অনলাইন ডেস্ক
শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় নেমে গাড়ি ভাঙা ছাত্রদের কাজ নয়, এটা কেউ করবেন না। দয়া করে যার যার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যান, লেখাপড়া করেন।’
বুধবার (১ ডিসেম্বর) বিজয়ের মাসের প্রথম দিন বাংলাদেশ শিশু অ্যাকাডেমিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ম্যুরাল নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় রাজধানীর ধানমন্ডিতে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ১২ তলাবিশিষ্ট অত্যাধুনিক ‘জয়িতা টাওয়ার’ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীদের বলবো, দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এখন খুলে গেছে। এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরতে হবে। আমরা ভ্যাকসিন দিচ্ছি। তবে নতুন করে আবারও ওয়েভ আসতে পারে। তখন আবারও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই এ সুযোগে সবাইকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে গিয়ে শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘লেখাপড়া শিখে আজকের শিশুদের আগামীতে দেশের জন্য কাজ করতে হবে। ভবিষ্যতের পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আজকের ছেলেমেয়েদের প্রস্তুত করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় যারা দোষী তাদের খুঁজে বের করে অবশ্যই শাস্তি দেওয়া হবে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ ব্যাপারে অনেক সতর্ক। সঙ্গে সঙ্গে অপরাধীদের খুঁজে বের করা হয়েছে। তা ছাড়া সবকিছুর ভিডিও ফুটেজও রয়েছে। তাই যেকোনও সময় যেকোনও অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে তাদের ধরে ফেলা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করেই সেটা করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে এই গাড়ি ভাঙচুর এবং আগুন দেওয়ার ঘটনা যারা ঘটাবে তাদের খুঁজে বের করা হবে, শাস্তি দেওয়া হবে। কেননা, যে গাড়িতে আগুন দেওয়া হচ্ছে সে গাড়িতে যদি কেউ মারা যায় বা পুড়ে যায়, এর জন্য কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। এ কথাও মাথায় রাখতে হবে।’
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে পর পর পথচারী নিহত হওয়ার ঘটনা যথাযথভাবে তদন্তেরও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি এটুকুই চাই, দেশের যে উন্নয়ন করে দিচ্ছি, সেটাকে ধরে রেখে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আজকের শিশুরা আগামী দিনের সোনার বাংলাদেশ গড়ার সৈনিক হবে।’
আজকের শিশুদের লেখাপড়া করা এবং বাবা-মা-অভিভাবকদের আদেশ মান্য করার পাশাপাশি রাস্তাঘাটে চলাচল করতে ট্রাফিক আইন মেনে চলারও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এটা সবার জন্য প্রযোজ্য, রাস্তাঘাটে চলার সময় সতর্ক থাকতে হবে। ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে। রাস্তার যেকোনও স্থান থেকে পারাপার হওয়া যাবে না। নির্দিষ্ট স্থান দিয়ে পারাপার হতে হবে। কেননা, একটা চলমান গাড়ি ব্রেক ধরলে তার থামতে সময়ের প্রয়োজন হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হঠাৎ দৌড় দেবে আর দুর্ঘটনা ঘটবে, দুর্ঘটনা ঘটলেই রাস্তায় লোক নেমে গাড়ি ভাঙা, গাড়িতে আগুন দেওয়া, পোড়ানো; এটা কী ধরনের কথা। একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে, তখন তাকে বাঁচানোর চেষ্টা না করে, তার সেবা না করে, লাঠিসোটা নিয়ে নেমে পড়লো গাড়ি ভাঙা ও আগুন দেওয়ার কাজে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমার এখানে একটা প্রশ্ন এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমগ্র জাতির কাছেই, এই যে দুর্ঘটনার পর আগুন দেওয়া শুরু হলো, এ গাড়িতে কি নারী-শিশু বা ছাত্র-ছাত্রী নেই? ওই আগুনে যারা পুড়বে, আহত হবে বা মারাও যেতে পারে, তার দায়িত্ব কে নেবে? খুব স্বাভাবিক বিষয় হচ্ছে, যারা আগুন দেবে তাদের ওপরই দায় বর্তায়। তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে সেভাবেই ব্যবস্থা নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘একটা গাড়িতে দুর্ঘটনা ঘটে একজন মারা গেলো বলে সেখানে আরও ২৫টি গাড়ি ভাঙা এবং আগুন দেওয়া, এটা কোন ধরনের কথা।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাই আমি বলবো, কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। আর গাড়ি চালকদেরও আমি বলবো, তাদেরও সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালাতে হবে।’ জনবহুল এই দেশে গাড়ি চালানোর জন্য এ সময় সঠিকভাবে প্রশিক্ষণের ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন এবং তার সরকার উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রেখেছে বলেও জানান।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বক্তৃতা করেন। বাংলাদেশ শিশু অ্যাকাডেমির চেয়ারপারসন লাকী ইনাম এবং জয়িতা ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফরোজা খানও বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে জাতির পিতার ম্যুরাল এবং ‘জয়িতা টাওয়ার’ এর ওপর দু’টি ভিডিও চিত্রও পরিবেশিত হয়।
Discussion about this post