শিক্ষার আলো ডেস্ক
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) স্নাতক প্রথমবর্ষ ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি (অন্যের হয়ে পরীক্ষা) দিতে গিয়ে আটক হয়েছেন রংপুরের কারমাইকেল কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মাসুদ সরকার (২৫)। তিনি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের দহবন্ধ ইউনিয়নের আব্দুল কাদেরের ছেলে।
রোববার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ডি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার দ্বিতীয় দিন সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ৪১৫ নম্বর কক্ষ (লাইব্রেরি ভবন) থেকে তাকে আটক করা হয়। পরীক্ষার হলে ভর্তি পরীক্ষার্থীর ছবির সঙ্গে মাসুদ সরকারের ছবির মিল না পাওয়ায় হলের দায়িত্বেরত শিক্ষকরা প্রক্টরিয়াল বডিকে খবর দেন।
পরে প্রক্টরিয়াল বডি মাসুদ সরকারকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় তিনি প্রক্সির বিষয়টি স্বীকার করেন। এদিন রাতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিমাদ্রী খীসার ভ্রাম্যমাণ আদালতে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিলেও জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা।
এ সময় মাসুদের মোবাইল, ফেসবুক ও ম্যাসেঞ্জারের তথ্য যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ করে চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় প্রক্টরিয়াল বডি। সেখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ ও টাকার লেনদের বিষয়টি উঠে আসে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি সূত্রে জানা যায়, মাসুদ গত শুক্রবার ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। চবিতে ১০ হাজার টাকার চুক্তিতে ভর্তি পরীক্ষায় জুলকার নাইন শাহীর বদলি হিসেবে অংশ নিয়েছেন। এক্ষেত্রে জালিয়াত চক্রের মূল হোতা হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের ওমর ফারুকের নাম উল্লেখ করেন। এ ছাড়া বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাসেল সরকার ও তার স্ত্রী সুলতানা রাজিয়াও এ চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে মাসুদ জানান।
মাসুদ সরকার জানান, টাকার বিনিময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষায় অন্যের হয়ে অংশ নিয়েছেন তিনি। এক্ষেত্রে মাসুদকে সহযোগিতা করতো জালিয়াত চক্রের একটি বড় সিন্ডিকেট। তারা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী খুঁজে বের করে বিভিন্ন ধাপে কাজ করত। এমনকি পরীক্ষায় চান্স নিশ্চিত করার কথা বলে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা গ্রহণ করত।
মাসুদ সরকারের দেওয়া তথ্য মতে, প্রথমে তারা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী খুঁজে বের করত। এরপর ওমর ফারুক তাদের সঙ্গে টাকার চুক্তি করত। পরে, ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীর ছবির সঙ্গে মিলে এমন একজন জালিয়াত চক্রের সদস্যকে বেছে নিত।
জিজ্ঞেসাবাদে মাসুদ জানিয়েছেন, তিনি এ বছরের গুচ্ছ পরীক্ষার ‘বি’ ইউনিটে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ইউনিটে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে অন্যের বদলে পরীক্ষা দিয়েছেন। প্রত্যেকটি থেকে অগ্রিম নিয়েছেন তিন হাজার টাকা করে। সেগুলোতে সফলভাবে উতরেও গেছেন। সেই সাহসে এবার বসেছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায়। কিন্তু সেখানেই আটকে যান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়। তবে আমরা সন্দেহবশত অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করতে আটকে রাখি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাসুদ স্বীকার করেছে সে জালিয়াতি চক্রের সদস্য। কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জালিয়াতি করে পার পায়নি।‘
চবির সহকারী প্রক্টর জিয়াউল ইসলাম বলেন, ‘তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যগুলো আমরা পর্যালোচনা করে দেখছি। আমরা ডকুমেন্টসগুলো সংগ্রহ করছি। সব ডকুমেন্টস পেলে তাকে পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হবে।’
Discussion about this post