শিক্ষার আলো ডেস্ক
‘বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করেছেন নিজের পয়সা দিয়ে, চাঁদাবাজি করেননি। আজকে ছাত্রনেতারা যে গাড়িতে চড়ে, আমি ৪৬ বছর চাকরি করেও সে গাড়িতে চড়তে পারিনি।
আমি দেখলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা হলের ছাত্রনেতার পেছনে ৫০ জন প্রটোকল দিচ্ছে। যারা প্রটোকল দিচ্ছে, তাদের কি মেরুদণ্ড নেই? এটা ছাত্র রাজনীতির পরিবর্তন। এ পরিবর্তন কি বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন?’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) আলাওল হল কর্তৃক স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আয়োজিত ‘একজন বঙ্গবন্ধু, একটি স্বাধীনতা যুদ্ধ ও একটি দেশ’ শীর্ষক পাবলিক লেকচারে এসব কথা বলেন চবির বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন।
অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবনী পড়ে কিংবা আমাদের সমসাময়িক রাজনীতিতে কখনো টেন্ডার নামে কোনো কিছু শুনিনি। আগে বাসে উঠলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শুনলে মানুষ বসতে দিতো। কিন্তু এখন ছাত্র শুনলে মানুষ পকেটে হাত দেয়, কিছু নিয়ে যায় কিনা! নাকি মারধর করে এ ভয়ে থাকে মানুষ। এগুলো বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বিরোধী। বঙ্গবন্ধু ছাত্র হয়েও অনেক কিছুর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি রাজনীতি, মিছিল, পত্রিকা বিক্রি, মানুষের সেবা, ত্রাণ বিতরণ করেছেন এবং তিনি নেতাও হয়েছেন। একজন ছাত্র হিসেবে আগে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। কোনো না কোনো পেশায় থেকে এরপর রাজনীতি করতে হবে। নেতার কথায় আরেকজনের উপর হামলা করে কোনো লাভ নেই। ছাত্র থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধু যে রাজনীতি করেছেন, সেটাই ছাত্র রাজনীতির আদর্শ।
তিনি বলেন, আমি এখন ছাত্রদের দেখে ভয় পাই। তাদের দাবি-দাওয়া আচার-আচরণ দেখে আমি খুব ভীত। ছাত্র রাজনীতি করে এসে আমি যদি ছাত্রদের ভয় করি, তাহলে অন্যদের কি অবস্থা। গত ৩০ বছরে ছাত্ররা শিক্ষা সংক্রান্ত কোনো দাবি জানিয়েছে? কোনো ঐতিহ্য আছে ছাত্র আন্দোলনের? কত গরীব ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, তাদেরকে মেরে ফেলা হচ্ছে। যারা এগুলো করেছে, তাদের কি উন্নতি হয়েছে জরিপ করা প্রয়োজন। এগুলো বঙ্গবন্ধুর আদর্শ না। ১৯৪৭ সালে বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার এক-দুই বছর পর বললেন, আমি আর ছাত্র রাজনীতি করবো না। এখন তো যুগযুগ ধরে সবাই ছাত্র রাজনীতি করে। আমাদের সময় যারা ছাত্র রাজনীতি করেছে, তারা পড়াশোনা শেষ হওয়ার পরপরই ছাত্র রাজনীতি থেকে বেরিয়ে যেতেন। কিন্তু এখন এটা দেখছি না।
‘বঙ্গবন্ধু ছাত্র থেকে প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগ পর্যন্ত ১২ বার জেলে গিয়েছেন। ২৫ বছরের মধ্যে ১৩ বছর জেল খেটেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করেছেন নিজের পয়সা দিয়ে, চাঁদাবাজি করেননি। আজকে ছাত্রনেতারা যে গাড়িতে চড়ে, আমি ৪৬ বছর চাকরি করেও সে গাড়িতে চড়তে পারিনি। আমি দেখলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা হলের ছাত্রনেতার পেছনে ৫০ জন প্রটোকল দিচ্ছে। যারা প্রটোকল দিচ্ছে, তাদের কি মেরুদণ্ড নেই? এটা ছাত্র রাজনীতির পরিবর্তন। এ পরিবর্তন কি বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন?’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন চবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান, আলাওল হলের প্রভোস্ট ড. নঈম উদ্দিন হাসান আওরঙ্গজেব চৌধুরী ও চবির প্রক্টরিয়াল বডি।
Discussion about this post