শিক্ষার আলো ডেস্ক
গত দেড় বছরের করোনা মহামারিতে সারা দেশে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে।
এতে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। শিক্ষাবিদরা বলছেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দিয়ে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। এদিকে আবারও ঘুরে দাঁড়াতে সহজ শর্তে সরকারি প্রণোদনা চায় কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশন।
তিনতলা ভবনের এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১২টি কক্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২৫০। মূলত এলাকার নিম্নমধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীরাই পড়তে আসত এখানে। যাদের শিক্ষার ভবিষ্যৎ এখন অনেকটাই অনিশ্চয়তায়। ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধের চিত্র এমন আরও অনেক। মিরপুর শাহ আলী থানা এলাকার একটি ভবনে ছিল নবাবেরবাগ সেন্ট্রাল হাইস্কুল। শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ও স্কুল খরচ বহন করতে না পারায় তা এখন বন্ধ। চিরচেনা ক্লাসরুমে পাঠ্য নির্দেশনার জন্য হোয়াইট বোর্ড পড়ে থাকলেও এখন তা শুধুই জড়বস্তু।
স্কুল ভবনটির দারোয়ান বলেন, স্কুলটির ভেতরে গেলে খুব কষ্ট লাগে, একটা সময় ছিল সকাল বেলায় শিশুদের কোলাহলে মুখরিত থাকত। এখন শুধুই নীরবতা।
আর লকডাউন শেষে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হলেও অনেক শিক্ষার্থীই ফিরতে পারেনি তাদের প্রিয় ক্লাসরুমে। আর তাই শিক্ষাবর্ষ পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকি নিয়ে শঙ্কিত অভিভাবকরা।
অভিভাবকরা বলেন, স্কুল বন্ধ থাকায় অন্য স্কুলে এ সময় বাচ্চাকে ভর্তি করাতে পারছি না। কম খরচে যদি স্কুলটি শুরু করতো তাহলে বাচ্চাদের আবার ভর্তি করাতাম।
শিশুশিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা আমাদের স্কুলে যেতে চাই। আমাদের স্কুলটা খুলে দেওয়া হোক।
কিন্ডারগার্টেন অ্যাসাসিয়েশনের দাবি, দেশে প্রাক প্রাথমিকের ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থীই কিন্ডারগার্টেনের। আর তাই দেশে শিক্ষার হার ও মান ধরে রাখতে এবং বেকার সমস্যা মোকাবিলায় সহজ শর্তে সরকারি প্রণোদনা পেলে আবারও ঘুরে দাঁড়াবে এসব প্রতিষ্ঠান।
কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মিজানুর রহমান সরকার বলেন, এ প্রতিষ্ঠানগুলো টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারকে অনুরোধ করব আমাদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া হোক।কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের মতে সারা দেশে ৪০ হাজার কিন্ডারগোর্টেন স্কুল রয়েছে। যার মধ্যে ১৮০০ স্কুল নিবন্ধিত। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৭৫ লাখ।
আর শিক্ষাবিদরা বলছেন, বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি সুবিধা দিয়ে ও শিক্ষক সংখ্যা বাড়িয়ে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, যেসব কিন্ডারগার্টেন ঠিকে আছে যারা ভালো করেছে, যাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি, আর যারা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সেক্ষেত্রে সরকার হয়তো তাদের প্রণোদনা দিয়ে তাদের টিকিয়ে রাখতে পারে।
Discussion about this post