নিজস্ব প্রতিবেদক
পাবলিক পরীক্ষা সকাল ১০টায় শুরু হলে যানজটের কারণে কিছু শিক্ষার্থীর কেন্দ্রে যেতে দেরি হওয়ায় আগামী বছর থেকে পিক আওয়ারে পরীক্ষা না নেওয়ার ভাবনার কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সুষ্ঠু, নকলমুক্ত ও ইতিবাচক পরিবেশে সম্পন্ন করতে বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে সচিবালয়ে জাতীয় মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
যানজটের কারণে এসএসসি পরীক্ষা শুরুর ১৫ মিনিট পরে কিছু পরীক্ষার্থীকে কেন্দ্রে আসতে দেখা গেছে—এ বিষয়ে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের কথা ছিল পরীক্ষার হলে সাড়ে ৯টার মধ্যে প্রবেশ করবে। তারপরে যদি কেউ প্রবেশ করে, পরীক্ষা শুরুর ১৫ মিনিট বা আধাঘণ্টা পরে যদি আসে, এখন দেড় ঘণ্টার পরীক্ষা। তাহলে কিন্তু আসলেই একটা সমস্যা। তারপরও আমরা বিষয়টা খতিয়ে দেখব যে, কী করা যায়। কিন্তু যেখানে দেড় ঘণ্টার পরীক্ষা, যদি তিন ঘণ্টার পরীক্ষা হতো তাহলে কেউ এক ঘণ্টা পরে আসতেন…, আজকে বিশেষ পরিস্থিতির জন্য না। এমনিতেও পরীক্ষা শুরু হয়ে যাওয়ার পরে ২-৪ মিনিট পর যদি কেউ আসে কখনও কখনও অ্যালাও করা হয়, তারপরে অ্যালাও করা হয় না। তারপরও বিশেষ পরিস্থিতি আমরা খতিয়ে দেখব।
একটি কেন্দ্রে দুজন শিক্ষার্থী সকাল ১০টার পরে ঢুকেছে, তারা ঢুকতে বাধ্য হয়েছে, ১০টার ৫ মিনিট আগেও অন্তত ৮-১০ জন ঢুকেছে। কারণ ওই দিন শুভেচ্ছা জানানোর জন্য একটি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী রাস্তা ব্লক করে দাঁড়িয়েছিল। এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়ানো যায় কিনা, পরীক্ষার আগে কোনো সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা যায় কিনা—এমন প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এটি একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত একটি বিষয় এবং এটি নিশ্চয়ই হওয়া উচিত না। কারণ আমাদের দেশে এসএসসি, এইচএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষার গুরুত্ব পরীক্ষার্থী থেকে শুরু করে তার পুরো পরিবার-সমাজ সবার কাছেই। সে কারণেই এই পরীক্ষাগুলোর সময় পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতে বিঘ্ন হয়, এরকম কোনো ধরনের কোনো কিছুই কারো করা উচিত নয়। তবে সবকিছু কিন্তু আইন করে, নিয়ম করে নিষিদ্ধ করা করা যায় না। এগুলো আমাদের সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা, আমাদেরও কথা বলা এবং জানানো জরুরি। আমরা এ ব্যাপারে আমাদের পক্ষে যা কিছু করণীয় আমরা সেটি চেষ্টা করব।
অভিভাবকদের পক্ষে দাবি জানানো হচ্ছে, পরীক্ষা শুরু হয় সকাল ১০টা থেকে, তখন অফিস আওয়ারও থাকে এবং প্রচণ্ড যানজট হয়। অনেক কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী নির্দিষ্ট সময়ে আসতে পারেনি। পরীক্ষার সময় দুপুরের দিকে করা যায় কিনা, যাতে যানজট কম থাকে—এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এটা আমাদের ভাবনায় আছে। আজকের সভায়ও আলাপ করেছি। এবার যে পরীক্ষাটি হচ্ছে সেখানে এই পরিবর্তনটা আনতে পারছি না। কারণ, স্বাস্থ্যবিধি মানার যে বিষয়টা আছে, আমাদের সকালের পরীক্ষার্থীরা সবাই বেরিয়ে যাবে তারপরে মাঝখানে একটা ব্রেক দিয়ে পরবর্তী পরীক্ষার্থীরা ঢুকবে। সেই কারণে আমাদের মাঝখানের গ্যাপটা রাখতে হচ্ছে। কাজেই আমাদের ১০টার পরীক্ষা ১০টাতেই রাখতে হচ্ছে। কিন্তু আগামী বছর থেকে আমরা চেষ্টা করতে পারি, বিশেষ করে যেদিন সবচাইতে বেশি পরীক্ষার্থী থাকে অর্থাৎ মূল বিষয়গুলো বা আবশ্যিক বিষয়গুলোর যে পরীক্ষা হয় সেদিন পরীক্ষাগুলো আরেকটু পরে শুরু করা যায় কিনা, সে ব্যাপারে আমরা সিদ্ধান্ত নেব আগামী বছর থেকে।
শুধুই যানজটের কারণে পরীক্ষার সময় পেছাবে—এমনে প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এটা এ বছর করা সম্ভব না। আগামী বছরে করার কথা ভাববো। পিক আওয়ারের একটা ব্যাপার আছে। পৃথিবীর সব দেশেই সব শহরে ট্রাফিকের একটা প্যাটার্ন আছে, সেই প্যাটার্নের ওপর নির্ভর করে কোনটা পিক আওয়ার। আমাদের এখানে যে প্যাটার্ন সে প্যাটার্ন অনুযায়ী যেটা পিক আওয়ার, যেদিন সর্বোচ্চ সংখ্যক পরীক্ষার্থী থাকে এবং একবেলা পরীক্ষা থাকে তাহলে সময়টা সমন্বয় করে এদিক-ওদিক করবার সুযোগ থাকে। সেই সুযোগটি আগামী বছর ভাবব।
সভায় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ অংশ নেন। অনলাইনে যুক্ত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন।
Discussion about this post