শিক্ষার আলো ডেস্ক
মা-বাবার ডিভোর্স হয়ে গেছে কয়েক বছর আগেই। এরপর মায়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিল মেয়ে বেলী আক্তার (১৫)। পড়াশোনাও নিউ ইয়র্কের স্কুলে, নবম শ্রেণিতে। ৩ ডিসেম্বর মায়ের সঙ্গে দেশে বেড়াতে এসেছেন। উঠেছেন খালার বাসায়। বাবার সঙ্গে বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় বেপরোয়া ট্রাকের চাকায় হারালেন প্রাণ। তবে মেয়েকে একা ছাড়েননি বাবা আলতাফ হোসেন। একই ট্রাকের চাকায় পরলোকে চলে গেছেন তিনিও।
শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া ডাকবাংলোর সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সড়কে বাবা-মেয়ের প্রাণহানিতে স্বজনদের মাঝে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
দুর্ঘটনার বিবরণ দিয়ে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কের ডাকবাংলো এলাকা থেকে একটি রিকশায় চাষাড়ার দিকে আসছিলেন বাবা আলতাফ হোসেন ও মেয়ে বেলী আক্তার। এ সময় উল্টোদিক থেকে আসা দ্রুতগতির একটি ট্রাক ওই রিকশাকে সামনে থেকে ধাক্কা দেয়। মুহূর্তেই সড়কে ছিটকে পড়েন বাবা-মেয়ে। এতেও বেপরোয়া ট্রাকটির গতিরোধ হয়নি। সড়কে পড়া বাবা-মেয়ের ওপর দিয়েই চলে যায় ঘাতক ট্রাক। ঘটনাস্থলেই নিথর হয়ে পড়েন তারা। আহত হন রিকশাচালকও। ট্রাকচালক দ্রুত পালিয়ে যান সেখান থেকে।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ট্রাকের চাকার নিচ থেকে বাবার এবং সড়কের পাশে পড়ে থাকা মেয়ের লাশ উদ্ধার করেন।
বেলীর খালা মাহমুদা বেগম বলেন, ‘বেলী নিউ ইয়র্কের একটি স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করতো। তার মা অ্যাডভোকেট আয়েশা রহমান সিদ্দিকার সঙ্গে নিউ ইয়র্কে বসবাস করে। তার বাবা-মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে অনেক আগেই। গত ৩ ডিসেম্বর ছুটিতে মা-মেয়ে বাংলাদেশে বেড়াতে আসে। নগরীর জামতলা এলাকায় আমার বাসায় ওঠে। শুক্রবার তাদের গ্রামে সোনারগাঁয়ের সম্ভুপুরা এলাকায় একটি বিয়ের দাওয়াতে যাওয়ার জন্য বাবা-মেয়ে রওনা দেয়। এরপরই ঘটে এ দুর্ঘটনা। এ নিয়ে পুরো পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।’
খবর শুনে ঘটনাস্থলেই ছুটে আসেন মা-সহ স্বজনরা। মেয়ে ও প্রাক্তন স্বামীর এমন করুণ মৃত্যুতে অ্যাডভোকেট আয়েশা রহমান সিদ্দিকার কান্না কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছিল না। বিলাপ করতে করতে বলছেন, ‘একমাত্র শখের কথা চিন্তা করে মেয়েকে নিয়ে আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছি। আমি এখন কী নিয়ে বাঁচবো? আমার তো আর কোনও অবলম্বন রইলো না।’
ফতুল্লা মডেল থানায় এসআই মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর জানান, লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ফতুল্লা মডেল থানার ওসি রাকিবুজ্জামান জানান, এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। ঘাতক ট্রাকটি আটক করা হয়েছে। ট্রাকের চালককে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
Discussion about this post