বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক
তবে চাঁদ কি আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছে? পৃথিবী থেকে কি দূরে সরে যাচ্ছে চাঁদ? হ্যাঁ, প্রতিবছরই চাঁদ একটু একটু করে দূরে সরছে পৃথিবী থেকে। বিজ্ঞানীদের গবেষণায় উঠে এসেছে এই তথ্য। হয়তোবা এক ইঞ্চি থেকে দেড় ইঞ্চি করে দূরে সরছে চাঁদ।
বিষয়টা পৃথিবীর মানুষের কাছে একরকম অদৃশ্য, তাই পৃথিবীর মানুষের জন্য অনুমান করাও বেশ কঠিন। কিন্তু এই দূরে সরে যাওয়াটা সময়ের মতোই চলমান আর কোনোভাবেই থামানো সম্ভব না। মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অদৃশ্য কিন্তু কার্যকর। লাখ লাখ বছর পরে চাঁদের সঙ্গে পৃথিবীর আর কোনো সম্পর্কই থাকবে না। চাঁদকে দেখাই যাবে না পৃথিবী থেকে।
পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ, যা লক্ষকোটি বছর ধরে নির্দিষ্ট দূরত্বে এর চারদিকে ঘুরছে। সৃষ্টির শুরুতে চাঁদ পৃথিবীর আরও কাছে ছিল। পাথুরে ধ্বংসাবশেষ নিয়ে পৃথিবীর চারপাশে ঘুড়ে বেড়াত চাঁদ। এখনকার সময়ের চেয়ে চাঁদ পৃথিবীর কক্ষপথের ১০ গুণ কাছে ছিল।
বিজ্ঞানীদের গবেষণা বলে, এই ধ্বংসাবশেষ পৃথিবী আর মঙ্গল গ্রহের আকারের বড় কোনো বস্তুর সঙ্গে সংঘর্ষের পর সৃষ্টি হয়েছিল। কসমিক ওভেন থেকে বের হওয়ার পর পর চাঁদ গরম আর গলিত অবস্থায় ছিল। রং ছিল লাল, পৃথিবী থেকে এখন সূর্যকে যেমনটা দেখা যায়, রাতের আকাশে চাঁদেরও সেই রং ছিল। সেই সময় থেকে প্রতিবছর পৃথিবী থেকে ৮ ইঞ্চি করে দূরে সরছে চাঁদ। এখন অন্য গ্রহ চাঁদকে আকর্ষণ করছে। সেই গ্রহের আকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর তুলনায় বেশি।
পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদের মতো, সব গ্রহের উপগ্রহের নিজস্ব মাধ্যার্কষণ শক্তি আছে। নিজ নিজ গ্রহের ওপর এই মাধ্যাকর্ষণ শক্তি প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে, যেসব গ্রহে পানি থাকবে, সেসব গ্রহে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব বেশি। আমাদের পৃথিবীতে চাঁদের প্রভাবেই জোয়ার-ভাটা হয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, চাঁদ পৃথিবীকে মহাসাগরের দিকে টানছে, কিন্তু সেই মহাসাগরগুলো পেছনে টানছে, তাই চাঁদ তার কক্ষপথে গতি বাড়চ্ছে।
যদি পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করার সময় গতি বাড়িয়ে দেওয়া হয়, তাহলে আরও সফলভাবে পৃথিবী থেকে পালিয়ে যাওয়া যাবে। চাঁদ পৃথিবীর আরও দূর থেকে কক্ষপথে ঘুরবে। চাঁদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য বিজ্ঞানীরা অ্যাপোলো মিশনকে বেছে নিয়েছে। অ্যাপোলোর নভোচারীরা চাঁদের মাটিতে পা রেখে যেসব তথ্য সংগ্রহ আর সরবরাহ করেছিল, সেসব তথ্য পর্যালোচনা করে চাঁদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সঙ্গে আনুষঙ্গিক আরও অনেক বিষয় আছে।
চাঁদে উল্কাবৃষ্টি এবং পৃথিবীতে বরফ যুগের ওঠানামা ছিল সে সময়। শক্তিগুলো চাঁদকে পৃথিবীর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। পৃথিবীর ঘূর্ণন দীর্ঘ হয়, আমাদের দিনের দৈর্ঘ্য বাড়ে। শুরুর দিকে, যখন চাঁদ পৃথিবীর কাছে জমাট বাঁধছিল এবং পৃথিবী দ্রুত ঘুড়ছিল, তখন একটি দিন মাত্র চার ঘণ্টা স্থায়ী ছিল। বাকি সময়টা ছিল রাত। একটা সময় পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে চাঁদ কাছাকাছি আসে। তার পর পৃথিবীর চারপাশে ঘুরতে শুরু করে।
বিজ্ঞানীদের পূর্বাভাস, এখন থেকে প্রায় ৬০ কোটি বছর পরে চাঁদ পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরবে না। চাঁদ তখন পৃথিবীর কাছে একটি দূরের তারা হয়ে থাকবে। খালি চোখে চাঁদের সৌন্দর্য আর দেখাই হয়তো যাবে না। পৃথিবী থেকে অনেক দূরের কোনো কক্ষপথে ঘুরবে। মানব সভ্যতা টিকে থাকলেও দেখবে না সূর্যগ্রহণ কিংবা জোয়ার ভাটা। সূর্যের আলোয় বাঁধা দেবে না চাঁদ। পৃথিবীকে দিতে পারবে না ছায়াও। কিন্তু দূর থেকে দেখবে পৃথিবীর ভয়াবহ পরিণতি।
সমুদ্রের পানি বাষ্প হয়ে যাবে তত দিনে, পৃথিবী উষ্ণ হবে অনেক বেশি। শত কোটি বছর পরে, সূর্য চাঁদকে কক্ষপথ থেকে পুরোই বিচ্যুত করে দেবে। পৃথিবীর পরিণতিও হবে ভয়াবহ। পুরো বিশ্বে ঘটতে পারে আরও বড় বড় ভূমিকম্প। পরিবেশের জন্য যা বয়ে আনতে পারে মহাবিপর্যয়। এমনকি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে পৃথিবী।
Discussion about this post