শিক্ষার আলো ডেস্ক
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক ও মানসিক শাস্তিসহ যে কোনো ধরনের নির্যাতন বন্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে তদারকি ও মনিটরিংয়ের নির্দেশনা বাস্তবায়নে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আইনজীবী এএম জামিউল হক ফয়সাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, সারাদেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন বন্ধে হাইকোর্টের আদেশ দ্রুত বাস্তবায়নে ব্যবস্থা নিতে পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করাতে দেশের সকল মিডিয়ায় প্রচারণা চালানোর জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পরামর্শ দিয়েছেন আদালত।
২০১১ সালের রায়ে দেওয়া আদেশ বাস্তবায়নে হাইকোর্টের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ সরকারের মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের এমন পরামর্শ দেন।
২০১৮ সালে কুমিল্লার বিপুলসার হাফিজিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থী নোমান হোসেনকে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক এমদাদ হোসেন শারীরিক নির্যাতন করেন। সে ঘটনায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনেন ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিম। এরপর আদালত দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের দ্বারা শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। সেই রুল যথাযথ ঘোষণা করে আজ আদালত তার পর্যবেক্ষণে এমন পরামর্শ দেন। কুমিল্লার এ ঘটনায় আদালতে পক্ষভুক্ত হয় বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)।
আজ আদালতে ব্লাস্টের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার শারমিন আক্তার। তার সঙ্গে ছিলেন এএম জামিউল হক ফয়সাল। এর আগে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিম।
আদালতের পর্যবেক্ষণের বিষয়ে ব্লাস্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শারমিন আক্তার বলেন, এ রুলের শুনানি শেষে আদালত কিছু মতামত দিয়েছেন। সেটি হচ্ছে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের শারীরিক নির্যাতন বন্ধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদেরে দেশে আইন থাকার পরও দেখা যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন করা হচ্ছে। এগুলো বন্ধ করতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, উপজেলা মনিটরিং কমিটি (যদি থাকে), আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, এসব নির্যাতনের অভিযোগ যেন দ্রুত নিষ্পত্তি করা হয়। নির্যাতনকারীদের যেন কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হয়। শাস্তি নিশ্চিত করা হলে সেগুলো মিডিয়ায় প্রচারের জন্যও পরামর্শ দেন আদালত। এতে করে যেন সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তির হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ২০১০ সালে একটি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তির নামে নির্যাতনকে সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করে। শিক্ষার্থীদের ওপর শারীরিক নির্যাতন বন্ধে আইন পাসের পরও পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।
আইনজীবীরা বলেন, সরকার আইন পাস করলেও শিক্ষকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ না নেওয়ায় আইনের ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের ঘটনা একটি স্পর্শকাতর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক সময় এ নির্যাতন শারীরিক ও মানসিক পর্যায়ে হয়ে থাকে, যা মানবাধিকারেরও লঙ্ঘন।
‘এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি থেকে সুরক্ষার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট সরকারি নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়ন। আমরা চাই, সারাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী নির্যাতন বন্ধ হোক, সে ক্ষেত্রে শিক্ষকদের মানসিকতার পরিবর্তন সবার আগে জরুরি। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক শাস্তির বিরুদ্ধে সরকারের জারি করা পরিপত্রের বাস্তবায়ন যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং আইন লঙ্ঘনকারী সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বিচারের আওতায়ও আনতে হবে।’
Discussion about this post