কামরুল হাসান মামুন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য দুটি সহজ সুপারিশ: ১. ছাত্র শিক্ষকদের দলান্ধ রাজনীতি বন্ধ করা। শিক্ষকদের দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন বিশেষ করে ডিন নির্বাচন বন্ধ করতে হবে। ২. শিক্ষকদের প্রতিদিন অফিসে আসা বাধ্য করতে হবে। এ কেমন চাকুরী যে একটি বিভাগের প্রায় সকল শিক্ষকের অফিস রুম বন্ধ থাকে।
তবে এইটা বাধ্য করার আগে শিক্ষকদের যেন একাধিক চাকুরী করতে না হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে। কাউকে যদি পার্ট টাইম অন্য কিছু করতে হয় তাহলে তাকে বাধ্য করার ঘোষণা দিলেও ফলপ্রসূ হবে না। তার অর্থ দাঁড়ালো শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি করতে হবে। অন্তত ভারত পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনের সমান করুন দেখবেন অনেক কিছুর আমূল পরিবর্তন সম্ভব।
শিক্ষকরা সকলে যদি নিয়ম করে বিভাগে থাকে বিভাগের চেহারাটাই বদলে যাবে। আর এর ফল পাবে শিক্ষার্থীরা। এইটা করলে বিদ্যমান শিক্ষকদের দিয়েই শিক্ষার মান বাড়ানো সম্ভব। আমাদের দেশে দ্রব্যমূল্যের দাম ভারত পাকিস্তান থেকে বেশি। আমাদের দেশে বাসা ভাড়া ভারত থেকে অনেক বেশি। তার মানে হলো আমাদের বেতন ভারতের শিক্ষকদের সমান করলেও এফেক্টিভলি তাদের চেয়ে বেতন কম হবে।
বিশ্বে এমন কোন ভালো বিশ্ববিদ্যালয় কল্পনা করা যায় না যেখানে শিক্ষকরা প্রতিদিন নিয়ম করে বিভাগে অন্তত সকাল থেকে থাকে না। শুধু ক্লাস থাকলেই কিছুক্ষনের জন্য আসব নাহলে না এ কেমন চাকুরী? হ্যা, এটাও বুঝতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতাটা এমন একটি চাকুরী যেখানে আমাদের ৯-৫ টা অফিস না।
আমরা বাসাতে থাকলো শিক্ষকতার কাজ করি। যেমন প্রায় রাত ১২টা পর্যন্ত হয় পড়ছি, না হয় গবেষণার কাজ করছি, না হয় ক্লাস প্রস্তুত করছি। এই জন্যই শিক্ষকদের অফিসে আসা বাধ্যতা করলে বেতন অন্য সকল চাকুরী থেকে বেশি দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পিএইচডি আছে, অনেকের পোস্ট-ডক আছে, শিক্ষকরা জ্ঞান সৃষ্টি করে তাহলে কেন তাদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল ঘোষণা করা হবে না?
এই কাজটি যতদিন না হবে বাংলাদেশের শিক্ষার মান ভালো হবে না, হবে না হবে না। তেনা পেচাইয়া যারা এর বিরোধিতা করবে পরিশেষে তারা, তাদের সন্তানরা তথা গোটা দেশ ভালো মানের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে।
ইন ফ্যাক্ট, সকল স্তরের শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল চালু করতে হবে। তবেই কেবল বাংলাদেশের শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের শিক্ষার মান তলানিতে। এর অন্যতম কারণ বাংলাদেশে শিক্ষকদের বেতন তলানিতে।
লেখকঃ কামরুল হাসান মামুন,অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় [লেখকের ফেসবুক টাইমলাইন থেকে সংগৃহীত]
Discussion about this post