শিক্ষার আলো ডেস্ক
নিজস্ব জমিসহ স্থায়ী ঠিকানা জটিলতায় বাদ পড়া খুলনার মেয়ে মিম আকতারকে চাকরি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে আগের পুলিশ প্রতিবেদন সংশোধন করে সঠিক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) বিশেষ শাখার সদস্যরা মিমের বাড়ি যান। সেখানে কাগজপত্র সংশোধন করে নিয়ে এসেছেন।
এছাড়া নিজস্ব জমি না থাকায় মিমের পরিবারকে জমিসহ বাড়ি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে খুলনা জেলা প্রশাসন।
খুলনার জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিষয়টি তদারকি করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে খুব দ্রুত ভালো একটি সিদ্ধান্ত আসবে। চাকরির সঙ্গে জমিসহ প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি উপহার পাবেন তারা।’
খুলনা জেলা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ‘নিয়োগ কমিটির প্রধান হলেন এসপি স্যার। তিনি এখন ছুটিতে রয়েছেন। আমরা নিশ্চয়ই মিমের ব্যাপারে ইতিবাচকভাবে এগোবো।’
এর আগে খুলনা জেলা পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের সকল পরীক্ষায় প্রথম হন মিম আকতার। মেডিকেল পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হন। কিন্তু স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় পুলিশ প্রতিবেদন তার বিপক্ষে যায়। যার কারণে চাকরি থেকে বাদ পড়ে যান মিম। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই সংবাদ প্রচার হয়।
মিমের বাবা রবিউল ইসলাম জানান, সোমবার সকালে জেলা প্রশাসক ডেকে পাঠান। তিনি মিমের নিয়োগ সংক্রান্ত সব কাগজপত্র নেন। পুলিশ প্রতিবেদনের বিষয়ে তিনি অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেন। নিজস্ব কোনো জমি না থাকায় জেলা প্রশাসক জমির জন্য আবেদন, ভোটার আইডি কার্ড, ছবি দিতে বলেছেন।
রবিউল ইসলাম বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বের হওয়ার পর পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকেও ফোন আসে। সেখানে একটি কাগজ জমা দিতে বলা হয়। সকালেই সেটি জমা দিয়ে এসেছি। দুপুরে বাসায় এসে দেখি সিটিএসবি থেকে ভেরিফিকেশনের জন্য লোক এসেছে। তারা আবার সই স্বাক্ষর নিয়ে গেছে। এখন কি হয় বোঝা যাচ্ছে না। নিশ্চিত না হয়ে কিছুই বলতে পারছি না। সবাই আমার মেয়ের জন্য দোয়া করবেন।’
খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকা তৃতীয় ফেজের ১১ নম্বর সড়কের ভেতরে ডা. বাবর আলীর বাড়িতে ভাড়া থাকে মিমের পরিবার। তার বাবা রবিউল ইসলামের বয়রা মেইন রোডে নিউ সততা বেডিং হাউজ নামে তার লেপ-তোষকের একটি দোকান রয়েছে। মা আছিয়া খাতুন গৃহনী। মিমরা ৪ বোন, এর মধ্যে বড় দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। তৃতীয় মিম আকতার, সবার ছোট মরিয়ম খাতুন।
মিম ও মরিয়ম একই সঙ্গে খুলনা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। দুটি পরীক্ষা শেষ হয়েছে, এখনও ৪টি বাকি রয়েছে। এর মধ্যেই পুলিশের নিয়োগ পরীক্ষায় সবাইকে পেছনে ফেলে প্রথম হন মিম। এর আগে ২০১৯ সালে নগরীর পিডব্লিউডি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ৪ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট পেয়ে এসএসসি পাশ করেন মিম।
মিমের ছোট বোন মরিয়ম খাতুন সমকালকে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই সাহসী ছিলো মিম। মানুষের জন্য কাজ করতে চাইতো। কলেজে রেড ক্রিসেন্টের সঙ্গে বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করতো। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেখে নিজেই বায়তুন নূর মসজিদ মার্কেটে গিয়ে অনলাইনে আবেদন করে আসে। সে প্রথম হওয়ায় সবাই খুশি হয়েছিল। শনিবার পুলিশ লাইনে গিয়ে চাকরি হচ্ছে না শুনে সারারাত কেঁদেছে। মাও কেদেছে। প্রথমে বাদ পড়লে তেমন কষ্ট হত না। কিন্তু সব জায়গায় প্রথম হয়েও জমির জন্য বাদ পড়া মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিলো। তবে সবাই যেভাবে এগিয়ে এসেছে তাতে আমরা কৃতজ্ঞ।’সৌজন্যে-সমকাল
Discussion about this post