খেলাধূলা ডেস্ক
সাগরপাড়ের স্টেডিয়ামে তৃতীয় দিনের সকালে এতটাই ভালো করেছিল, যা প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে যায়। পাকিস্তানকে ২৮৬ রানে অলআউট করে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামে মুমিনুল হকরা। কিন্তু শেষ সেশনে এসে নিজেরা ৩৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে লিখে নেয় অন্য গল্প। সাগরিকার সকাল আর বিকাল মেলানো সত্যি কঠিন!
চতুর্থ দিনে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে হলে প্রথম সেশন বিনা বাধায় কাটিয়ে দিতে হবে মুশফিকুর রহিম ও ইয়াসির আলীকে। তাহলেই হয়তো পাকিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের ফলটা নিজেদের পক্ষে আনা সম্ভব হবে।
কিন্তু দুই দলের জন্যই আতঙ্কের নাম হয়ে আছে প্রথম সেশন। শুক্রবার প্রথম সেশনে বাংলাদেশ দল হারিয়েছে টপ অর্ডারের চার ব্যাটার। দ্বিতীয় দিন প্রথম সেশনে অবিচ্ছন্ন থাকা লিটন-মুশফিকদের বিদায় করে ৩৩০ রানে থামিয়ে দেয় পাকিস্তানের বোলাররা। ওইদিন বাকি সময়টায় কোনও উইকেট না হারিয়ে ১৪৫ রান করে সফরকারীরা। আজ (রবিবার) তৃতীয় দিন মাঠে নেমে প্রথম সেশনে পাকিস্তান হারায় ৪ উইকেট। তাইজুল ইসলামের বিষাক্ত স্পিনে নীল পাকিস্তান ২৮৬-তেই থেমে যায়। ৮৩ রানের লিড পাওয়া বাংলাদেশ চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনটা কীভাবে পার করে, সেটাই দেখার।
নতুন বলে বাংলাদেশের টপ অর্ডারের দুর্বলতা দীর্ঘদিনের। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও একই সমস্যায় পড়ে টপ অর্ডার। আগের ইনিংসে ৪৯ রানে ৪ উইকেট হারানো বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে আরও বাজে অবস্থায় পড়ে যায়। শাহীন আফ্রিদি ও হাসান আলীর তোপে ২৫ রান তুলতেই ফিরে যান বাংলাদেশের চার ব্যাটার। ইনিংসের শুরুতেই ফিরে যান ওপেনার সাদমান ইসলাম। শাহীনের লেগ স্টাম্পের একটি বল ফ্লিক করতে গিয়ে ব্যাটে বল সংযোগ করতে না পেরে এলবিডব্লিউর শিকার হন। রিভিউ নিলেও থার্ড আম্পায়ার ফিল্ড আম্পায়ারের ‘কল’ বহাল রাখেন। সাদমানের বিদায়ের পর নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হক রানের খাতা না খুলেই আউট। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসে অধিনায়ক মুমিনুল দলের জন্য কিছুই করতে পারেননি।
এদিকে বেশ কিছুক্ষণ টিকলেও প্রথম বল থেকেই অস্বস্তিতে ছিলেন ওপেনার সাইফ হাসান। ফুটওয়ার্ক, টেকনিক, পেস আক্রমণের বিপক্ষে অদক্ষতা, আত্মবিশ্বাসহীনতা- সবকিছুই গত দুই ইনিংসে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে তার ব্যাটিংয়ে। দুই ইনিংসেই শাহীনের বাউন্সার বুঝতে না পেরে আনাড়ি ব্যাটারের মতো আউট হয়েছেন তিনি।
২৫ রানে টপ অর্ডারের চার ব্যাটারকে হারিয়ে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশকে টেনে তোলার চেষ্টায় মুশফিক ও অভিষিক্ত ইয়াসির। তৃতীয় দিন শেষে দুজন মিলে ১৪ রান যোগ করে অবিচ্ছিন্ন আছেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে স্কোরবোর্ডে লড়াইয়ের পুঁজির জন্য প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও একই দায়িত্ব নিতে হবে মুশফিককে।
এর আগে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে নিজেদের প্রথম ইনিংসে বিনা উইকেটে ১৪৫ রান করা পাকিস্তান তৃতীয় দিনের শুরুতেই এক রান যোগ করতে দুই উইকেট হারায় পাকিস্তান। ওভারের পঞ্চম বলে তাইজুলের বলে এলবির শিকার হন ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক। তিনি ১৬৬ বলে ২টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫২ রান করেন। পরের বলেই নতুন ব্যাটার অভিজ্ঞ আজহার আলীকে মাঠ ছাড়া করেন তাইজুল। এই ডানহাতিকে শূন্য রানে এলবির ফাঁদে ফেলেন টাইগার স্পিনার।
এরপর ব্যাট করতে নামা বাবর আজমকে সরাসরি বোল্ড করে মাঠ ছাড়া করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। পাকিস্তান অধিনায়ক ৪৬ বলে ১০ রান করেন। অন্যপ্রান্তে অবশ্য টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নেন আবিদ। বাবর ফেরার পর ব্যাট করতে নামা ফাওয়াদ আলমকে নিজের তৃতীয় শিকার বানান তাইজুল। প্রতিপক্ষের ১৮২ রানের মাথায় এই বাঁহাতিকে উইকেটরক্ষক লিটনের ক্যাচে পরিণত করেন এই স্পিনার। এরপর মোহাম্মদ রিজওয়ানকে দারুণ এক ডেলিভারিতে ফেরান এবাদত হোসেন। ডানহাতি এই পেসারের ইনসুইং বুঝতে না পেরে এলবি হন পাকিস্তানের উইকেটরক্ষক-ব্যাটার (৫)।
শতক হাঁকানো আবিদকে ফিরিয়ে নিজের চতুর্থ উইকেট তুলে নেন তাইজুল। পাকিস্তানি ওপেনার ২৮২ বলে ১২টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৩৩ রান করে বিদায় নেন। এরপর হাসান আলীকে ১২ রানে ফিরিয়ে ক্যারিয়ারে নবমবারের মতো পাঁচ উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েন তাইজুল। এরপর পাকিস্তানি ব্যাটার সাজিদ খানকে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান এবাদত। নুমান আলীকে (৮) ফিরিয়ে ষষ্ঠ উইকেট তুলে নেন তাইজুল। এরপর ফাহিম আশরাফকে (৩৮) ফিরিয়ে নিজের সপ্তম উইকেট তুলে নেন বাঁহাতি স্পিনার। ফলে সব উইকেট হারিয়ে ফেলে পাকিস্তান।
Discussion about this post