শিক্ষার আলো ডেস্ক
করোনার কারণে সরকার আরোপিত বিধিনিষেধ উঠে গেলে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের অনলাইন বদলি শুরুর কথা ছিল। সেই মোতাবেক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সফটওয়্যার প্রস্তুত করে। কিন্তু প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারণে পাইলটিং শুরু করা হয়নি। দুই বছর প্রাথমিক শিক্ষক বদলি বন্ধ থাকার পর আগামী জানুয়ারিতে বদলির পাইলটিং শুরু হতে যাচ্ছে।
কথা ছিল গত মার্চ মাসে প্রথমে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় বদলি কার্যক্রমের পাইলটিং শুরু হবে। তারপর পর্যায়ক্রমে সারাদেশের সব শিক্ষকদের বদলি কার্যক্রম চলবে অনলাইনে।
মন্ত্রণালয় জানায়, করোনা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন কারণে পাইলটিং কার্যক্রমই শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে বুধবার (৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘অনলাইনে বদলি কার্যক্রম উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে। আগামী জানুয়ারিতে বদলি কার্যক্রমের পাইলটিং শুরু হবে।’
এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, ‘সকল প্রস্তুতি আগেই শেষ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পাইলটিং কার্যক্রম পরিচালিত হবে। পাইলটিংয়ের পর বদলি কার্যক্রম চলবে।’
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের এপ্রিলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষক বদলির উদ্যোগ নেয়। প্রাথমিক শিক্ষক বদলিতে বিগত সময় নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে ২০২০ সাল থেকে অনলাইন শিক্ষক বদলির ঘোষণা দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই সময়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন।
সেই অনুযায়ী সফটওয়্যার প্রস্তুত করার কাজ শুরু হয়। কিন্তু সফটওয়্যার প্রস্তুত করতে সময় প্রয়োজন হওয়ায় ২০২০ সালে শিক্ষক বদলি বন্ধ রাখা হয়। পরে সফটওয়্যার প্রস্তুত করা হলেও করোনার কারণে তা পিছিয়ে যায়। গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পরও গত তিন মাসে পাইলটিং শুরু হয়নি।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষক বদলি কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ (আইএমডি)। শিক্ষকদের ভোগান্তি লাঘবে এই সেবা চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
শিক্ষকদের হয়রানি ও বদলি কার্যক্রম দুর্নীতিমুক্ত করতে গত বছর অক্টোবর থেকে অনলাইনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি শুরু করার ছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে তা পিছিয়ে যায়।
শিক্ষক বদলির বিদ্যমান পদ্ধতির ধাপগুলো বিশ্লেষণ করে সেবা দিতে বাস্তব সমস্যা, প্রতিবন্ধকতা, ধীরগতি এবং পদ্ধতিগত শূন্যতা নির্ণয় করা করা হয়। শিক্ষকরা তাদের শিক্ষক পিন (ই-প্রাইমারি সিস্টেম) ব্যবহার করে ওটিপি অথেনটিকেশনের মাধ্যমে লগইন করে নিজস্ব ইউআই (ইউজার ইন্টারফেস)-এ প্রবেশ করে আবেদন করতে পারবেন।
শিক্ষক এবং বিদ্যালয়ের তথ্যাদি আগে থেকেই ডাটাবেজে সংরক্ষণ থাকায় শুধু বদলির ক্ষেত্রে আন্তঃউপজেলা, আন্তঃজেলা, আন্তঃবিভাগ এবং আন্তঃসিটি করপোরেশন এবং বদলির কারণ সিলেক্ট করে আবেদন করা যাবে। মাসিক রিটার্ন, চাকরি বইয়ের ফটোকপি ইত্যাদি সংযুক্তির প্রয়োজন হবে না।
তবে ক্ষেত্রমতে স্বামী/স্ত্রীর কর্মস্থলের বা স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণপত্র, বদলির কারণ কিংবা প্রেক্ষাপটের আলোকে প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র সংযুক্ত করতে হতে পারে। বিদ্যমান বদলির নীতিমালার শর্তাবলীর আলোকে এমনভাবেই সফটওয়্যারে সবকিছু সেট করা হয়েছে। যাতে অযাচিত কিংবা বদলির শর্ত পূরণ করে না এমন কেউ আবেদন করতে না পারেন। শূন্যপদের সকল তথ্য ডাটাবেজে থাকায় শিক্ষকরা আবেদনের সময়ই বিদ্যমান সকল শূন্যপদ দেখতে পাবেন এবং এক বা একাধিক বিদ্যালয় বাছাই করে আবেদন করতে পারবেন।
সঠিকভাবে আবেদন সাবমিট করলে আবেদনকারী আবেদনের একটি পিডিএফ কপি এবং অ্যাপ্লিকেশন ট্র্যাকিং নম্বর সম্বলিত সিস্টেম জেনারেটেড একটি রিসিপ্ট পাবেন এবং মোবাইলে নোটিফিকেশন পাবেন। তাছাড়া শিক্ষক পিন ব্যবহার করে লগইন করে যেকোনও সময় নিজের ড্যাশবোর্ড থেকে আবেদনের বর্তমান অবস্থান জানতে পারবেন। সফটওয়্যারে প্রতিটি ধাপে সময় নির্ধারণ করা থাকবে। ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আবেদনটি অগ্রসর হতে থাকবে এবং কোনও ধাপে অতিরিক্ত সময়ক্ষেপণের সুযোগ থাকবে না।
আবেদনকারীর বদলির প্রেক্ষাপটের আলোকে সিস্টেম থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্কোর নির্ধারিত হবে। ফলে আবেদনকারী একাধিক হলে অগ্রাধিকার তালিকাও সিস্টেম থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হবে। ফলে একদিকে যেমন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে অন্যদিকে অযাচিত তদবির ও চাপ কমে যাবে।
Discussion about this post