অনলাইন ডেস্ক
বার্লিনের বাংলাদেশ দূতাবাস দীর্ঘদিন জার্মানিতে অবৈধভাবে বসবাস করা ৮১৬ অভিবাসন প্রত্যাশী বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দেশটিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ জার্মানির চাপে নানা কারণে অবৈধ হয়ে পড়া এসব বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাতে হচ্ছে।
রাষ্ট্রদূত আরও জানান, যাদের ফেরত পাঠানো হবে তাদের সব ধরনের তথ্য ইতোমধ্যে দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে যাচাই করা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এ মাসের (অক্টোবর) ২৬ তারিখে প্রায় অর্ধশত অভিবাসনে ব্যর্থ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
তাদের ফেরত পাঠানোর দিনে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় ১৫০ জনের বিশেষ একটি বাহিনী নিয়োজিত থাকবে।
দেশের অভিবাসনপ্রত্যাশী তরুণদের উদ্দেশ্য এ কূটনীতিবিদ বলেন, আদম-ব্যাপারীদের খপ্পরে পড়ে নানা দেশ ঘুরে অবৈধ পথে আর নয় বরং উচ্চশিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে জার্মানিতে নিরাপদ অভিবাসন এখন অনেকটাই সহজ।
যে কারণে অবৈধ বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী অবৈধ বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পাদিত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) চুক্তির আলোকে সরকারকে এটি করতে হচ্ছে। অবৈধ বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে এক্ষেত্রে সরকার নির্বাচন কমিশনের এনআইডি উইং ও পুলিশের বিশেষ বিভাগসহ একাধিক সংস্থার সমন্বয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
ইউরোপে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাসহ ভিন দেশি অনেকেই বাংলাদেশের নাগরিক বলে দাবি করায় ঢাকাকে এ বিশেষ উদ্যোগ নিতে হয়েছে। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে নানা শর্ত জুড়ে দেওয়া হচ্ছে।
সূত্র নিশ্চিত করেছে, যদি অবৈধদের দেশে ফিরিয়ে না নেওয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশ সেনজেন ভিসা সুবিধা পাবে না। একই সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের যে এক বছরের ভিসা দেওয়া হয়, তার সময়কালও কমিয়ে দেওয়া হবে।
এছাড়া আরও কিছু জটিল শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতে, ইউরোপের সেনজেনভুক্ত ২৬টি দেশে অবৈধ বাংলাদেশি রয়েছে। এসওপি চুক্তি অনুযায়ী অবৈধ এসব অধিবাসীকে ফেরত নিতে হবে ঢাকাকে। বারবার তাগাদাও দেওয়া হয়েছে। ইইউর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে সরকার এ প্রত্যাবাসনকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বলেও জানা যায়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যার বিবেচনায় শীর্ষে রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া ও আফগানিস্তান। ইইউ’র হিসাব মতে, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যার বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩০টি দেশের মধ্যে ১৬তম।
অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত আনতে এনআইডি উইংয়ের সার্ভিস সংশ্লিষ্ট এপিআই সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৯ সালের ২০ মে সভার কার্যবিবরণী পর্যালোচনা করে পাওয়া যায়, ইউরোপে অবস্থিত অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত না আনলে বৈধ বাংলাদেশিদের সমস্যা হবে।
পাওয়া তথ্য মতে, এসওপির অংশ হিসেবে এরই মধ্যে জার্মানি, নরওয়ে, গ্রিস থেকে বেশকিছু অবৈধ বাংলাদেশিকে ফেরত আনা হয়েছে। তবে সমস্যা তৈরি করছে পাশের দেশ যেমন— ভারত, পাকিস্তান ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা। তাদের অনেকেই এখন নিজের পাসপোর্ট ফেলে দিয়ে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিচ্ছেন।
তাই ইউরোপে অবস্থিত অবৈধ বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) একটি ইন্টারফেস তৈরি করা হয়েছে। এর সহায়তায় অবৈধদের তথ্য এনআইডি, ডিআইপি ও বিএমইটি, এপিআইয়ের (ডেটা ভার্সন) সংরক্ষিত ডেটার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। সেখানে ফিঙ্গার প্রিন্ট মিলিয়ে দেখে নাগরিকত্ব নির্ধারণের সুযোগ রয়েছে, যা এপিআই ও এসবির ইন্টারফেসের সঙ্গে সিক্রোনাইজ করে প্রস্তুত করা। এক্ষেত্রে অবৈধ বাংলাদেশির ফিঙ্গার প্রিন্ট ডব্লিউএসকিউ ফরমেটে এসবি কর্তৃক ইইউ’র কাছ থেকে সংগ্রহ করে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হবে। কমিশন আঙুলের ছাপ যাচাই করে এসবির কাছে ফিরতি তথ্য পাঠাবে।
তবে জার্মানিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলছেন, বাংলাদেশ সরকারের নানা সংস্থার নিশ্চয়তা আর ক্লিয়ারেন্সের পর আমরা বাংলাদেশি পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তাদের দেশে ফেরত পাঠাচ্ছি।
‘চলতি মাসে একটি ফ্লাইটে ৫৫ অবৈধ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। অনেকে আবার নিজ উদ্যোগে দেশে ফেরত গেছেন। অন্যদের সব প্রক্রিয়া শেষ করে পর্যায়ক্রমে পাঠানো হবে’— যোগ করেন রাষ্ট্রদূত।
ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৮-১৫ সময়কালে মোট ৯৩ হাজার ৪৩৫ বাংলাদেশি অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশ করে। ২০১৬ সালে অনুপ্রবেশ করে আরও ১০ হাজার ৩৭৫ বাংলাদেশি। ২০১৭-২০২০ সালে আরও কিছু বাংলাদেশির অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে।
২০১৪ সাল থেকে অভিবাসীদের নিয়ে কড়াকড়ি আরোপ করে ইইউ। দীর্ঘ সময় ধরে অনুপ্রবেশ করা এসব অবৈধ অভিবাসী মানবপাচারের শিকার। এদের বেশির ভাগই সমুদ্রপথে ইতালি হয়ে ইউরোপে প্রবেশ করে। মানবপাচার ঠেকাতে পথটি বন্ধ করেছে ইইউ। এ পথে আসা বেশির ভাগই মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের নাগরিক।
Discussion about this post