সেরাতুল মুস্তাকীম ডেস্ক
কেয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা প্রথম বান্দার কাছ থেকে নামাজের হিসাব গ্রহণ করবেন। হাদিসের ভাষ্যমতে, যদি বান্দার নামাজ ঠিক হয়, তবে তার সব আমলই ঠিক হবে। আর নামাজ বিনষ্ট হলে তার সব আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথা নিয়মে আদায় করলে আখেরাতে রয়েছে অফুরান পুরস্কার। দুনিয়ার জীবনেও রয়েছে এর অসংখ্য উপকারিতা। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নামাজের ভূমিকা নিয়ে লিখেছেন-নুরুল ইসলাম নূর
এ আর কমর নামে এক বিশেষজ্ঞ তার ইউরোপের ডায়েরিতে লিখেছেন, ‘আমি নামাজ আদায় করছিলাম। একজন ইংরেজ গভীর মনোযোগ দিয়ে আমার নামাজ প্রত্যক্ষ করছিলেন। নামাজ শেষ হওয়ার পর তিনি বললেন, আপনি ব্যায়ামের এ পদ্ধতি আমার লেখা বই থেকে শিখেছেন? কারণ আমিও ব্যায়ামের এ রকম পদ্ধতিই আমার বইতে উল্লেখ করেছি। যে ব্যক্তি এ রকম পদ্ধতিতে ব্যায়াম করবে সে কখনো জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হবে না। সে ইংরেজ তারপর ব্যাখ্যা করে বললেন, দাঁড়ানো অবস্থা থেকে সরাসরি সিজদার ব্যায়ামে চলে গেলে হৃৎপিণ্ডের ওপর চাপ পড়ে। এ কারণেই আমি আমার বইতে এ রকম ব্যায়াম করতে নিষেধ করেছি। আমি লিখছি, প্রথমে দাঁড়িয়ে ব্যায়াম করতে হবে এবং হাত বাঁধতে হবে। এরপর খানিকটা ঝুঁকে হাত এবং কোমরের ব্যায়াম করতে হবে। তারপর মাথা মাটিতে ঠেকিয়ে ব্যায়াম করতে হবে। শুধু বিশেষজ্ঞদের দ্বারাই এ রকম ব্যায়াম করানো সম্ভব। ইংরেজ লোকটির কথা শেষ হওয়ার পর আমি তাকে বললাম, আমি একজন মুসলিম। ইসলাম এভাবেই নামাজ আদায় করার নির্দেশ দিয়েছে। আপনার লেখা বই আমি কখনো চোখে দেখিনি, পাঠও করিনি। আমরা দিনে পাঁচবার এভাবে নামাজ আদায় করি। আমার কথা শুনে তার বিস্ময়ের অবধি রইল না। তিনি ইসলাম সম্পর্কে আমার কাছে আরও নানা তথ্য জানতে চাইলেন।
নামাজ হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
পাকিস্তানের একজন হৃদরোগী তার হৃদরোগের নানা রকম চিকিৎসা নিতে নিতে একপর্যায়ে অস্ট্রেলিয়ায় যান। সেখানে হার্ট স্পেশালিস্ট তাকে পরীক্ষা করার পর কিছু ওষুধ দেন এবং ব্যায়াম করার পরামর্শ দেন। ব্যায়ামের ব্যাপারে ডাক্তার বলেন, আপনাকে আমার ফিজিও ওয়ার্ডে আমার তত্ত্বাবধানে আট দিন ব্যায়াম করতে হবে। রোগী ব্যায়াম অনুশীলন করে দেখলেন, সে ব্যায়াম সম্পূর্ণ নামাজের মতো। রোগী সঠিক নিয়মেই ব্যায়াম অনুশীলন করছিলেন। ডাক্তার এ অবস্থা দেখে অবাক হয়ে বললেন, আপনি কীভাবে এত কঠিন ব্যায়াম এত তাড়াতাড়ি আয়ত্ত করলেন? আমার অন্য রোগীদের তো এ ব্যায়াম অনুশীলন কমপক্ষে আট দিন সময় লেগে যায়। রোগী জানালেন, আমি একজন মুসলিম। আপনার শেখানো ব্যায়াম তো সম্পূর্ণই নামাজের মতো। এ কারণে এ ব্যায়াম অনুশীলনে আমার কোনো সমস্যা হয়নি।
নামাজ স্নায়বিক, মানসিক রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়
ডাক্তার মাজেদ যামান ওসমানী ইউরোপে ফিজিওথেরাপিতে উচ্চ ডিগ্রির জন্য গেলে, সেখানে তাকে ব্যায়াম সম্পর্কে যা কিছু শেখানো হলো, সেই পাঠ ছিল পুরোপুরি নামাজের মতো। তিনি অবাক হয়ে বললেন, এ পর্যন্ত শুধু ধর্মীয় দায়িত্ব হিসাবে আমি নামাজ আদায় করেছি; কিন্তু এখানে দেখতে পাচ্ছি বিস্ময়কর ব্যাপার। নামাজের মতো ব্যায়ামের মাধ্যমে বড় বড় রোগ ভালো হয় যাচ্ছে। ডাক্তার সাহেব লিখে দিলেন, এ ব্যায়াম অনুশীলন মাধ্যমে যেসব রোগ আরোগ্য হতে পারে তা হলো, মস্তিষ্কের রোগ বা মেন্টাল ডিজিজ, স্নায়বিক রোগ, মানসিক রোগ, অস্থিরতা ও অবসাদজনিত রোগ, হৃদরোগ, আর্থ্রাইটিস, ইউরিক এসিড থেকে সৃষ্ট রোগ, পাকস্থলির ক্যানসার, ডায়াবেটিস এবং প্রতিক্রিয়া সৃষ্ট অন্যান্য রোগ, চোখ এবং গলার রোগ।
নামাজে রয়েছে ব্যায়ামের পরিপূর্ণ পদ্ধতি
বিখ্যাত একজন আমেরিকান ডাক্তার তার এক সাক্ষাৎকারে নামাজ এবং ইসলাম সম্পর্কে জীবনের অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ করেছেন এভাবে, নামাজ হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ ও ভারসাম্যপূর্ণ ব্যায়াম। এতে শারীরিক ও পাশবিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার প্রশ্ন দেখা দেয় না। যিনি নামাজের এ ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছেন তিনি সম্ভবত আধুনিক যুগের যান্ত্রিক এবং মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা বিবেচনা করেই এ পদ্ধতির বিন্যাস ঘটিয়েছেন। নামাজে হাত তোলা, হাত বাঁধা, নিচের দিকে চোখ রাখা, আবার হাত ছেড়ে দেওয়া, ঝুঁকে যাওয়া, মন মস্তিষ্ককে কেন্দ্রীভূত রাখা, অধিক রক্ত সঞ্চালনের সুযোগ দেওয়া, কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে হাঁটু ভেঙে বসা, এসব কিছুই হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ ব্যায়ামের পদ্ধতি।
রিপু নিয়ন্ত্রণ করে নামাজ
রিসার্চ ইন দি ফেনোমেনন অব স্পিরিচুয়ালিজম গ্রন্থের লেখক বলেছেন, লোভ, লালসা, কৃপণতা, হিংসা, ঘৃণা, প্রতিশোধ গ্রহণ এ রকম ঘৃণ্য অভ্যাসের কারণে মানুষ মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়, তা থেকে মুক্তি পাওয়া মানুষের সাধ্যাতীত। একমাত্র মৃত্যুর মাধ্যমেই মানুষ এসব রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারে, কিন্তু এসব রোগে আক্রান্ত মানুষ যদি খুশুখুযুর সঙ্গে নামাজ আদায় করতে শুরু করে, তবে শিগ্গির এসব রোগ থেকে মুক্তিলাভ করতে সক্ষম হবে।
আধ্যাত্মিকতার জন্য নামাজ
প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ভাইস অ্যাডমিরাল তার রচিত ‘আসবর্ন মূর দি ভয়েস’ গ্রন্থে বলেছেন, বিনয় ও নম্রতা নামাজের অংশ নয়; বরং এসব হচ্ছে শান্তির অংশ। তিনি আরও বলেছেন, কেউ যদি আধ্যাত্মিকতার শীর্ষে উন্নীত হতে চায়, তবে তার প্রতি আমার পরামর্শ হচ্ছে, নামাজ পড়, নামাজ পড়, নামাজ পড়।
শিক্ষার্থী : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
Discussion about this post