কর্নেল আবু নাসের মো: তোহা বিএসপি,এসজিপি,এএফডব্লিউসি,পিএসসি (অবঃ)
যে মানুষ কখনই কারো কোনো ক্ষতি করে না ও সকলের প্রতি সহমর্মিতার মানসিকতা পোষণ করে এবং তার উপর অর্পিত যে কোন পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করে তাকেই ভালো মানুষ হিসাবে গণ্য করা হয়। প্রতিটি শিশুকে একজন ভালো মানুষ হিসাবে গড়ে তোলাই আমাদের সকলের মূল দায়িত্ব বা কর্তব্য হওয়া উচিত, এই ভাল মানুষ গড়ার মাধ্যমেই আমরা গড়ে তুলতে পারবো একটি সুখী পরিবার, পরিচ্ছন্ন সমাজ, আদর্শ রাষ্ট্র এবং শান্তিময় পৃথিবী। শিশুদের ভালো মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার ব্যাপারে পিতা-মাতা, পরিবার, সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্রের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর মধ্যে পিতা-মাতার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা আল কোরানের সুরা আত- তাহরিম এর ৬নং আয়াতে নির্দেশ দিয়েছেন যে, ‘‘তুমি নিজেকে এবং তোমার পরিবার পরিজনকে দোজখের আগুন থেকে রক্ষা করো”। আমি আমার জীবনে আমার পিতা- মাতার অবদান, পিতা হিসাবে সন্তানের প্রতি আমার ভূমিকা এবং চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ ও লিডার্স স্কুল এন্ড কলেজ চট্টগ্রাম এর অধ্যক্ষ হিসাবে আমার অভিজ্ঞতার আলোকে ভালো মানুষ গড়ার প্রত্যয়ে পিতা-মাতার ভূমিকা নিয়ে আমার সুচিন্তিত কিছু মতামত উপস্থাপন করছি।
পিতা-মাতা তার সন্তানকে মানসম্মত সময় দিয়ে; সন্তানের সামনে নিজেকে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসাবে উপস্থাপন করে; সন্তানকে অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে রেখে; সন্তানকে নৈতিক, মানবিক ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করে এবং নিজের কাজ নিজে করতে দিয়ে এবং তার বয়স অনুযায়ি কিছু দায়িত্ব প্রদান করে ভালো মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার ব্যাপারে ভূমিকা রাখতে পারেন।
‘মানসম্পন্ন সময়’ বলতে শিশু বা সন্তান এর প্রতি পিতা-মাতার পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে যে সময় ব্যয় করা হয় তাকে বুঝায়। একজন মা তার সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত অথবা টেলিভিশন এ সিরিয়াল দেখা নিয়ে ব্যস্ত – এটা কোন ভাবে সন্তানকে মান সম্পন্ন সময় বা Quality time প্রদান করা নয়। অথবা সন্তানের পাশে শুয়ে শুয়ে পত্রিকা পড়লে অথবা টেলিভিশনে সংবাদ দেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও তাকে সন্তানকে মানসম্মত সময় প্রদান করা বলে না। সন্তানকে মানসম্মত সময় প্রদান করতে হলে, সন্তানের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে, তার সাথে কথা বলতে হবে, তার সাথে কোন না কোন কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকতে হবে। সদ্যজাত শিশুদের ক্ষেত্রে, পিতা-মাতা তাকে কোলে নিয়ে তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকবে, হাসবে এবং বিভিন্ন ধরনের শব্দ করবে বা ছড়া বলবে। পিতা-মাতার এই মান সম্মত সময় প্রদানের কারণে ঐ শিশুটি বুদ্ধিমান হবে, দ্রুত কথা বলতে শিখবে এবং চটপটে হবে। একই ভাবে, যখন শিশুরা আরও একটু বড় হবে তখন পিতা-মাতা তাদের সাথে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা করবে। যেমন- ঘোড়া হওয়া, বল খেলা, ক্রিকেট খেলা, পুতুল খেলা এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যাওয়া। এই খেলতে খেলতে অথবা ঘুরতে ঘুরতে পিতা-মাতা শিশুদের বিভিন্ন জিনিস চিনতে সাহায্য করবে, বিভিন্ন নাম শিখাবে, ছড়া শিখাবে কারণ এই সময় শিশু সবচেয়ে বেশি অনুকরণ প্রিয় হয়। তারা যখন কিশোর কিশোরী হবে তখন পিতা-মাতা তাদের মুখে মুখে নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী দোয়া/মন্ত্র মুখস্থ করাবে, ধর্মীয় কর্মকান্ড সম্পর্কে বুঝাবে, আচার ব্যবহার শিখাবে, পত্রিকা পড়াবে, সময়সাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে। যখন আরও বড় হবে তখন পারিবারিক বিষয় গুলো সন্তানদের সাথে আলোচনা করবে, সন্তানদের মূল্যবোধ সম্পর্কে বুঝাবে এবং জ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় পিতা-মাতা অবশ্যই সন্তানের পাশে বসে পড়াশুনার খোঁজ খবর নিবেন, পড়া তৈরিতে সাহায্য করবেন। পিতা-মাতা অবশ্যই চেষ্টা করবেন অন্তত দুই বেলা একত্রে সন্তানদের সাথে খাওয়া দাওয়া করার এবং খাবার টেবিলে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করার। সারাদিন কমপক্ষে একবার পুরো পরিবার একত্রে বসে বিভিন্ন বিষয়ে গল্প করবে, টেলিভিশন দেখবে অথবা ঘরোয়া খেলাধুলা করবে। মাঝে মধ্যে পুরো পরিবার একত্রে সিনেমা/ নাটক/ অনুষ্ঠান দেখবে, বেড়াতে যাবে, বাইরে খেতে যাবে। এভাবে মানসম্মত সময় প্রদানের মাধ্যমে পিতা-মাতা সন্তানদের সাথে একটি ভীতিহীন ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তুলবে, এই ভালোবাসা সন্তানদের পিতা-মাতার প্রতি দায়বদ্ধ করে তুলবে, যা তাদেরকে পিতা-মাতাকে কষ্ট দেওয়া, বিব্রত করা বা অপমান করা থেকে বিরত রাখবে। ফলে,তারা সকল ধরণের খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকবে। একই সাথে পিতা-মাতা প্রদত্ত এই মানসম্মত সময় সন্তানদের অনেক পরিপক্ক, বুদ্ধিমান,অভিজ্ঞ ও জ্ঞানী করে তুলবে, যা তাদেরকে অনেক ভুল থেকে রক্ষা করবে,খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে এবং ভালো মানুষ হিসাবে গড়ে উঠতে বিশেষ সহায়তা করবে। এ জন্যই কানাডিয়ান আধ্যাত্মিক লেখক Anthony Douglas Williams বলেন, “Spending time with children is more important than spending money on children.”
সন্তান পিতা-মাতাকে সব সময় পর্যবেক্ষণ করে, এবং সেই অনুসারে অনুসরণ ও অনুকরণ করে। কেননা, পিতা-মাতা সন্তানের প্রথম শিক্ষাগুরু এবং আদর্শ স্থানীয়। সন্তান পিতা-মাতার সব দেখে, সব বুঝে কিন্তু মুখে বলে না বা প্রকাশ করে না এবং সে যা দেখে তা অনুসরণ ও অনুকরণ করে। কেননা, তারা মনে করে পিতা-মাতা যা করে তা-ই সঠিক এবং তার মধ্যে কোন ভুল ভ্রান্তি নাই। যদি কোন সন্তান দেখে তার পিতা বাসায় বসে মোবাইলে বলছে আমি এখন পথে অথবা তার মাতা, তার পিতার রাগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মিথ্যা কথা বলেছে-তবে সন্তান মনে করবে প্রয়োজনে মিথ্যা কথা বলা বা চালাকি করার মধ্যে কোন অন্যায় নেই অথবা মিথ্যা বলে বা চালাকি করে সব ঠিকঠাক রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। সন্তান যদি বুঝে; পিতা ঘুষ খায়, অবৈধ ভাবে অর্থ উপার্জন করে, কাজে ফাঁকি দেয়, দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে অথবা মাতা ঠিকমত সংসার দেখাশুনা করে না, শালীন পোশাক পড়ে না, শ্বশুর-শাশুড়ির সাথে খারাপ আচরণ করে, কাজের লোকের সাথে দুর্ব্যবহার করে, তবে সন্তান এই সব কার্যক্রমকে সঠিক বলে মনে করবে এবং তার জীবনে এই কাজগুলো করবে। ফলে সে একজন অসৎ, খারাপ মানুষে পরিণত হবে। অপর দিকে পিতা-মাতা যদি সন্তানদের সামনে সকল খারাপ কাজ পরিহার করে, সকলের সাথে ভালো আচরণ করে, নিজ পিতা-মাতার প্রতি সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করে, সৎ জীবন যাপন করে, ধর্মীয় বিধি বিধান মেলে চলে, তবে নিশ্চিতভাবে সন্তান তার পিতা-মাতাকে অনুসরণ করবে এবং ভালো মানুষে পরিনত হবে। এ প্রসঙ্গে আমেরিকান শিশু অনুষ্ঠান টিভি প্রযোজক ইড়ন কববংযধহ বলেন “Parents are the ultimate role models for children. Every word, movement and action has an effect. No other person or outside force has a greater influence on a child than the parents.”
সন্তানকে সুস্থ মনমানসিকতার এবং ধনাত্মক চিন্তার মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে হলে তার জন্য তাকে অবশ্যই অত্যন্ত আনন্দময়,ভয়শূন্য ও নিজেকে প্রকাশ করার বা মত প্রকাশ করার মত স্বাধীনতাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। শিশু, বালক-বালিকা, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীরা যে কাজই করুক না কেন, তা যেন হয় আনন্দময় পরিবেশে। এ প্রসঙ্গে তিউনিসিয়ায় জন্ম নেওয়া রোমান নাট্যকার টেরেন্স বলেন,“তোমার সন্তানদের ভীতির চেয়ে শ্রদ্ধা ও নম্রতার বাঁধনে বাধা অনেক শ্রেয়।” একটি শিশু যখন পড়তে চাইছে না, এর মানে সে পড়ার মাঝে আনন্দ খুঁজে পাচ্ছে না। তখন তার উপর রাগ বা জোর না করে তাকে ছেড়ে দেওয়া ও আনন্দ করতে দেওয়া উচিত, এবং যেভাবে পড়লে আনন্দ পাবে সেভাবে পড়ানো উচিত। যেমন খেলতে খেলতে অথবা খেলার ফাঁকে ফাঁকে পড়ানো অথবা এই পড়াটা করলে তার কি লাভ হবে, তা বুঝিয়ে পড়ানো উচিত। সন্তানদের ভয় শূন্য পরিবেশে বড় হতে দেওয়া উচিত। তাদের মধ্যে যেন এই ভয় কাজ না করে যে, আমি এটা করলে বা না করলে বাবা বা মা রাগ করবে, বরং তারা যেন এটা অনুভব করে যে এটা করলে বা না করলে বাবা বা মা কষ্ট পাবে। বাবা-মা এর প্রতি ভালবাসা থেকে যেন সে সিদ্ধান্ত নেয় একাজ করা ঠিক হবে, কি হবে না। তার পিতা-মাতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা, বিবেক, সততাবোধ, দায়িত্ববোধ, মানবিকতা, অন্যের প্রতি সহমর্মিতা ইত্যাদি যেন তাকে সাহায্য করে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে যা কোন ভাবেই ভয়ে নয়। এটা তাকে স্বাধীনভাবে সৃজনশীল চিন্তা করতে শিখাবে, বিবেক, বুদ্ধি, মূল্যবোধ, মানবতাবোধ সম্পন্ন সর্বোপরি একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। তাই হযরত মোহাম্মদ (সঃ) বলেন, ‘সন্তানদের শিক্ষা দাও, কিন্তু কঠোরতা কর না।’
সন্তানকে নৈতিক, মানবিক ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা পিতা-মাতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এ প্রসংগে হযরত মোহম্মদ (সঃ) বলেন, “ শুদ্বাচার শিক্ষাদান সন্তানের প্রতি পিতা মাতার সর্বোত্তম উপহার (তিরমিজী)”। সন্তানকে ছোট বেলা হতেই নীতি, নৈতিকতা, মূল্যবোধ, ধর্মীয় আচার সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে। ছোট বেলায় তাকে সকলকে সালাম দিতে, সকলের সাথে হাসি মুখে কথা বলতে, সকলকে সাহায্য করতে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে, নিয়ম কানুন মেনে চলতে, সকলের প্রতি সহমর্মী হতে এবং ধর্মীয় কর্মকাণ্ড পালন সম্পর্কে বলতে হবে, দেখিয়ে দিতে হবে, করে দেখাতে হবে এবং পালন করতে সহযোগিতা করতে হবে। পিতা মাতাকে অবশ্যই সন্তানদের বয়স অনুযায়ী বিষয়গুলো সম্পর্কে বলতে হবে, এর গুরুত্ব বুঝাতে হবে, পালন করার ব্যাপারে উৎসাহিত করতে হবে এবং প্রয়োজনে প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে তা পালন করাতে হবে। তবে পিতা মাতা যদি তাদের দায়িত্ববোধ ও ভাল কর্মকাণ্ড দ্বারা সন্তানের মনে পিতা-মাতার প্রতি ভালবাসা ও শ্রদ্ধাবোধের সৃষ্টি করতে পারে, তবে সন্তান পিতা মাতাকে খুশি করার জন্য সে নিজ দায়িত্বেই ভালোকে গ্রহণ এবং খারাপকে পরিত্যাগ করা শিখবে। পিতা-মাতার সার্বক্ষণিক সহচার্য, নিজেকে আদর্শ হিসাবে উপস্থাপন এবং দায়িত্বশীল ভালোবাসা দ্বারা সন্তানকে নৈতিক, মানবিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ সম্পন্ন ভাল মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে পারবে।
সন্তানকে ধীরে ধীরে বাস্তবতার মুখোমুখি করতে হবে, সকলের সাথে মিশতে দিতে হবে, তার নিজের কাজ নিজেকে করতে দিতে হবে। এভাবে আপনার সন্তান ধীরস্থির, শক্ত-সামর্থ্য ও সাহসী হয়ে গড়ে উঠবে, সফল হওয়ার সকল যোগ্যতা ও সামর্থ অর্জন করবে। এ প্রসঙ্গে ইংলিশ লেখক ই, এম, ফরস্টার বলেন, ‘চামচে তুলে খাইয়ে দিলে, চামচের আকার-আকৃতি ছাড়া আর কিছুই শেখা হয় না’।
স্মরণ রাখবেন, আপনার আজকের এই ছোট্ট তুলতুলে শিশু একদিন পৃথিবী নামক বাস্তব কঠিন পরিবেশে পা বাড়াবে এবং কঠিন বাস্তবতার সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকবে এবং সামনে এগিয়ে যাবে। তাই সন্তানকে সাহায্য করুন, কিন্তু তার হয়ে কাজ গুলো করে দেবেন না। সন্তানকে পরামর্শ দিন, কিন্তু নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা তাকে দিন, ভাল ও মন্দ মানুষ সম্পর্কে ধারণা দিন, কিন্তু সকলের সাথে মিশে তাকে তা যাচাই করার সুযোগ দিন। তাকে দরিদ্র, অসহায়, পঙ্গু, সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের দেখে তাদের প্রতি সমব্যথী হতে দিন এবং তাদের সহযোগিতা করার সুযোগ দিয়ে তাদের দান ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে অভ্যস্থ করে তুলুন। তাদের পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধু, সহকর্মীদের প্রতি দায়িত্ব সম্পর্কে অবগত হওয়ার সুযোগ দিন এবং দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে তাকে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ববান হয়ে উঠতে দিন। এ প্রসংগে কনফুসিয়াস বলেন, I hear and I forget. I see and I remember. I do and I understand অর্থাৎ সন্তানকে সকল ভাল কর্মকাণ্ড নিজে করার সুযোগ দিন এবং এর মাধ্যমে ভাল কর্মকাণ্ডে অভ্যস্থ হয়ে উঠতে সহযোগিতা করুন।
সকল পিতা-মাতার পবিত্র দায়িত্ব তার সন্তানকে ভালো মানুষ হিসাবে গড়ে তোলা। যদি আমরা আমাদের সন্তানকে ভালো মানুষ বানাতে ব্যর্থ হই, তবে তার অমানুষত্বের প্রথম শিকার হবো আমরা, অর্থাৎ তার পিতা-মাতা এবং তার নিজ পরিবার। হয়তো সন্তান অনেক বড় চাকুরি করছে অথবা অনেক টাকার মালিক হয়েছে, কিন্তু অমানুষ হলে সে তার পিতা- মাতা, পরিবার, সমাজ বা দেশের কোন কাজে লাগবে না। সে শুধু নিজের স্বার্থ হাসিল করবে এবং তার পিতা-মাতা এবং আপনজনদের কষ্টের, অপমানের বা কান্নার কারণ হবে। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত সন্তানকে মানসম্মত সময় দিয়ে, সন্তানের সামনে নিজেকে আদর্শ অনুকরণীয় মানুষ হিসাবে উপস্থাপন করে; সন্তানকে আনন্দময় পরিবেশে বেড়ে উঠার সুযোগ দিয়ে; নৈতিক, মানবিক ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করে এবং তার নিজের কাজ নিজে করতে দিয়ে ও তার বয়স অনুযায়ী কিছু দায়িত্ব প্রদান করে তাকে ভালো মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার সর্বাত্বক প্রচেষ্টা করা। তবে আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে পবিত্র কোরানের সূরা তওবা এর ৫১নং আয়াত অনুসারে, “আল্লাহ যা নির্ধারিত করেছেন, এর বাইরে কিছুই আমাদের জীবনে ঘটবে না।” তাই সন্তানকে ভালো মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমরা অনুসরণ করতে পারি লেবানিজ আমেরিকান কবি কাহ্লিল জিব্রান এর কথা, “You are the bows from which your children as living arrows are sent forth. The Archer sees the mark upon the path of the infinite, and he bends you with his might that His arrows may go swift and far. For even as He loves the arrow that flies, so He loves also the bow that is stable. Let your bending in the Archer’s hand be for gladness.
লেখক : চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ এর সাবেক অধ্যক্ষ,
বর্তমানে লিডার্স স্কুল এন্ড কলেজ চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত আছেন ।
Discussion about this post