এম, সারওয়ার
ছুটিতে থাকা মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য গত ২৯ মার্চ রোববার থেকে সংসদ টিভিতে শুরু হয়েছে ডিজিটাল পাঠদান। আজ ৪ দিন হলো ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়,আইসিটি সপ্তম শ্রেণির আইসিটি, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়,বিজ্ঞান, অষ্টম শ্রেণির গণিত, ইংরেজি , আইসিটিএবং নবম শ্রেণির গণিত, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়,রসায়ন,আইসিটি বিষয়ের ক্লাস প্রচার করা হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এসব ক্লাস দেখানো হয়। পাঠদানের এ উদ্যোগে আনন্দিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।এ ছাড়া দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ক্লাসগুলো সংসদ টিভিতেই পুনঃপ্রচার করা হয়।
তাছাড়া ক্লাসসমূহ ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’ ফেসবুক পেজ ও শিক্ষাবিষয়ক অনলাইন পোর্টাল শিক্ষার আলোতে www.shiksharalo.net পাওয়া যাচ্ছে।
শিক্ষক ক্লাস শেষে পাঠদানকৃত বিষয়ের ওপরে বাড়ির কাজ দিচ্ছেন। প্রত্যেকটি বিষয়ের জন্য শিক্ষার্থীরা আলাদা খাতায় তারিখ অনুযায়ী বাড়ির কাজ সম্পন্ন করবে এবং স্কুল খোলার পর সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের কাছে জমা দেবে। বাড়ির কাজের ওপর প্রাপ্ত নম্বর ধারাবাহিক মূল্যায়নের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে।ফলে এটি আরও গুরুত্ব পেয়েছে।
দেশে করোনা ভাইরাস বিস্তারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটিকালীন মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সংসদ টিভিতে ক্লাস পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’নামের এই যুগান্তকারী উদ্যোগে এক কোটিরও বেশী মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী ফিরেছে পড়ার টেবিলে।করোনার দূর্যোগে লেখাপড়ামুখী রাখতে সরকারের এই বিশেষ উদ্যোগ ইতোমধ্যে সারাদেশে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। স্বাগত জানিয়েছেন অভিভাবক,শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
তবে কিছু সমস্যার কথাও উঠে এসেছে ‘শিক্ষার আলো’র অনুসন্ধানে।প্রথমদিন ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বিরক্তির কারণ হয়েছে অনেকেরই।সাদাবোর্ডে লেখা দেখা না যাওয়ার অভিযোগও ছিল।অভিযোগ ছিল প্রদত্ত রুটিনের সাথে প্রচারিত ক্লাসের সময়ের গরমিলের।কিন্তু পরদিন্ই তা আমলে নেয় কর্তৃপক্ষ । বাদ দেয়া হয় ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এবং বোর্ডের লেখা জুম করে বড় করে দেখানো হয়।রুটিন অনুসারে ক্লাসও চলছে।
তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যা তৈরি করেছে হোয়াইট বোর্ডের ব্যবহার। কারণ টিভির সামনে বসা শিক্ষার্থীরা হোয়াইট বোর্ডে শিক্ষকের লেখা কোনো টেক্সটই দেখতে পারেনি। জুম করা হলেও অনেক লেখা দেখতে সমস্যা হচ্ছে।এ বিষযটির আশু সমাধান চেয়ে অনেক অভিভাবক লিখেছেন্।
দেশের বিভিন্ন স্থানের অভিভাবক জানিয়েছেন, সন্তানকে নিয়ে নির্দিষ্ট ক্লাসের পাঠ প্রচারের সময় টেলিভিশনে বসলেও সংশ্নিষ্ট এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় তারা তা দেখতে পাননি। অনেক এলাকায় কেবল সংযোগ না থাকায় শিক্ষার্থীরা এ ক্লাস থেকে বঞ্চিত হয়েছে।তাই্ ইউটিউবে ভিডিও ক্লাসগুলো আপলোড করার দাবী উঠেছে।
এ বিষয়ে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, ছুটিতে থাকা শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ব্যবস্থা করায় সরকারকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। তবে এ ক্লাসগুলো বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) প্রচার করা হোক। কারণ দেশের অনেক এলাকায় কেবল সংযোগ নেই এবং বহু দরিদ্র পরিবারে এ সংযোগ নেওয়ার সামর্থ্য নেই।
শিক্ষার্থীদের কাছে আরও একটি বড় সমস্যা বাড়ীর কাজ। বাড়ীর কাজ লিখে নেয়ার জন্য সময় পাওয়া য়াচ্ছে খুবই কম।বিশেষ করে গণিত ক্লাসে ভীষন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।অভিভাবক।অংকগুলো ব্যতিক্রম নিয়মে করলে ভাল হত। একটা অংক কমপক্ষে ২ নিয়মে করলে ভাল হত। এমনটি বলেছেন অভিভাবক হাফিজুর রহমন খান্।অনুশীলনীতে সৃজনশীল প্রশ্ন আছে। বাড়ির কাজ হিসেবে এই প্রশ্নগুলো দিলে বন্ধের সময় এই প্রশ্নের উত্তর গুলো পড়া এবং লেখা হয়ে যেতো- এমনটা মন্তব্য করেছেন অপরাজিতা মুগ্ধ।
তারিখ, শ্রেণি, বিষয়, অধ্যায় অনুযায়ী বাড়ির কাজগুলো স্টাটাস আকারে প্রদান করা যেতে পারে। এছাড়া ওয়েবসাইটে নোটিস আকারে বাড়ির কাজগুলো পৃথক ভাবে তুলে ধরলে শিক্ষার্থী অভিভাবকগণ উপকৃত হবে বলে জানান অভিভাবক নাইম মিয়া।
অন্যদিকে ক্লাসের সময়সীমা বা্ড়ানোর দাবী জানিয়েছেন অনেকে। এত অল্প সময়ে দ্রুত পাঠদান অনগ্রসর ছাত্রছাত্রীরা সহজে বুঝে উঠতে পারছেনা বলে জানান শিক্ষার্থী সায়মনসহ বেশ কজন। শিক্ষার্থীদের সরাসরি অংশগ্রহণ না থাকাতে পাঠদানগুলো ভীষণরকমের লেকচারকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন জায়িব শাকিল।শিক্ষক যা পাঠ দিচ্ছেন ছাত্রছাত্রীরা কতটুকু গ্রহণ করতে পারছে তা বুঝার জন্য একটি প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকা জরুরী বলে মনে করেন অধ্যক্ষ জাকির হোসেন।ফেসবুক প্রযুক্তির মাধ্যমে এটি খুব সহজেই সম্ভব বলে জানান তিনি।তাৎক্ষনিক প্রশ্ন করতে পারলে পুরো প্রকল্পটি আরও সফল হতো এতে কোন সন্দেহ নেই।
এ ছাড়াও নবম শ্রেণীর রসায়ন বিষয়ে ক্লাস হলেও পদার্থ ও জীববিজ্ঞানের কোন ক্লাস এখনও হয়নি। হয়নি দশম শ্রেণীর কোন ক্লাস।এ বিষয়েও শিক্ষার্থীদের বেশ উৎকন্ঠা রয়েছে।তার চেয়েও উৎকন্ঠায় রয়েছে ইংরেজী মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা্। ঘরে বসে হাঁপিয়ে ওঠা এসব শিক্ষার্থীরা জানতে চায়, তাদের ক্লাস কখন শুরু হবে।উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরাও আশা করে আছে তাদের জন্যও ক্লাসের আয়োজন করা হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক এ প্রসংগে বলেন, বিটিভির মতো স্যাটেলাইট সংযোগ ছাড়াই সংসদ টিভির এই পাঠদান দেখা যাবে। কোথাও দেখা যাচ্ছে না এমন অভিযোগ পেয়েছি। তবে সে বিষয়টিও সমাধান করা হচ্ছে।বিশ্বব্যাপি এই দূর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ঘরে বসে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য দ্রুত সময়ে কিছু ক্লাস নিয়ে আমরা উপস্থিত হয়েছি। সম্মানিত অভিভাবকবৃন্দের মূল্যবান পরামর্শ আমলে নিয়ে আমরা দ্রুত এসব বিষয়ে সমাধানে সচেষ্ট হবো।
Discussion about this post