অনলাইন ডেস্ক
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ব্যক্তি, দল ও প্রতিষ্ঠানকে অনুপ্রেরণা, উৎসাহ ও উদ্দীপনা যোগানো এবং স্বীকৃতি দিতে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার নীতিমালা-২০২১’ প্রণয়ন করেছে সরকার।
জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে সরকারি ও বেসরকারি মিলে ২৪টি ক্ষেত্রে পুরস্কার দেওয়া হবে।
নীতিমালা প্রসঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী বাংলানিউজকে বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে উদ্ভাবনীমূলক কাজে অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। যাতে সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে মানুষ উৎসাহ পায়।
এর আগে চারবার এ পুরস্কার দেওয়া হলেও পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা করা হয়েছে বলে জানান মাকছুদ জাহেদী।
আইসিটি বিভাগ থেকে নীতিমালার খসড়া তৈরি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠালে, তা চূড়ান্ত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
নীতিমালার পটভূমি অনুযায়ী, ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা করেন। বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের সারিতে প্রতিষ্ঠিত করার প্রত্যয়ে রূপকল্প-২০২১ ঘোষণার সেই সময়ের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবন করে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা স্মরণীয় করে রাখতে সরকার ১২ ডিসেম্বরকে ‘জাতীয় তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি দিবস’ হিসেবে উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে সরকার ১২ ডিসেম্বরকে ‘জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি দিবস’ এর পরিবর্তে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস’ হিসেবে উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতি বছর ১২ ডিসেম্বর এ পুরস্কার দেওয়া হবে।
উদ্দেশ্য: নীতিমালায় বলা হয়েছে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ব্যক্তি, দল ও প্রতিষ্ঠানকে অনুপ্রেরণা, উৎসাহ ও উদ্দীপনা যোগানো এবং স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি, দল ও প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেওয়াই এ উদ্যোগ নেওয়ার উদ্দেশ্য।
পুরস্কারের ক্ষেত্র: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে সাধারণ ও কারিগরি ক্ষেত্রে পুরস্কার দেওয়া হবে।
সাধারণ ক্যাটাগরিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে মানব সম্পদ উন্নয়ন; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিল্পের বিকাশে অবদান; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নয়নে অবদান; কেন্দ্রীয়/মাঠ পর্যায়ে বাংলাদেশ মিশনে ই-সার্ভিস বাস্তবায়ন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে নাগরিক সেবার মান উন্নয়ন।
কারিগরি ক্যাটাগরিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে সফটওয়্যার/হার্ডওয়্যার/নেটওয়ার্ক উন্নয়ন; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের নিরাপত্তা (সাইবার নিরাপত্তা) নিশ্চিতকরণ; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি গবেষণা ও উদ্ভাবন এবং বাংলাদেশে সমৃদ্ধি আনতে ফ্রন্টিয়ার/ইমার্জিং টেকনোলজির ব্যবহার।
পুরস্কারের শ্রেণি বিভাগ: জাতীয় পর্যায়ে (সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য ছয়টি করে মোট ১২টি পুরস্কার) দেওয়া হবে। সাধারণ ও কারিগরি পৃথক দুটি ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আলাদাভাবে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি, শ্রেষ্ঠ দল ও শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান– এ তিনটি শ্রেণিতে মোট ১২টি পুরস্কার দেওয়া হবে। পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট, সম্মাননা সনদ, নগদ অর্থ দেওয়া হবে।
ব্যক্তিগত অবদানের ক্ষেত্রে ক্রেস্ট, সম্মাননাপত্র ও নগদ দুই লাখ টাকা দেওয়া হবে। দলগত অবদানের ক্ষেত্রে দলের সব সদস্যকে ক্রেস্ট, সম্মাননাপত্র ও জনপ্রতি নগদ এক লাখ টাকা করে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হবে। দলের সদস্য পাঁচজনের বেশি হলে পাঁচ লাখ টাকা সমভাবে ভাগ করা হবে। প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ক্রেস্ট, সম্মাননা সনদ ও একটি ল্যাপটপ দেওয়া হবে।
জেলা পর্যায়ে (সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য ছয়টি করে মোট ১২টি পুরস্কার) দেওয়া হবে। সাধারণ ও কারিগরি পৃথক দুটি ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আলাদাভাবে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি, শ্রেষ্ঠ দল ও শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান- এ তিনটি শ্রেণিতে একটি করে মোট ১২টি পুরস্কার দেওয়া হবে (জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার প্রাপ্তরা ব্যতীত)। পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট, সম্মাননাপত্র, নগদ অর্থ দেওয়া হবে। ব্যক্তিগত অবদানের ক্ষেত্রে ক্রেস্ট, সম্মাননাপত্র ও জনপ্রতি নগদ এক লাখ টাকা দেওয়া হবে। দলগত অবদানের ক্ষেত্রে দলের সব সদস্যকে ক্রেস্ট, সম্মাননাপত্র ও জনপ্রতি নগদ ৫০ হাজার টাকা করে সর্বোচ্চ দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। দলের সদস্য পাঁচজনের বেশি হলে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা সমভাবে ভাগ করা হবে। প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ক্রেস্ট, সম্মাননা সনদ ও একটি ল্যাপটপ দেওয়া হবে।
পুরস্কার দেওয়ার ব্যয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের বাজেটে বরাদ্দ নির্ধারিত থাকবে।
বাস্তবায়ন সময়সূচি: পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী ক্যালেন্ডার বছরের (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) কার্যক্রম বিবেচনায় নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে ৫ আগস্ট থেকে আবেদন গ্রহণ প্রক্রিয়া শেষে ১২ ডিসেম্বর পুরস্কার দেওয়া হবে।
মনোনয়ন প্রক্রিয়া: মনোনয়নের প্রাথমিক প্রস্তাবনা সরকারি পর্যায়ে ব্যক্তি, দল এবং প্রতিষ্ঠানকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জেলা বাছাই কমিটির কাছে পাঠাতে হবে এবং বেসরকারি পর্যায়ে ব্যক্তি, দল এবং প্রতিষ্ঠানকে সরাসরি জেলা বাছাই কমিটির কাছে পাঠাতে হবে। শুধুমাত্র ঢাকা মহানগরীতে অবস্থিত বেসরকারি ব্যক্তি, দল ও প্রতিষ্ঠান মনোনয়নের প্রাথমিক প্রস্তাবনা জেলা বাছাই কমিটি, ঢাকা বা কেন্দ্রীয় বাছাই কমিটির কাছে পাঠাতে পারবে।
মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সরকারি অধিদপ্তর/দপ্তর/সংস্থা/স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ব্যক্তি, দল ও প্রতিষ্ঠান শ্রেণির মনোনয়নের প্রাথমিক প্রস্তাবনা কেন্দ্রীয় বাছাই কমিটির কাছে পাঠাতে হবে।
বাছাই কমিটি: জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসককে সভাপতি করে ১৩ সদস্যের কিমিটি গঠন করা হয়েছে। কেন্দ্ৰীয় বাছাই কমিটিতে সভাপতি থাকবেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী। এ কমিটি নয় সদস্যের।
পুরস্কারের জন্য জাতীয় দৈনিক পত্রিকা (একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি) ও ওয়েব পোর্টালে মনোনয়ন/আবেদনপত্র আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।
পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে পদ্ধতি অনুসরণ: জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি, কেন্দ্রীয় বাছাই কমিটি কর্তৃক বাছাইকৃত তালিকা বিবেচনা করে ওই তালিকা থেকে অথবা মন্ত্রিসভা কমিটির বিবেচনায় জাতীয় পর্যায়ে উপযুক্ত ব্যক্তি/দল/প্রতিষ্ঠানের নাম চূড়ান্তভাবে বাছাই করার পর তা অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাবে।
বাস্তবায়ন: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতাধীন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার নীতিমালা-২০২১’ এর বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।
পুরস্কার পরিকল্পনায় বিবেচ্য বিষয়: মনোনয়ন পত্রের তথ্য অসম্পূর্ণ বা অসত্য বা অস্পষ্ট এবং নমুনা অনুযায়ী যথাযথ প্রমাণপত্র না থাকলে মনোনয়ন পত্র বাতিল বলে গণ্য হবে। এ পুরস্কার কার্যক্রমের সব বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। কোনো শ্রেণিতে কাঙ্ক্ষিত মানসম্পন্ন কোনো প্রস্তাব পাওয়া না গেলে, সে ক্ষেত্রে ওই শ্রেণিতে পুরস্কার দেওয়ার কথা বিবেচনা করা হবে না।
Discussion about this post