অনলাইন ডেস্ক
১৯৮০ সালে কাবুলের হাজারা পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ফাহিম। সংসারের অবস্থা ছিল দিন আনি দিন খাই যাকে বলে হ্যান্ড টু মাউথ । কোনো রকমে পড়াশোনা করতে পারলেও শিখে নিয়ে ছিলেন ঝরঝরে ইংরেজিতে কথা বলার গুণ। এরপর শিক্ষকতার চাকরি শুরু করেন তিনি। কিন্তু মাস শেষে হাতে পেতেন নামমাত্র মূল্যে বেতন। এ সময় তার সম্বল ছিল একটি ভাঙা সাইকেল।
এই টানাটানির সংসারে বড় হয়েছিলেন আফগানিস্তানের ফাহিম। আফগান যুদ্ধের দামামাই জীবন পাল্টে দেয় ফাহিম হাশিমির।
২০০১ সালে আমেরিকার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলা চালায় আল কায়দা। তাতেই আফগান আকাশে নেমে আসে কালোছায়া। আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে যুদ্ধবিমান আর বোমাবারুদের শব্দে। সে সময় ফাহিমের বয়স ছিল ২১।
আফগানিস্তানে ওসামা বিন লাদেনের নাগাল পেতে ইংরেজিতে দখল থাকা স্থানীয় দোভাষীর প্রয়োজন ছিল আমেরিকার। তাই আফগানিস্তানে পা রেখে প্রথমেই স্থানীয় দোভাষী খুঁজতে শুরু করে আমেরিকা। তালিবানকে হঠাতে আফগানিস্তানে প্রচুর লোক নিয়োগ করে তারা। ইংরেজি জানার দৌলতে আফগানিস্তানে আমেরিকার সেনার দোভাষী নিযুক্ত হন ফাহিম। তাতেই তার জীবনের মোড় ঘুরে যায়।
এরপর ধীরে ধীরে আমেরিকার বিশ্বস্ত হয়ে ওঠেন ফাহিম। আমেরিকা এবং আফগান সেনাকে রসদ এবং সরঞ্জাম পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পান তিনি। ক্রমে অস্ত্রের ঠিকাদার হয়ে ওঠেন তিনি। আফগান সেনাকে জুতো, জ্বালানি এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠানোর কাজ নেন। একেবারে শুরুতে আমেরিকার সেনাকে ৬০০ ডলারের বিছানার চাদর সরবরাহ করে যাত্রা শুরু করেন তিনি। দীর্ঘদিন আমেরিকা, ব্রিটেন এবং ন্যাটো বাহিনীর সংস্পর্শে থেকে তাদের আদবকায়দা শিখে নিয়েছিলেন ফাহিম। পরবর্তীকালে বিদেশ থেকেও কাজের বরাত নিতে শুরু করেন তিনি। ব্যবসায়িক বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে পরবর্তী কালে কোটিপতি হয়ে ওঠেন ফাহিম। বর্তমানে হাশিমি গ্রুপের মালিক তিনি। আফগানিস্তানের জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল ‘১ টিভি’-এর মালিক ফাহিম। এ ছাড়াও একটি অন্তঃদেশীয় বিমান সংস্থা ‘ইস্ট হরাইজোন’-ও রয়েছে তার। শুধু টিভি চ্যানেলটির বাৎসরিক ব্যবসাই ২০ কোটি ডলারের বেশি।
তবে বহির্বিশ্বে বিনিয়োগের ঘোর বিরোধী ফাহিম। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি আমার সব বিনিয়োগ দেশের ভেতরেই করেছি। এর জন্য আমি গর্বিত। নিজের দেশের টাকা বিদেশে বিনিয়োগ করাকে আমি সমর্থন করি না।
শুধু তাই নয়। তালেবানরা যখন কাবুল দখল করছিল তখনও দেশ ছেড়ে যাননি ফাহিম। পরিবার নিয়ে এখনও সেখানেই আছেন। দেশ ছাড়ার চেষ্টাও করেননি তিনি। যদিও তার পরিবারের অনেকেই দুবাই থাকে।
তবে ইংরেজি শিক্ষক থেকে শিল্প সাম্রাজ্য, ৯/১১-ই তার জীবন পাল্টে দিয়েছে বলে বিবিসিকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেন ফাহিম। তার বক্তব্য, সেই সময় খুব কম লোকই ইংরেজি জানতেন। সৌভাগ্যবশত আমি ছিলাম তাদের এক জন। তাতেই জীবন পাল্টে গেছে।
Discussion about this post