তানভীর আহম্মেদ
ভেটেরিনারি শিক্ষা সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষ ততটা অবগত নয়। অথচ, দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তায় ভেটেরিনারিয়ানরা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা তারা জানেন না।
প্রাণিসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের মানুষের প্রাণীজ আমিষের ৭৬ শতাংশ পূরণ করতেছে এই ভেটেরিনারিয়ানরাই। এছাড়াও, মানুষের জীবনের প্রয়োজনে ঔষধ আবিষ্কার থেকে শুরু করে বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণ, রোগের প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কার এবং প্রতিকার মূলক বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছে ভেটেরিনারিয়ানরা।
অথচ, কৃষি প্রধান দেশ হয়েও বাংলাদেশে পেশা হিসাবে ভেটেরিনারিকে খুব একটা ভালোভাবে দেখা হয়না। কিন্তু, এই পেশায় কেউ আসতে চাইলে তার ক্যারিয়ার কতটা উজ্জ্বল হবে তা বলার বাহিরে। শুধু প্রাণীর চিকিৎসা ও লালন পালন করে প্রাণীকে সাহায্য করাই নয়, দেশের মানুষের স্বাস্থ্য এবং খাদ্য নিরাপত্তার মতো মহান কাজ করারও সুযোগ তৈরি হয়। প্রাণীর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা বা চিকিৎসা করার সুযোগ, বিদেশে স্কলারশিপ, আকর্ষণীয় বেতন, সুস্থ সমাজ গড়ায় সহায়তা করা, নিজস্ব দক্ষতাকে কাজে লাগাতে পারা, স্বাধীন ভাবে কাজ করার সুযোগ, চাকরির বাজারে শক্তিশালী অবস্থানসহ দেশের যেকোন জায়গায় উচ্চতর ক্যারিয়ার গড়ার অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে ভেটেরিনারিয়ানদের।
তবে, বাংলাদেশে ভেটেরিনারি শিক্ষার ইতিহাস খুব বেশি দিনের নয়। ১৯৬১ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদ চালুর মাধ্যমে এ শিক্ষার সূচনা হয়। ইতোমধ্যে এই সেক্টরের গুরুত্ব অনুধাবন করে ১১টি প্রতিষ্ঠানে ভেটেরিনারি শিক্ষা চালু হয়েছে।
এরমধ্যে, ২০১৬ সালের মে মাসে দেশের প্রথম ও একমাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গবি)। বেসরকারি পর্যায়ে ভেটেরিনারি শিক্ষা হিসাবে সবার আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু ছিল প্রতিষ্ঠানটি। সব ছাপিয়ে অন্যান্য ১০টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ন্যায় এগিয়ে চলছে ৩২ একর জমির উপন প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি।
শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) মাত্র ২৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন দেয়। তবে প্রতিষ্ঠার মাত্র দেড় বছরেই ভেটেরিনারি শিক্ষায় যাবতীয় প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন শেষে ইউজিসি আসন সংখ্যা ২৫-৫০ এ উন্নীত করে। বর্তমানে ১১টি ব্যাচে তিনশতের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। এবং শিক্ষক রয়েছেন ১৮ জন।
এছাড়া, প্রতিষ্ঠানটিকে অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোঃ মোতাহার হোসেন মন্ডল (সাবেক উপাচার্য হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক ডিন ভেটেরিনারি অনুষদ ও বিভাগীয় প্রধান, প্যারাসাইটোলজি বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ) অত্যান্ত সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
মূল ক্যম্পাসে সুসজ্জিত ক্লাসরুম, আধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ পরীক্ষাগার, গবেষণাগারের সাথে ৩ একর জায়গা জুড়ে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে সুবিশাল পোল্ট্রি ও ডেইরি ফার্ম, হাসপাতাল, অপারেশন থিয়েটার এবং ব্যবহারিক শিক্ষা কার্যক্রম কক্ষ। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতের সু-সজ্জিত নিজস্ব লাইব্রেরিসহ সব সুবিধাই পাচ্ছে এখানকার শিক্ষার্থীরা।
২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি স্থাপন করা ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতালের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নতুন নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করছে যা তাদের ভেটেরিনারি শিক্ষার প্রসারে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করছে। এটির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ব্যবহারিক বিষয়ে হাতে-কলমে প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জন করতে পারছে। পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষ এই হাসপাতালের মাধ্যমে স্বল্প মূল্যে পশুপাখির চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে।
ভেটেরিনারি শিক্ষার মানদণ্ড সঠিক রাখার নিমিত্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বকনিষ্ঠ এ অনুষদকে চারটি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে- প্রি-ক্লিনিক্যাল, প্যারা ক্লিনিক্যাল, ক্লিনিক্যাল ও অ্যানিম্যাল প্রোডাকশন। বিভিসির (বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল) স্ট্যান্ডার্ড মেনে প্রণীত সিলেবাসে শিক্ষার্থীদের মোট ১৯২ ক্রেডিট সম্পন্ন করতে হয়। রয়েছে ৬ মাসের বাধ্যতামূলক ইন্টার্নশিপ।
বছরে দুই সেশনে শিক্ষার্থীরা এখানে ভর্তির সুযোগ পাবে, এপ্রিল সেশন ও অক্টোবর সেশন। ভর্তির জন্য পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানসহ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে নূন্যতম জিপিএ ২.৫ থাকতে হবে। পাঁচ বছর মেয়াদী এই কোর্সের মোট খরচ ৫ লাখ টাকা। সফলভাবে শিক্ষাকার্যক্রম শেষ করে শিক্ষার্থীরা বিভিসি থেকে রেজিস্ট্রেশন পাবে।
ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন ০১৩০৩১৫৩৪২৮ এ নাম্বারে।
লেখক-তানভীর আহম্মেদ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়
Discussion about this post