বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
রাঙামাটি: কয়েক মাসের মধ্যে হামে গ্রাস করে নিয়েছে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার দুর্গম সাজেক ইউনিয়নটি। দিন দিন এ রোগে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সঙ্গে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও।
সম্প্রতি ওই ইউনিয়নের বেটলিং গ্রামের সুরেশ চাকমার ছেলে নিকেতন চাকমা (১৫) এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এ নিয়ে সাজেকে হামে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৯ এবং আক্রান্তের সংখ্যা রয়েছে ১৫৫ জনের মতো। এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় মৃত্যুর বিষয়টি জানাতে দেরি হয় বলে জানিয়েছেন ইউপি সদস্য গরেন্দ্র ত্রিপুরা।
জানা যায়, গত কয়েকমাসে সাজেকের কয়েকটি গ্রামে হামের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এতে আক্রান্ত হয়ে ৮ শিশু মারা যায় এবং প্রায় শতাধিকের উপর শিশু আক্রান্ত হয়। এরমধ্যে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও আবারও হাম নতুন করে ওই ইউনিয়নের ১১টি গ্রামে হানা দেয়। এতে আক্রান্ত হয় ১৫৫ জন শিশু এবং নিকেতন চাকমা নামে এক কিশোর মারা যায়।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, পুরো ইউনিয়নটি দুর্গম এলাকা। এখানে কখন কি হয় কেউ জানে না। ওই ইউনিয়নে হেলিকপ্টার ছাড়া যোগাযোগ করা প্রায় অসম্ভব। উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগে নেই কোনো ভাল সড়ক পথ। তাই চিকিৎসা সেবা ওই এলাকায় পৌঁছানো খুবই কষ্টের ব্যাপার। কেননা দুর্গম পথ মাড়িয়ে ওই এলাকায় ডাক্তারদের পৌঁছানো অনেক কঠিন ব্যাপার। যে কারণে যথাসময়ে চিকিৎসা সেবা পৌঁছানো যায় না।
এছাড়া ওই এলাকার বাসিন্দারা বেশিরভাগই নিরক্ষর হওয়ার কারণে তাদের মধ্যে রয়েছে ধর্মীয় গোঁড়ামি। যখনি ডাক্তাররা বিভিন্ন সময় কঠিন পথ মাড়িয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে যায় তখনি তারা নানা কুসংস্কারে বিশ্বাস এবং ধর্মীয় গোঁড়ামির ভয় দেখিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে অপরাগতা প্রকাশ করে। যে কারণে চিকিৎসকদের হতাশা নিয়ে বাড়িতে ফিরতে হয়।
তবে কয়েকমাসে পুরো সাজেকে যখন হাম গ্রাস করে নিচ্ছে তখনি মাঠে নেমে পড়েছে সেনাবাহিনীর সদস্য এবং বিজিবির জোয়ানরা। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসকদের দল। সবার সমন্বয়ে হামের ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বের হতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। যেসব শিশুরা বেশি অসুস্থ তাদের উদ্ধার করে হেলিকপ্টারে উন্নত চিকিৎসা দিতে চট্টগ্রামে পাঠানো হচ্ছে।
আক্রান্ত এলাকার ৭ নম্বর পাড়ার কার্বারী (গ্রাম প্রধান) দয়াল ত্রিপুরা বাংলানিউজকে বলেন, গত ২ দিন থেকে আমার এলাকায় মোট ১৬ জন হাম রোগে আক্রান্ত হয় এবং তারা সবাই এক থেকে আট বছরের শিশু।
তিনি আরও বলেন, আমাদের গ্রামের বাসিন্দারা সচেতন নয়। নেই কোনো শিক্ষিত মানুষ। কুসংস্কারে বিশ্বাস করে গ্রামের বাসিন্দারা। যে কারণে রোগ হলে চিকিৎসা করাতে চাই না। কেউ আক্রান্ত হলে ঝাঁড়-ফু দিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। যে কারণে আমাদের শিশুদের মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। রোগটি দিনদিন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ইফতেখার আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, সাজেকের এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বের হতে আগে থেকেই আমাদের দুইটি দল কাজ করছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি সেনাবাহিনী-বিজিবির সদস্যরা দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে। আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি সাজেক থেকে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি দূর করতে এবং শিশুদের মুখে হাসি ফোটাতে।
Discussion about this post