খেলাধূলা ডেস্ক
নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে এই প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতল অস্ট্রেলিয়া। বৈশ্বিক আসরে পাঁচটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও দুটি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতলেও এতদিন এই ট্রফিটি অধরা ছিল তাদের।
অবশেষে প্রতিবেশি দেশ কিউইদের ৮ উইকেট হারিয়ে সেই স্বাদ পেল দলটি। এর আগে ২০১০ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের তৃতীয় সংস্করণে ফাইনালে উঠে ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছিল অজিরা।
অন্যদিকে বিশ্বকাপ আসরে আবারও কপাল পুড়লো নিউজিল্যান্ডের। ২০১৫ ও ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে হারার পর এবার প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও পরাজয় বরণ করল কিউইরা।
শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে সহজ জয় এনে দেন ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ। দুজনের হাফসেঞ্চুরির ওপর ভর করে নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে দেয় তাসমান পাড়ের শক্তিশালী দলটি।
বহুল প্রতীক্ষিত এই ফাইনালে রোববার (১৪ নভেম্বর) দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় দুদল। যেখানে প্রথমে ব্যাট করা নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের দারুণ ব্যাটে নির্ধারিত ২০ ওভার ৪ উইকেট হারিয়ে ১৭২ রান করে। জবাবে ২ উইকেট হারিয়ে ও ৭ বল বাকি থাকতে জয় নিশ্চিত করে অজিরা।
১৭৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই অবশ্য দলনেতা অ্যারন ফিঞ্চকে হারায় অস্ট্রেলিয়া। দলীয় তৃতীয় ওভারে ট্রেন্ট বোল্টকে তুলে মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ড্যারিল মিচেলের ক্যাচে পরিণত হন তিনি। ৭ বলে মাত্র ৫ রান আসে এই ওপেনারের ব্যাট থেকে।
তবে দলকে বিপদে পড়তে দেননি ওয়ার্নার ও তিন নম্বরে নামা মার্শ। কিউই বোলারদের পিটিয়ে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে তারা ৫৯ বলে ৯২ রান তোলে। পরে বোল্টের দ্বিতীয় শিকার হয়ে মাঠ ছাড়েন ওয়ার্নার। ৩৮ বলে ৪টি চার ও ৩ ছক্কায় ৫৩ করেন এই ওপেনার।
ওয়ার্নার বিদায় নিলেও দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন মার্শ। তিনি গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে আরও ৬৬ রান যোগ করে অজিদের জয়ের বন্দরে নিয়ে যান। ৩১ বলে ফিফটি করে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে রেকর্ডও গড়েন মার্শ। শেষ অবধি ৫০ বলে ৬টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৭৭ করে অপরাজিত থাকেন। অপরদিকে ১৮ বলে ২৮ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন ম্যাক্সওয়েল।
এর আগে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে অস্ট্রেলিয়ার সামনে ১৭৩ রানের বড় লক্ষ্য ছুড়ে দেয় নিউজিল্যান্ড। দলের এই বিশাল সংগ্রহের পথে অজি বোলারদের ওপর রীতিমত তাণ্ডব চালিয়েছেন কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন।
ফাইনালে টস জিতে ফিল্ডিং বেছে নেয় অস্ট্রেলিয়া। এই ম্যাচে একাদশে কোনো পরিবর্তন ছাড়াই মাঠে নেমেছে অজিরা। অন্যদিকে কিউই দলে ইনজুরিতে ছিটকে যাওয়া ডেভন কনওয়ের জায়গায় নামেন টিম সেইফার্ট।
ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ২৮ রানে ওপেনার মিচেলের উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে অজি পেসার জশ হ্যাজেলউডের বলে উইকেটরক্ষক ম্যাথু ওয়েডের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে বিদায় নেওয়ার আগে ৮ বলে ১১ রান করেন সেমিতে ইংলিশদের বিপক্ষে ৪৭ বলে অপরাজিত ৭২ রান করা মিচেল। এরপর হাল ধরেন উইলিয়ামসন ও গাপটিল। দুজনের জুটিতে ৫০ ছাড়িয়েছে কিউইদের সংগ্রহ।
১১তম ওভারে মিচেল স্টার্কের বলে টানা ৪ হাঁকান উইলিয়ামসন। কিন্তু পরের ওভারের প্রথম বলেই জাম্পার শিকার হন গাপটিল। স্লগ সুইপ খেলতে দিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে দেন কিউই ওপেনার। তার ব্যাট থেকে আসে ৩৫ বলে ২৮ রান। এর আগে উইলিয়ামসনের সঙ্গে তার জুটিতে আসে ৪৫ বলে ৪৮ রান।
গাপটিল ঝড় তুলতে না পারলেও থামেননি উইলিয়ামসন। জাম্পার ওই ওভারের পর পার্ট-টাইম স্পিনার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বলে পর পর দুই ছক্কা হাঁকিয়ে ৩২ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন তিনি। কিউইদের রানের গতিও বাড়তে থাকে দ্রুত। অবশ্য ২১ বলে ২১ রান করা অবস্থায় একবার জীবন পান উইলিয়ামসন। এরপর তার ব্যাটে রানের ফোয়ারা বয়ে যায়।
১৬তম ওভারে রীতিমত ঝড় তোলেন উইলিয়ামসন। অজি ফাস্ট বোলার স্টার্কের বলে টানা দুই চার ও এক ছক্কা হাঁকান তিনি। এক বল বাদে ফের টানা দুই বাউন্ডারি। সবমিলিয়ে ওই ওভারে আসে ২২ রান। তবে কামিন্স আক্রমণে এসে ৮ রান খরচ করেন। কিছুটা চাপ বাড়তেই পরের ওভারে হ্যাজেলউডের বলে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন ধুঁকতে থাকা গ্লেন ফিলিপস। ততক্ষণে অবশ্য দুজনের জুটিতে এসে গেছে ৩৭ বলে ৬৮ রান।
ফিলিপস বিদায় নেওয়ার পরের বলেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে চাপ কমানোর চেষ্টা করেন উইলিয়ামসন। কিন্তু এক বল বাদেই এগিয়ে এসে তুলে মারতে গেলে লং-অফে থাকা স্টিভ স্মিথের হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। এর আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৪৮ বলে ৮৫ রানের ইনিংস। দুর্দান্ত ইনিংসটি খেলার পথে তিনি ১০টি চার ও ৩টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন।
তবে শেষদিকে কিউইদের রানের চাকা সেভাবে সচল রাখতে পারেননি সেইফোর্ট ও জিমি নিশাম। আগের ৩ ওভারে ৫০ রান খরচ করা স্টার্ক শেষ ওভারে খরচ করেন ১০ রান।
নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে কিউইদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৭২ রান।
বল হাতে অজি পেসার হ্যাজেলউড ৪ ওভারে ১৬ রান খরচ করে নিয়েছেন ৩ উইকেট। বাকি উইকেট জাম্পার।
দারুণ ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা হন মিচেল মার্শ। আর পুরো টুর্নামেন্টে অসাধারণ ব্যাট করা ডেভিড ওয়ার্নার টুর্নামেন্ট সেরা হন।
Discussion about this post