপশনটি চালু করে রাখতে হবে।
এরপর ফোনের কোনো ব্রাউজার থেকে android.com/find- এ যেতে হবে। এ কাজটি আপনি অন্য কোনো মোবাইল বা কম্পিউটার থেকেও করতে পারবেন। এ প্রক্রিয়ায় হারানো ফোনটির অবস্থানের তথ্য রিয়েল-টাইমে পাবেন। এছাড়া আপনি যদি মনে করেন আশেপাশে আপনার ফোনটি আছে সেক্ষেত্রে ফোনটির অবস্থান জানার জন্য অন্যান্য অপশন থেকে ফোনটিতে রিং বাজারে পারেন।
আইওএস অপারেটিংয়ের ক্ষেত্রে ‘সেটিংস’ থেকে আইক্লাউডে যেতে হবে। সেখানে ‘ফাইন্ড মাই ফোন’ চালু করবেন। খেয়াল করবেন আপনার ‘প্রাইভেসি’ সেটিংসে ‘লোকেশন সার্ভিস’ চালু করা আছে কিনা। আইফোন হারিয়ে গেলে বা চুরি হলে icloud.com/find-এ গিয়ে নিজের অ্যাপল অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে ফোনের অবস্থান জেনে নিন।
কয়েকটি অ্যাপসের মাধ্যমেও আপনার ফোনটি ফিরে পেতে পারেন। সেগুলো হলো-
১. হোয়্যার ইজ মাই ড্রয়েড (http://goo.gl/LImXw) : হারানো ফোন খুঁজে পাওয়ার জন্য হোয়্যার ইজ মাই ড্রয়েড অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি অ্যাপ। হারিয়ে যাওয়া ফোনটির অবস্থান চিহ্নিত করা, সেটি খুঁজে পাওয়া এবং ফোনের তথ্য নিরাপদে রাখার জন্য এতে আছে বিভিন্ন সুবিধা। ফ্রি, লাইট এবং প্রো নামের আলাদা তিনটি সংস্করণ রয়েছে এর। ফোন হারিয়ে গেলে বা চুরি হয়ে গেলে এসএমএসের মাধ্যমে ফোনের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই অ্যাপ্লিকেশনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো— এখানে কমান্ডার নামে একটি অংশ রয়েছে। কমান্ডার সক্রিয় থাকলে অ্যাপ্লিকেশনটির মূল ওয়েবসাইট থেকে ফোনের অবস্থান নির্ণয় করা যায়।
২. অ্যাভাস্ট (http://goo.gl/F72Xa): অ্যাভাস্ট অ্যাপ্লিকেশনটি তৈরি করা হয়েছে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা দেয়ার জন্য। অ্যাপের একটি অংশ অ্যান্টিভাইরাস এবং ম্যালওয়্যার স্ক্যান করে। আর অ্যাপটিতে App Disguiser এবং Stealth Mode নামের দুটি বিশেষ সুবিধা রয়েছে। এটি ব্যবহার করে ব্যবহারকারী অ্যাপটি লুকিয়ে রাখতে পারবেন। এটি বিশেষভাবে কার্যকর, যদি ফোনটি কখনো চুরি হয়ে যায়।
তবে অ্যাপ্লিকেশনটি আনইনস্টল করার পদ্ধতিটি বেশ জটিল। ইনস্টল করার পর যদি ফোনটি খোঁজা হয় কখনো, তা হলে অ্যাপটি আনইনস্টল করা এক রকম অসম্ভব হয়ে যায়। অ্যাপ্লিকেশনটি নিজে থেকেই সিস্টেম রিস্টোর করতে পারে এবং ফোনের ইউএসবি পোর্ট বন্ধ করে দিতে পারে।
৩. প্ল্যান বি (http://goo.gl/0Z9ys): তালিকার অন্য অ্যাপ্লিকেশনগুলো থেকে এটা কিছুটা আলাদা। ফোন হারিয়ে যাওয়া বা চুরি হয়ে যাওয়ার পর হয়তো মনে হতে পারে, যদি আগেই একটি অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করা থাকত, তা হলে হয়তো ফোনটি খুঁজে পাওয়া যেত। আর এ ধরনের পরিস্থিতির জন্যই তৈরি করা হয়েছে প্ল্যান বি অ্যাপটি। ফোনটি হারিয়ে যাওয়ার পর গুগল প্লে সাইটে গিয়ে এ অ্যাপটি ইনস্টল ক্লিক করতে হবে। এরপর অ্যাপটি নিজে থেকেই ইনস্টল হয়ে যাবে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে জিপিএস চালু হয়ে যাবে। ফোনটির অবস্থান বের করার পরপরই একটি ই-মেইলের মাধ্যমে গুগল ম্যাপের লিংকসহ ফোনের অবস্থানটি জানিয়ে দেয়া হবে।
৪. লুকআউট (http://goo.gl/QApgd): লুকআউট হলো অ্যান্ড্রয়েড যন্ত্রগুলোর উপযোগী অপর একটি পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা এবং ব্যাকআপ নেয়ার সফটওয়্যার। এই অ্যাপের মাধ্যমে বিনা মূল্যে অ্যান্টি ভাইরাস সুবিধা পাওয়া যায়। পাশাপাশি ফোনে থাকা নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর ও তথ্য ব্যাকআপ নেয়ারও সুবিধা পাওয়া যাবে এখানে। আর মোবাইল ফোন হারিয়ে বা চুরি হয়ে গেলে এসএমএসের মাধ্যমে ফোন লক করে দেয়া বা অবস্থান চিহ্নিত করার সুবিধাও রয়েছে এখানে।
৫. লস্ট ফোন (http://goo.gl/X73yq): হারিয়ে যাওয়া ফোন খুঁজে পাওয়ার জন্য অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশনের মতো একই ধরনের সুবিধা পাওয়া যাবে এখানে। যার মধ্যে রয়েছে এসএমএসের মাধ্যমে ফোন লক করে দেয়া, ফোনের অবস্থান জানা। আবার ফোনের রিংটোন বাড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে, যেন ওই নম্বরে ফোন করা হলে সেটি খুঁজে পাওয়া যায়। আর এখানে আরও একটি বিশেষ সুবিধা হলো, যে সিম কার্ডটি লাগানো অবস্থায় এই অ্যাপটি ইনস্টল করা হয়েছে, সেটি পরিবর্তন করে অন্য কোনো সিম লাগানো হলে অ্যাপ সেটিংসে উল্লেখ করা নির্দিষ্ট কয়েকটি নম্বরে নতুন সিম নম্বরটি এসএমএস হিসেবে চলে যাবে।
Discussion about this post