মোঃ মাহফিজুর রহমান মামুন
শিক্ষকরা জাতির আলোকবর্তিকা। তারা শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে গোটা জাতিকে আলোকিত করে তুলেন। পিতা-মাতা আমাদের জন্ম দিয়ে লালন-পালন করে পৃথিবীতে বড় করে তুলেন এবং শিক্ষক আমাদের শিক্ষা দিয়ে এই পৃথিবীতে সত্যিকারের মানুষের মতো চলার উপযোগী করে গড়ে তুলেন। পিতা-মাতার ঋণ যেমন আমরা কোনোদিন পরিশোধ করতে পারব না, তেমনি শিক্ষকের ঋণও কোনোদিন পরিশোধ করতে পারব না।
শিক্ষকদের মধ্যে আবার প্রাথমিক শিক্ষকদের ত্যাগ ও অবদান সবচেয়ে বেশি। কারণ তারাই প্রথমে অবুঝ শিশুদেরকে মায়ের কোল থেকে এনে শিক্ষার লাইনে দাঁড় করান এবং স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে শিক্ষা দিয়ে থাকেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, পশ্চিমা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোসহ অধিকাংশ দেশে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন-মর্যাদা সর্বাধিক হলেও আমাদের দেশে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন-মর্যাদা একেবারে তলানিতে।
আমাদের দেশের সবার প্রবণতা এমন যেন, ছোট শিশুদের পড়ায় বলে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন-পদমর্যাদাও ছোট করে রাখতে হবে; তা নাহলে কর্তৃপক্ষের সম্মান যেন চলে যায়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে ১০ম গ্রেডের দাবি করলেও কর্তৃপক্ষ যুক্তি দেখাচ্ছে যে, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের গ্রেড যেহেতু ১০ম, তাহলে প্রধান শিক্ষকদের কীভাবে ১০ম গ্রেড দেয়া যায়?
কর্তৃপক্ষের এই কথার মানে কি এটা দাঁড়ায় না যে, শিক্ষকদের মর্যাদা সবসময় কর্মকর্তাদের নিচে থাকবে। অথচ জাপান, আমেরিকা, ফিনল্যান্ডের মতো দেশে কর্মকর্তা তো দূরের কথা, মন্ত্রীর থেকেও শিক্ষকদের মর্যাদা বেশি দেয়া হয়। শিক্ষকদের বেতন মর্যাদা কর্মকর্তাদের নিচে থাকতে হবে কেন?
একজন শিক্ষক হাজার হাজার কর্মকর্তা তৈরি করেন। পক্ষান্তরে, একজন কর্মকর্তা সারা জীবনেও একজন শিক্ষক তৈরি করতে পারবেন না। তাহলে শিক্ষকের বেতন-মর্যাদা কেন কর্মকর্তাদের নিচে থাকতে হবে?
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়েতো শিক্ষকদের বেতনের সাথে কর্মকর্তাদের বেতন গ্রেডের তুলনা করা হয়না।জেলা শিক্ষা অফিসারের ৬ষ্ঠ গ্রেড,৩৫৫০০ টাকা মূলবেতন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের ৯ম গ্রেড, মূলবেতন ২২০০০ টাকা।সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের গ্রেড-১০, মূলবেতন ১৬০০০ টাকা সরকারি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের ৬ষ্ঠ গ্রেড, মূলবেতন ৩৫৫০০ টাকা, সিনিয়র সহকারী শিক্ষকের ৯ম গ্রেড,মূলবেতন ২২০০০ টাকা।সহকারী শিক্ষকের ১০ম গ্রেড, মূলবেতন ১৬০০০ টাকা।তাছাড়া সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরদের মর্যাদাও একসময় ৩য় শ্রেণির কর্মচারী ছিল।
সরকারি কলেজের বিভিন্ন গ্রেডের(৪র্থ-৫ম,৬ষ্ট,৭ম,৯ম) শিক্ষকদেরতো মাউশির ৯ম গ্রেডের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিতে ও কলেজ পরিদর্শন করতে কোন সমস্যা হয়না,তাহলে প্রাথমিকে সমস্যা হবে কেন?
তাই, প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড ও প্রধান শিক্ষকের ৯ম গ্রেডের দাবী যৌক্তিক। উল্লেখ্য, ২০১৯ নিয়োগবিধি অনুযায়ী সরাসরি নিয়োগে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক উভয়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা সর্বনিম্ন স্নাতক ২য় শ্রেণী।তাছাড়া নিয়োগ লাভের পরে প্রাথমিক শিক্ষকদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য আইইআর এর অধীনে দেড় বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন কোর্স করতে হয়।
তাহলে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষদের সমযোগ্যতায় অথবা নিম্নযোগ্যতায় অন্যদের ১০ম গ্রেড দিতে সমস্যা না হলে মানুষ গড়ার কারিগর সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড দিতে এত অজুহাত কেন?
তাই প্রাথমিক সহকারী শিক্ষদের মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে ১০ম গ্রেড দাবী নয় বরং অধিকার।পরিশেষে জাতির বিবেকের কাছে একটাই প্রশ্ন স্নাতক শিক্ষাগত যোগ্যতায় নিয়োগপ্রাপ্ত একজন শিক্ষকের মর্যাদা কীভাবে ৩য় শ্রেণির কর্মচারী হয়?
লেখক-,শিক্ষক ও ব্লগার
Discussion about this post