অনলাইন ডেস্ক
যে প্রত্যাশা নিয়ে গিয়েছিল তা কতটা অগ্রগতি হলো এ বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ। সম্মেলনে জানানো হয়, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় ১০০ বিলিয়ন আদায়ে বাংলাদেশকে কোনো রোডম্যাপ দেয়নি উন্নত দেশগুলো। ফলে কপ-২৬ সন্মেলনে কিছু প্রস্তাব বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছে বাংলাদেশ।
সোমবার (৮ নভেম্বর) স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোর স্কটিশ ইভেন্ট সেন্টারের বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরে বাংলাদেশ।
জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সহায়তা দিতে নতুন কোনো রোডম্যাপ দেয়নি উন্নত দেশগুলো। কার্বণ নিঃসরণে তাপমাত্রা কীভাবে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখা যাবে তা নিয়েও কোনো সুরহা হয়নি। তবে জলবায়ুর ক্ষতি কমাতে বাংলাদেশ তাদের দাবি বাস্তবায়নে প্রস্তাব তুলে ধরেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দাবি আদায়ে রাজনৈতিকভাবে দেশগুলোকে আরও চাপ প্রয়োগ করতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলো কী ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছে তা মোকাবিলায় টানা আট দিন চলেছে দেনদরবার। তারপরও জলবায়ু মোকাবিলায় স্পষ্ট কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি উন্নত দেশগুলো।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, তাপমাত্রা ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ায় ক্ষতি বেড়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াল পর্যন্ত রাখার বিষয়ে আর আলোচনার সুযোগ নেই। ২০২৫ সালের পর ১০০ বিলিয়নের সহায়তা বহু বাড়াতে হবে।’
পরিবেশবিদরা বলছেন, ২৬তম জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আসবে, যাতে বাংলাদেশসহ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো লাভবান হবে। জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ডা. আতিক রহমান বলেন, জলবায়ু মোকাবিলার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়টি আরও বাড়াতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনে দায়ী উন্নত দেশ, অথচ ক্ষতির সম্মুখীন বাংলাদেশসহ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কপ-২৬ সম্মেলনে জলবায়ুর ক্ষতি পূরণসহ বাস্তবসম্মত কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেছে বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ দায়ী না হলেও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মূলত বায়ুমণ্ডলে তাপ কমানোর জন্য বাংলাদেশ এসব পদক্ষেপ নিয়েছে, যা কপ-২৬ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগে ১২ বিলিয়ন ডলারের ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বাতিল করেছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি জলবায়ুর ক্ষতি মোকাবিলায় বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণে উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে বাংলাদেশের দায় দশমিক ৪৭ শতাংশের চেয়েও কম। অথচ বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি। কার্বন নিঃসরণকারীদের অবশ্যই জাতীয়ভাবে নির্ধারিত মাত্রা (এনডিসি) দাখিল করতে হবে এবং সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। উন্নত দেশগুলোকে অভিযোজন ও প্রশমনে অর্ধেক অর্ধেক (৫০: ৫০) ভিত্তিতে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে।সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদীভাঙন, বন্যা ও খরার মতো দুর্যোগের কারণে বাস্তুচ্যুত জলবায়ু অভিবাসীদের দায়িত্ব নেওয়াসহ জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে ক্ষতি ও ধ্বংস মোকাবিলা করতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ২০০৯ সালে ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। গত সাত বছরে বাংলাদেশে জলবায়ু সংক্রান্ত ব্যয় দ্বিগুণ হয়েছে। বর্তমানে জাতীয় অ্যাডাপটেশন প্ল্যান তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার একটি উচ্চাভিলাষী এবং আপডেটেড এনডিসি পেশ করেছে। জলবায়ু বিপদগ্রস্ত দেশ থেকে জলবায়ুসহিষ্ণু এবং সেখান থেকে জলবায়ু সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে বাংলাদেশ ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান’ বাস্তবায়ন করছে।
২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ৪০ শতাংশ জ্বালানি নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আসবে। বিশ্বের সবচেয়ে অন্যতম বড় ডমেস্টিক সোলার এনার্জি কর্মসূচিগুলোর একটি বাংলাদেশে রয়েছে।
‘শেখ হাসিনা সোলার পার্ক, জামালপুরের মাদারগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ’ প্রকল্পের অধীনে ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে এক হাজার ১১২ কোটি টাকা ঋণ দেবে ভারত। তবে প্রকল্পের মোট ব্যয় ১ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সরকার দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের পরিকল্পনা করেছে। এ লক্ষ্যে জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার জোড়খালী ইউনিয়নের কাইজরচর মৌজায় ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। জলবায়ু মোকাবিলায় কয়লা ছেড়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এসব কর্মসূচির ভূয়সী প্রশংসা করে কপ-২৬ সম্মেলন।সৌজন্যে-জাগো নিউজ
Discussion about this post