আহমেদ শরীফ
জেদি, একগুঁয়ে সন্তানকে সামলাতে গিয়ে প্রায় সব বাবা-মা হতাশ হয়ে পড়েন। তাদেরকে পড়ার কথা বললে এমনকি গোসল করা, খাওয়া, ঘুমাতে যাওয়ার কথা বললেও তারা শুনতে চায় না। এ নিয়ে প্রতিদিনই লড়তে হয় বাবা-মাকে। এতে করে তাদের অজান্তেই সেসব জেদি শিশু আরও জেদি হয়ে ওঠে। তারা নিজেদের মতো করেই চলতে চায়। এমন জেদি শিশুদের নিয়ন্ত্রণ করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো তাদেরকে এটা বুঝতে দেওয়া যে তাদের আচরণের কোনও মূল্য নেই। এরই মাঝে তাদের ভালো আচরণগুলোকে উৎসাহিত করতে হবে। জেদি শিশুদের নিয়ন্ত্রণ করার কিছু কৌশল আছে।
শুনতে চেষ্টা করুন
আপনি যদি চান আপনার শিশু আপনাদের কথা অনুযায়ী চলবে, তাহলে প্রথমে তার কথা শুনতে হবে। সে যখন বুঝবে আপনারা তার কথা শুনছেনই না, তখন সে আরও জেদি হয়ে উঠবে। সে কী করতে চাইছে বা কী করতে চাইছে না, তা শুনে তার সাথে সুন্দরভাবে কথা বলুন।
জোর করবেন না
কোনও ব্যাপারে আপনার জেদি শিশুকে জোর করবেন না। এতে উল্টো তার মাঝে ‘কাউন্টার উইল’ তৈরি হবে, যা জেদি শিশুদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এই আচরণে জেদি শিশু স্বভাবজাত কারণে বিরোধিতা করবে। ধরুন রাতে ঘুমাতে না গিয়ে টিভি দেখছে সে, তখন আপনি তাকে বকাঝকা না করে সে কি দেখছে তা বুঝতে তার পাশে বসুন। সে যখন বুঝবে আপনি তার পছন্দের কদর করছেন, তখন সে ধীরে ধীরে আপনার কথা শুনবে।
পছন্দ বেছে দিন
একগুঁয়ে শিশু যখন তার কথা মতোই চলে, তখন তাকে আপনার পথে আনতে কিছু ‘পছন্দ’ বেছে দিন। সে যদি রাতে ঘুমাতে যেতে না চায়, তাহলে শান্ত গলায় তাকে বলুন বিছানায় শুয়ে সে পছন্দের গল্পের বই পড়তে পারবে। কোথাও বেড়াতে যাওয়ার সময় ওয়ারড্রোব থেকে তাকে নিজের পছন্দ মতো ড্রেস বেছে নিতে বলবেন না, এতে সে বিভ্রান্ত হয়ে রেগে উঠতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনি কয়েকটি ড্রেস তার সামনে রেখে বলুন সে কোনটা বেছে নিতে চায়। এতে তার রাগ অনেকটাই কমবে।
শান্ত থাকুন
জেদি শিশু যখন কথা শোনে না, তখন বেশিরভাগ বাবা-মা রেগে যান। এক পর্যায়ে দু’পক্ষ অনেক সময় চিৎকার- চেঁচামেচিতে জড়িয়ে পড়ে। এটা মোটেও ঠিক না। আপনি যেহেতু বড়, তাই সব সময় মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে আপনাকে। আর নিজেকে শান্ত রাখার জন্য নিয়মিত মেডিটেশন, যোগ ব্যায়াম করতে পারেন। গান শুনতে পারেন। ঘরের পরিবেশ শান্ত রাখে এমন গান শুনুন। মাঝে মধ্যে শিশুর পছন্দের গান শুনে তার মন জয় করার চেষ্টা করুন।
তাকে বেশি সময় দিন
আপনার সন্তানকে ভালোবাসেন আপনি, তা নিশ্চিত। তবে জেদি শিশুকে একটু বেশিই ভালোবাসতে হয়। তার উপর কোনও কিছু চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। তার অনুভূতি বা ইচ্ছেকে উড়িয়ে দেবেন না, বরং তাতে সহমর্মিতা পোষণ করুন। তাকে নিজের মতো করে তার কাজ করতে দিন।
তার সাথে সমঝোতা করুন
জেদি শিশুকে কড়া কথা বলা, তাকে ধমক দিয়ে কোন কাজ করতে বলা বা নিষেধ করা উল্টো ক্ষতিকর হয়। তাই যতোটুকু ভালো ব্যবহার তার সাথে করা যায়, সে চেষ্টা কেরুন। এতে এক পর্যায়ে সে নিজেও ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেকে শুধরে নেবে। তাকে পড়তে বসতে বলা, খেতে বলা অন্য কোনও কাজ করার নির্দেশ না দিয়ে বরং তার সাথে আপনিও সে কাজটা করুন। এতে তার জেদিভাব কমবে।
শিশুর সমস্যা বুঝুন
অনেক সময় পারিপার্শ্বিক কারণেও শিশুর জেদি ভাব বেড়ে যায়। তাই শিশু কোন কারণে জেদ দেখাচ্ছে তা বুঝতে চেষ্টা করুন। হয়তো তার হোমওয়ার্কের চাপ অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে একদিনেই সব হোমওয়ার্ক করতে না বলে আলাদা আলাদা করে তা শেষ করতে সহায়তা করুন তাকে।
ঘরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রাখুন
শিশুরা তাদের বাবা-মায়ের কাছ থেকেই আচরণ রপ্ত করে। ঘরে যদি আপনারা ঝগড়া করেন, তাহলে শিশুরাও তা শিখবে। সব সময় ঘরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা জরুরি। শিশুকে কোনও আবদারের ক্ষেত্রে ‘না’ বেশি বলা থেকে বিরত থাকুন। তাহলে সেও আপনার কথায় ‘না’ বলবে। শিশু বারবার কিছুর জন্য আবদার করলে তাকে সেটি দেওয়া উচিত, তবে সে যা চায় সব সময় তা এনে দিলে শিশু এক পর্যায়ে কোনও কিছু না পেলে জেদি হয়ে উঠে। সেক্ষেত্রে তার অতিমাত্রার আবদার না শোনার চেষ্টা করুন। সে কথা না শুনলে তাকে শান্তভাবে এড়িয়ে চলুন। এতে এক পর্যায়ে শিশু দমে যাবে, তেমনটাই বলেন শিশু বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র: মম জংশন
Discussion about this post