অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি আরও বেগবান করতে ৫শ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে চীনের নেতৃত্বাধীন এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি)। এ সংক্রান্ত সব প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন যে কোনো সময় বাংলাদেশ ও এআইআইবির সঙ্গে ঋণচুক্তি হবে বলে জানিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।
টিকা কেনাসহ নানা প্রকল্পে আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে এআইআইবি বাংলাদেশে অন্তত তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে জানায় ইআরডি।
ইআরডি সূত্র জানায়, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বিশ্ব ব্যাংকের মতো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী হয়ে উঠছে এআইআইবি। বাংলাদেশে সংস্থাটি ২০১৬ সাল থেকে অপারেশন শুরু করে। এ স্বল্প সময়ে ১৩টি প্রকল্পের আওতায় এরই মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে আড়াই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ চুক্তি হয়েছে। আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে আরও তিন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে সংস্থাটি। ফলে বাংলাদেশে এআইআইবির মোট বিনিয়োগ দাঁড়াবে সাড়ে পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রতি ডলার সমান ৮৫ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় এ বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়াবে ৪৬ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা।
এআইআইবির এ ঋণ বাংলাদেশকে তিন বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ (এই সময়ে ঋণের আসল বা সুদ পরিশোধ করতে হবে না) ২০ বছরে পরিশোধ করতে হবে। এ ঋণের জন্য ফ্রন্ট অ্যান্ড ফি হিসেবে দশমিক ২৫ শতাংশ এবং অব্যয়িত অর্থের ওপর বার্ষিক দশমিক ২৫ শতাংশ কমিটমেন্ট ফি পরিশোধ করতে হবে। ঋণের সুদের হার লাইবরের (লন্ডন আন্তর্জাতিক ব্যাংকের সুদ হার) সঙ্গে রেফারেন্স রেট ও ভেরিয়েবল স্প্রেড হারের সমন্বয়ে নির্ধারিত হবে।
ইআরডি সূত্র জানায়, বড় বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত এআইআইবি। প্রকল্পের পিডিপিপি (প্রাক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) প্রস্তুত হলেই বিনিয়োগ করে সংস্থাটি। এছাড়া বাজেট সহায়তাসহ নানা প্রকল্পে সব মিলিয়ে তিন বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে এআইআইবি। বিনিয়োগে আসবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতও। পাঁচটি প্রকল্পে বাংলাদেশে মোট ৩৩৫ দশমিক ০৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিতে প্রস্তুত চীনা নেতৃত্বাধীন ব্যাংকটি।
১০০ বিলিয়ন ডলার পরিশোধিত মূলধনের (পেইড আপ ক্যাপিটাল) মধ্যে এআইআইবিকে চীন সরকার একাই দিচ্ছে ৫০ বিলিয়ন ডলার। বাকি ৫০ বিলিয়ন ডলার যোগান দিচ্ছে অন্য ৫৬টি সদস্য দেশ। বিদ্যুৎ-জ্বালানি, স্বাস্থ্য, সড়ক অবকাঠামো, শিক্ষাসহ নানা খাতে এ বিনিয়োগ করছে এআইআইবি।
প্রকল্প পাঁচটির মধ্যে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (বিজিডিসিএল) এলাকায় দুই লাখ প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপনে ৫৬ দশমিক ৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দেবে সংস্থাটি। এছাড়া দেশের পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড এলাকায় গ্যাস মিটার স্থাপনে প্রকল্পের আওতায় ৩৭ দশমিক ২৫ মিলিয়ন, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) এলাকায় গ্যাস মিটার স্থাপনে ১১০ দশমিক ২০ মিলিয়ন, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিডিসিএল) এলাকায় ২ লাখ ৮৮ হাজার গ্যাস মিটার স্থাপনে ৭৯ মিলিয়ন এবং ভারতের সঙ্গে ৬৫ কিলোমিটার গ্যাস ট্রান্সমিশন পাইপ লাইন নির্মাণে ৫২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিচ্ছে এআইআইবি।
একই সঙ্গে ভারত থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেল আমদানির পর এবার রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস (আরএলএনজি) আমদানি করতে যাচ্ছে সরকার। ক্রস বর্ডার ইলেক্ট্রিসিটি ট্রেডের মতোই সীমান্তের ওপার থেকে পাইপ লাইন নির্মাণ করে এ গ্যাস বাংলাদেশে আনা হবে। ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশনের (আইওসিএল) কাছ থেকে শুরুতে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করা হবে।
বাংলাদেশে এআইআইবির বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ানো প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান জাগো নিউজকে বলেন, বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে অনেক পথ এগিয়ে গেছে। আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, রিজার্ভ ভালো, রেমিটেন্স বেড়েছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। ফলে অনেক দেশ ও উন্নয়ন সহযোগী ঋণ নিয়ে এগিয়ে আসছে। আমাদের ঋণ পরিশোধের হারও ভালো। বাংলাদেশের সক্ষমতাও বেড়েছে। পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প আমরা নিজেদের টাকায় বাস্তবায়ন করছি। এসব কারণেই মূলত এখন বাংলাদেশে সবাই বিনিয়োগ করতে চায়। সৌজন্যে-জাগো নিউজ
Discussion about this post