অনলাইন ডেস্ক
নানা অনিয়মের কারণে সম্প্রতি আলোচনায় আসা ই-কমার্স ব্যবসায় শৃঙ্খলা আনতে চায় সরকার। এরই অংশ হিসেবে ২৫ অক্টোবর, সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ই-কমার্স নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের জরুরী বৈঠক হেয়েছে। ডিজিটাল কামার্সের আন্ত:মন্ত্রণালয় বৈঠকে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের জন্য ইউনিক বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন বা ইবিআইডি নম্বর বাস্তবায়ন করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আগামী তিন মাসের মধ্যে আইসিটি বিভাগের সহযোগিতায় এই পদ্ধতি চালু করা হবে।
এছাড়াও সেন্ট্রাল কমপ্লেন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ইমপ্লিমেন্ট করবে ভোক্তা অধিকার কমিশন। সেন্ট্রাল ট্রাকিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ইমপ্লিমেন্ট করবে ডাক বিভাগ। এছাড়া এসস্ক্রো সিস্টেম আধুনিকায়ন এবং পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা টাকা দ্রুত ভোক্তাকে ফেরতের ব্যবস্থা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের আলোচ্য বিষয়ে অবহিত করেছেন সভার সভাপতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী। এসময় সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাবও দিয়েছেন তিনি।
বন্ধ হয়ে যাবে নিবন্ধনহীন ই-কমার্স
নিবন্ধন না করলে ব্যবসা থেকে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হবে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘‘ ই কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইসিটি বিভাগ থেকে ইউনিক বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর দেওয়া হবে। যারা নিবন্ধন করবে না, তারা ব্যবসা থেকে ‘আউট’ হয়ে যাবে। এ নিবন্ধন করতে কোনও খরচ লাগবে না।’’
এসময় তিনি আরো বলেন, ‘আইনগতভাবে চেক করার জন্য সেন্ট্রাল লজিস্টিক ট্র্যাকিং প্ল্যাটফর্মের (সিএলটিপি) ব্যবস্থা করতে হবে। সেন্ট্রাল ম্যানেজমেন্ট কপ্লেইন সিস্টেম, কোথাও কারও অভিযোগ থাকলে, এখানে আসবে। আইসিটি বিভাগ আগামী তিন মাসের মধ্যে এসব করে দেবে। আগামী দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে তারা ফলোআপ দেবে।’
ই-কমার্সে আটকা ২১৪ কোটি টাকা তিন মাসের মধ্যে ফেরত
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নে জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী জানিয়েছেন, ক্রেতাদের ই-কমার্স পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে পড়া ২১৪ কোটি টাকা আগামী তিন মাসে ফেরত দেওয়া হবে। টাকা ফেরত দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আজকের বৈঠকে নিবন্ধনের জন্য ইউনিক আইডি, সেন্ট্রাল লগ ইন ট্রাকিং সিস্টেম ও কমপ্লেন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু এবং ১ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত আটকে পড়া টাকা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে এই কাজ সম্পন্ন করা হবে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ক সফটওয়্যার তৈরির বিষয়ে আইসিটি বিভাগ তথ্য জানাবে।
প্রয়োজন নেই নতুন আইন ও কর্তৃপক্ষ
বৈঠকে প্রযুক্তি সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রচলিত আইনেই ডিজিটাল কমার্স পরিচালনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাই আহমেদ পলক। তিনি বলেছেন, ই-কমার্স খাতের জন্য নতুন আইন, কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন নেই। প্রচলিত আইনের মাধ্যমে এ খাত পরিচালনা করা যাবে। প্লাটফর্ম গুলোর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে আইসিটি ডিভিশন এর মাধ্যমে টেকনোলজি প্লাটফর্ম গুলোর ডেভলপমেন্টের সিদ্ধান্ত দেন তিনি।
ই-ক্যাবের প্রস্তাব
বৈঠকে ইক্যাব থেকে এস্ক্রো সিস্টেম আধুনিকায়ন, সেন্ট্রাল কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, সেন্ট্রাল ট্রাকিং সিস্টেম, ইউনিক বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সহ বিভিন্ন টেকনোলজি টুলস ব্যবহার করে ডিজিটাল কমার্স খাতের শৃঙ্খলা বজায় রাখা, নতুন আইন না করে বর্তমান আইনের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা, পেমেন্ট গেটওয় তে আটকে থাকা টাকা গ্রাহককে দ্রুত ফেরত দেওয়া সহ বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন ইক্যাব সভাপতি শমী কায়সার এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল।
নীতি নির্ধারণী এই জরুরী বৈঠক পরিচালনা করেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ। বিদ্যমান পরিস্থিতির প্রাযুক্তিক উন্নয়নের ওপর আইসিটি বিভাগের পক্ষ থেকে একটি প্রেজেন্টশন দেন একশপ টিম লিড মোঃ রেজওয়ানুল হক জামী । এছাড়াও প্রথমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রেজেন্টেশন দেন অতিরিক্ত সচিব শফিকুজ্জামান ।
Discussion about this post