শিক্ষার আলো ডেস্ক
করোনায় প্রায় দেড় বছর পর শুরু হতে যাওয়া এসএসসি পরীক্ষার মানবণ্টন ও কেন্দ্র ব্যবস্থাপনায় বেশ কিছু পরির্বতন এসেছে। শিক্ষা বোর্ড থেকে ইতিমধ্যে কেন্দ্রের ট্রেজারিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রশ্নপত্রও।
আগামী রোববার (১৪ নভেম্বর) থেকে শুরু হবে এসএসসি পরীক্ষা। সংক্ষিপ্ত আকারে ৩টি নৈর্বাচনিক বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে। এ পরীক্ষা গ্রহণে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড।
পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ও আসন বিন্যাস
২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৬১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় (নগরসহ) ১ লাখ ৯ হাজার ৯৪৭ জন, কক্সবাজারে ২৫ হাজার ৯৩৭ জন, রাঙামাটিতে ৯ হাজার ৩৭২ জন, খাগড়াছড়িতে ১০ হাজার ৬৩৭ জন, বান্দরবানে ৫ হাজার ২২৯ জন।
আবশ্যিক বিষয় থাকলে যে কেন্দ্রে ১ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতো সেখানে এবার মাত্র ২০০ পরীক্ষার্থী কেন্দ্রে থাকবে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আসন বিন্যাসেও বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে।
স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে কেন্দ্রের বেঞ্চগুলোতে ইংরেজি বর্ণ ‘জেড’ আকারে বসানো হবে পরীক্ষার্থীদের। কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী, শিক্ষকসহ সবাইকে মুখে মাস্ক দিয়ে ঢুকতে হবে। প্রবেশ ফটকে রাখা হবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। শিক্ষক ও পরীক্ষার্থীদের সামাজিক দূরত্ব রেখে চালাতে হবে যাবতীয় কার্যক্রম।
মানবণ্টন ও সময়
এসএসসিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত সহ আবশ্যিক বিষয় ও চতুর্থ বিষয়গুলোর ওপর পরীক্ষা দিতে হবে না। কেবল গ্রুপভিত্তিক নৈর্বাচনিক তিন বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে।
এছাড়া এবারের এসএসসি পরীক্ষায় প্রতি বিষয়ে মোট ১০০ নম্বরের বদলে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। তবে ৫০ নম্বরকে ১০০ নম্বরে রূপান্তর করে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে। পরীক্ষার সময়ও হবে অর্ধেক অর্থাৎ তিন ঘণ্টার পরীক্ষা হবে দেড় ঘণ্টায়।
প্রশ্নপত্র কেমন হবে
প্রশ্নপত্র হবে আগের নিয়মেই। তবে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন বাছাই করার ক্ষেত্রে বেশি সুযোগ থাকবে। যেমন আগে যেখানে ১০টি প্রশ্নের মধ্য থেকে আটটির উত্তর দিতে হতো, সেখানে এখন সেই ১০টি প্রশ্নই থাকবে। তবে উত্তর দিতে হবে চার-পাঁচটির। অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন বেছে নেওয়ার সুযোগ পাবে।
অন্য বিষয় যেভাবে মূল্যায়ন হবে
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এসএসসি পরীক্ষায় গ্রুপভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ গণিত, আইসিটি, ধর্ম এবং চতুর্থ বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হবে না। এসব বিষয়ে পরীক্ষার্থীদের আগের পাবলিক পরীক্ষার সাবজেক্ট ম্যাপিং করে মূল্যায়ন করা হবে। এ ক্ষেত্রে জেএসসির ফল মূল্যায়ন করা হবে। এসএসসি (ভোকেশনাল)-এ জেএসসি ও নবম শ্রেণির ফল মূল্যায়ন করা হবে।
নেওয়া হয়েছে অ্যাসাইনমেন্ট
করোনার কারণে আবশ্যিক বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া না হলেও তার ওপর সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করে পরীক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের শিখন জ্ঞান অর্জন করতে এ অ্যাসাইনমেন্টের কাজ শুরু করা হয়। এসএসসিতে দুই স্তরে প্রতি সপ্তাহে দুটি করে অ্যাসাইনমেন্ট এর কাজ করে নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জমা দিতে হয়েছে।
বাড়ছে কেন্দ্র
২০২১ সালে শুধু নৈর্বাচনিক বিষয়ের পরীক্ষা হবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে প্রতি আসনে একজন করে বসবে। সামনে ও পেছনের সিট ফাঁকা রাখা হবে। তাই কেন্দ্রসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ২০২০ সালে কেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ১৯৬টি। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় ৮টি কেন্দ্র বাড়ানো হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলায় (নগরসহ) ১২২টি, কক্সবাজারে ২৮টি, রাঙামাটিতে ২০টি, খাগড়াছড়িতে ২২টি, বান্দরবানে ১২টিসহ মোট ২০৪টি কেন্দ্রে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিবেন।
ভিজিল্যান্স টিম গঠন
২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের ৬০টি ভিজিল্যান্স টিম ও ১২টি বিশেষ ভিজিল্যান্স টিম গঠন করা হয়েছে। বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকদের নিয়ে এ বিশেষ টিম গঠন করা হয়। তারা প্রতিটি কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন, সেখানকার পরিস্থিতি অবলোকন করবেন।
জানা গেছে, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের প্যাকেটে ভরে প্রশ্নপত্র সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের ট্রেজারিতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এসব প্যাকেটের ওপর আরেকটি নিরাপত্তা প্যাকেট ‘নিরাপত্তা ট্যাগ’ দিয়ে মোড়ানো হয়।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন, প্রতি বেঞ্চে একজন করে শিক্ষার্থী বসিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে। সামনে ও পেছনের সিট ফাঁকা থাকবে। এজন্য কেন্দ্র সংখ্যাও বেড়েছে। সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ন চন্দ্র নাথ বলেন, পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে সেট কোড নির্দেশনা পাওয়ার পর ট্যাগ অফিসার এবং পুলিশের উপস্থিতিতে কেন্দ্র সচিব প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খুলবেন।
Discussion about this post