অনলাইন ডেস্ক
বিশ্বকে গ্রাস করছে করোনা মহামারি। প্রতিদিনই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল আক্রান্তের সংখ্যা বিশ্ব জুড়ে ৮ লাখ এবং মৃতের সংখ্যা ৪১ হাজার ছাড়িয়েছে। এশিয়ায়ও জেঁকে বসেছে করোনা ভাইরাস। এ অঞ্চলে মহামারি শেষ হতে অনেক সময় লাগবে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক কর্মকর্তা। স্পেনে ২৪ ঘণ্টায় ৮৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ইস্যুতে বিধিনিষেধ আরো কঠোর হতে পারে বলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সতর্ক করেছেন।
ওয়ার্ল্ডোমিটার নামের একটি ওয়েবসাইট জানিয়েছে, বিশ্বে করোনা ভাইরাসে গতকাল পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৮ লাখ ৩৭ হাজার ২১ জন। এর মধ্যে ৪১ হাজার ২৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। সুস্থ হয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজারের বেশি। আক্রান্তের শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র (১ লাখ ৭৬ হাজার ৫১৮)। দেশটিতে ৩ হাজার ৪৩১ জন মারা গেছে। এক দিনে ১ হাজারের বেশি আক্রান্ত হয়েছে এবং ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্র চীনকেও ছাড়াল। চীনে মারা গেছে ৩ হাজার ৩০৫ জন। এমন পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, করোনাকে ঘিরে বিধিনিষেধ আরো কঠোর হতে পারে। চীন এবং ইউরোপে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি অর্থনীতিকে উজ্জীবিত রাখতে অবকাঠামো খাতে দুই ট্রিলিয়ন ডলার বরাদ্দের আহ্বান জানিয়েছেন। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের আরো কয়েকটি অঙ্গরাজ্য কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। এতে দেশটির প্রতি চার জন মানুষের মধ্যে প্রায় তিন জনই লকডাউনে পড়তে যাচ্ছে। দেশটির ফেডারেল ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এজেন্সি (এফডিএ) নতুন একটি কিটের অনুমোদন দিয়েছে। এর মাধ্যমে পরীক্ষায় দুই মিনিটে ফল জানা যাবে। এদিকে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি জানিয়েছেন, তিনি করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা করাবেন না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক তাকেশি কাসাই গতকাল বলেছেন, এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে করোনা ভাইরাস মহামারি শেষ হতে অনেক দেরি হবে। এই ঝুঁকি সহজে শেষ হবে না। বর্তমান পদক্ষেপগুলোয় হয়তো দেশে গণসংক্রমণ ঠেকানো যাবে। মহামারি শেষ না হওয়া পর্যন্ত করোনার ঝুঁকিও থাকবে বলে তাকেশি জানান। কঠোর বিধিনিষেধেও ইউরোপের ইতালি ও স্পেনে মৃত্যু থামানো যাচ্ছে না। ২৪ ঘণ্টায় স্পেনে ৮৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা আট হাজার ১৮৯ জনে পৌঁছেছে। এক দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ৮৫ হাজার ১৯৫ জন থেকে বেড়ে ৯৪ হাজার ৪১৭ জনে দাঁড়িয়েছে। আর ইতালিতে একদিনে মৃত্যু ৮৩০ জন বেড়ে ১২ হাজার ৪২৮ জনে পৌঁছেছে।
ভারতে ১ হাজার ৪শ’ জন আক্রান্ত এবং ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। দিল্লিতে তাবলিগ জামাতের সদর দফতরে একটি সমাবেশে যোগ দিয়ে ঘরে ফেরা অন্তত সাত জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর পর মসজিদটিকে ভারতে মহামারি ছড়ানোর অন্যতম ‘হটস্পট’ বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। ‘মারকাজ নিজামুদ্দিন’ নামে পরিচিত মসজিদটিতে একটি ধর্মীয় সমাবেশ উপলক্ষ্যে এ মাসে অন্তত দুই থেকে আড়াই হাজার লোক সমবেত হয়েছিল। শহরের অত্যন্ত ঘিঞ্জি এলাকায় ছয় তলা ভবনের ডরমিটরিতে তারা সবাই গাদাগাদি করে ছিলেন। এর মধ্যে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মুসলিমরা যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন বহু বিদেশি নাগরিকও।
ব্রিটেনে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ২২ হাজারের বেশি এবং মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৮০৮ জনের। মৃতের সংখ্যা সরকার ঘোষিত সংখ্যার চেয়ে শতকরা ২৪ শতাংশ বেশি বলে দেশটির অফিস অব ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস (ওএনএস) গতকাল এ সংক্রান্ত এক পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এরই মধ্যে দেশটির প্রিন্স উইলিয়াম করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি দক্ষিণ লন্ডনের ক্রয়ডনে জাতীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক স্কিমের একটি কল সেন্টার ভিজিট করার সময় প্রিন্স উইলিয়াম এমন স্বীকারোক্তি দেন। একটি সূত্র ডেইলি মেইলকে বলেছে, ডিউক অব ক্যাম্ব্রিজ প্রিন্স উইলয়াম করোনা ভাইরাস মহামারিতে ব্রিটেনকে সহায়তা করতে চান। দ্য সান জানিয়েছে, বর্তমান মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একজন এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাইলট হিসেবে দায়িত্ব পালন করার কথা বিবেচনা করছেন উইলিয়াম। এদিকে মিয়ানমারে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম এক জনের মৃত্যু হয়েছে। আর করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন কঙ্গোর সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকিস জোয়াকিম ইয়োম্বি অপাঙ্গো। সূত্র :সিএনএন, আলজাজিরা ও রয়টার্স
Discussion about this post