শিক্ষার আলো ডেস্ক
১৯৯৭ সালে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার কানুপুর উচ্চবিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন রইস উদ্দিন টিপু। দীর্ঘদিন পর তিনি সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে উন্নীত হন। ২২ বছর শিক্ষকতা জীবন পার করার পর ২০১৮ সালে অবসরে যান তিনি।
কিন্তু অবসর জীবনে পা দিয়েই সংসারে শুরু হয় অভাব-অনটন। স্ত্রী ও দুই মেয়েসহ চারজনের সংসার চালাতে হিমশিম অবস্থা। শেষে স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্টে শুরু করেন দিনমজুরের কাজ। এমন দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা হয়।
বিষয়টি নাড়া দেয়ে তার প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের। তারা প্রিয় শিক্ষককে আর রেস্টুরেন্টে কাজ করতে দেখেতে চান না। তাই বসবাসের জন্য তাকে কিনে দেন একখণ্ড জমি। সেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে বাড়ি। এমনকি বর্তমানে যে বাসায় ভাড়া থাকেন, ওই বাসার ভাড়াও দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে বিষয়টি নাড়া দেয় আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও)। তিনি পরে ওই শিক্ষকের হাতে অনুদানের একটি চেক তুলে দেন।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রইস উদ্দিন টিপু বলেন, আমার গড়া শিক্ষার্থীরা আমার দুঃসময়ে পাশে এসে দাঁড়াবে, তা আমি ভাবতেই পারিনি। সত্যিই অনেক ভালো লাগছে ভেবে। তারা আমাকে থাকার জন্য একটি বাড়ি তৈরি করে দিচ্ছে। আমাকে হোটেলের কাজ করতে দেয়নি তারা।
তিনি আরও বলেন, আমি অবসরে যাওয়ার পর ভাতার আবেদন করিনি। বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষকের সহযোগিতায় সেই ভাতার আবেদন সম্পূর্ণ করি।
তিনি আরও বলেন, একটি ফান্ড করে টাকা তোলা হয়। ওই ফান্ডে প্রায় ৪ লাখ টাকা জমা হয়েছিল। এরপর বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে বসে এতে আরও অর্থ যোগ করে স্কুলের পেছনে তিন শতক জমি কেনা হয়। সেই জমিতে একটি বাড়ি নির্মাণের চলছে। বর্তমানে আমাদের রইস উদ্দিন স্যার যে ভাড়া বাসায় থাকেন সেই বাসার ভাড়াও আমরা দিচ্ছি।
কানুপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ কে এম মোস্তাফিজার রানা বলেন, রইস উদ্দিন টিপু স্যার ২০১৮ সালে বিদ্যালয় থেকে অবসরে যান। তার জমিজমা বলতে তেমন কিছুই নেই। রেস্টুরেন্টে কাজ করতে দেখে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের পেছনে তিন শতক জমি কিনে দেয় তাকে। সেখানে এখন একটি সেমি পাকা ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। বর্তমানে তিনি একটি ভাড়া বাসায় রয়েছেন। সেই বাড়িটির ভাড়ার টাকাও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা দিচ্ছে।
আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম হাবিবুল হাসান বলেন, অবসরপ্রাপ্ত ওই শিক্ষক রেস্টুরেন্টে কাজ করার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর আমরা উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকার চেক দিয়েছি।
তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে একটি ফান্ড গঠন করা হয়। ফান্ডের টাকা দিয়ে স্কুলটির পেছনে তিন শতক জমি কিনে সেখানে সেমি পাকা ঘর করা হচ্ছে। সম্মানজনক একটি পেশার মানুষকে রেস্টুরেন্টে কাজ করা অত্যন্ত দুঃখজনক বলে জানান তিনি।সৌজন্যে-ঢাকা পোষ্ট
Discussion about this post