দেশের ভেতর বিদেশি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি সেন্টার খোলার অনুমোদন দেওয়া হলে তাতে সার্টিফিকেট বাণিজ্য বাড়বে—এমন চিন্তা থেকে খোদ শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে ২০১৬ সালে দেশে শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত করা হয় অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ কলেজের একটি স্টাডি সেন্টারের। কিন্তু কৌশলে নানা বিধিনিষেধ পাশ কাটিয়ে, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদনের তোয়াক্কা না করেই শিক্ষা কার্যক্রম চালু করে দিয়েছে স্টাডি সেন্টারটি। এরইমধ্যে ভর্তি করিয়েছে ৪২ শিক্ষার্থীকেও!
মূলত ২০১৫ সালের ইউজিসির একটি পরিদর্শন প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে সাময়িক অনুমোদন পেয়ে বাদবাকি নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না মোনাশ কলেজ স্টাডি সেন্টার।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণয়নের পর বিদেশি কোনও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দেশে শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার খোলার অনুমোদন দেওয়া হয়নি। ২০১৪ সালের ৩১ মে দেশে স্টাডি সেন্টার স্থাপনের অনুমোদন দেওয়ার জন্য একটি বিধিমালাও জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সেই বিধিমালা অনুযায়ী অনুমোদনের শর্তে বলা হয়—‘বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কিত কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত একটি পরিকল্পনা থাকতে হবে প্রতিষ্ঠানটির।’
কিন্তু মোনাশ কলেজের স্টাডি সেন্টারের এমন কোনও পরিকল্পনার অনুমোদন নেই ইউজিসির।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৫ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ কলেজ স্টাডি সেন্টার স্থাপনের আবেদন যাচাই-বাছাই করে একটি প্রতিবেদন ওই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি ইউজিসি থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২৭ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার খোলার বিষয়টি স্থগিত রাখা সমীচীন হবে বলে জানিয়ে দেয় ইউজিসিকে।
স্টাডি সেন্টারটির বিষয়ে জানতে চাইলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান ভূঁইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০১৫ সালে ইউজিসি মোনাশ পরিদর্শন করে। পরিদর্শনের পর রিপোর্ট পজেটিভ ছিল। তবে শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে ২০১৬ সালে এর শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছিল।’
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি একাধিকবার স্টাডি সেন্টার চালুর বিরোধিতা করে জানায়—এ ধরনের স্টাডি সেন্টার পরিচালনার অনুমোদন দেওয়া হলে দেশের ভেতর বিদেশি বিশ্ববিদ্যলয়ের সার্টিফিকেট বাণিজ্য শুরু হবে। ওই সময় সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, মোনাশের স্টাডি সেন্টার অনেকটা কোচিং সেন্টারের মতোই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা কার্যক্রমের অনুমোদনের বিষয়টি এড়িয়ে যান মোনাশ কলেজ স্টাডি সেন্টারের হেড অব এনরোলমেন্ট জামাল উদ্দিন জামি। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইউজিসির অনুমোদন নিয়েই শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। সেপ্টেম্বর সেশনে ৪২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে।’ বছরে তিনটি সেশনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে বলেও জানান তিনি। সৌজন্যে-বাংলা ট্রিবিউন
Discussion about this post