খেলাধূলা ডেস্ক
বাংলাদেশের ফুটবলের বর্তমান চিত্রে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও উত্তেজনাকর লড়াই বললে একবাক্যে আসবে আবাহনী ও বসুন্ধরা কিংসের ম্যাচ। মৌসুম শুরুর টুর্নামেন্ট স্বাধীনতা কাপের ফাইনালেই যখন দল দুটি মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেছে, তখন উত্তেজনার আঁচ গায়ে মাখার সুযোগ কি আর নষ্ট করা যায়! কমলাপুরের শহীদ মোস্তাফা কামাল স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে তাই তিল ধারণের জায়গা নেই। নিরাশ হননি ফুটবলপ্রেমীরা। উপভোগ্য ফুটবলে সাজানো মঞ্চে শক্তি দেখালো আবাহনী। দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে বসুন্ধরাকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে শিরোপা জয়ের উল্লাস করেছে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি।
শনিবার সেই পুরনো আবাহনীকে পাওয়া গেলো। গোলের নেশায় শুরু থেকে বসুন্ধরার রক্ষণে পরীক্ষা নেওয়া দলটি প্রথমার্ধে সফল না হলেও দ্বিতীয়ার্ধে গোলের পর গোল করেছে। তাতে শিরোপাপ্রত্যাশী বসুন্ধরাকে হতাশায় ডুবিয়ে স্বাধীনতা কাপের শ্রেষ্ঠত্ব ঘরে তুলেছে আকাশি-নীলেরা।
সেই ২০১৮ সালে ফেডারেশন কাপে প্রথম দেখায় বসুন্ধরাকে হারিয়েছিল আবাহনী। এরপর ছয়বারের মুখোমুখিতে জয়ের দেখা মিলেনি। এবার দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হলো। বসুন্ধরার রাজত্বে বড় আঘাত হানলো তারা। রাকিব হোসেনের লক্ষ্যভেদের পর ব্রাজিলিয়ান দোরিয়েন্তনের জোড়ায় বসুন্ধরাকে উড়িয়ে দিয়েছে আবাহনী।
১৯৯০ সালে একবারই স্বাধীনতা কাপ জিতেছিল আবাহনী। এবার দাপটের সঙ্গে খেলে দ্বিতীয়বারের মতো ট্রফি ঘরে তুলেছে। শুধু তা-ই নয়, ২০১৮ সালের পর এবারই প্রথম কোনও প্রতিযোগিতার ট্রফি নিয়ে উল্লাস করেছে আকাশি-নীল জার্সিধারীরা।
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে ১০ হাজারের মতো দর্শক এসেছিলেন ফাইনাল উপভোগ করতে। দুই জায়ান্টের লড়াই দেখতে জার্সি গায়ে ছিল অনেকেরই। ছিল পতাকার সঙ্গে বাদ্য-বাজনাও। আক্রমণ-প্রতিআক্রমণ নির্ভর উত্তেজনাকর ম্যাচ দেখে হতাশ হতে হয়নি তাদের।
আবাহনীর ৪-১-৪-১ ছকের বিপরীতে বসুন্ধরা ৪-৩-২-১ ছকে জমজমাট ফুটবল উপহার দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ম্যাচের শুরু থেকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে নেওয়ার চেষ্টা করেছে আবাহনী। রাফায়েল অগাস্তো এই ম্যাচেও দুর্দান্ত খেলেছেন। দানিয়েল কনিলদ্রেসও কম যাননি। দলের সমন্বয়ও হয়েছে চমৎকার। তাতে পুরো দলই উজ্জীবিত হয়ে প্রতিপক্ষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বিপরীতে বসুন্ধরা প্রথমার্ধে তবু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে, কিন্তু বিরতির পর কোনও প্রতিরোধই করতে পারেনি। তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে!
ম্যাচের প্রথম আক্রমণ করে ভয় ধরিয়েছে আবাহনী। ১০ মিনিটে নুরুল নাইম ফয়সালের ক্রসে কলিনদ্রেসের হেড গোলকিপার আনিসুর রহমান জিকো সহজেই তালুবন্দি করেন। পরের মিনিটে রবিনিয়োর জোরালো শট ক্রসবারের অনেক ওপর দিয়ে যায়। ১৭ মিনিটে কলিনদ্রেসের ফ্রি কিক গোলকিপার জিকো হাত দিয়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন। ৩ মিনিট পর আবাহনী সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি। রাকিবের ডান প্রান্তের ক্রসে ডিফেন্ডার আতিকুর রহমান ফাহাদ ঠিকমতো ক্লিয়ার করতে পারেননি। তবে কলিনদ্রেস বল পেয়ে লক্ষ্যে শট নেওয়ার আগেই ক্লিয়ার হয়।
২২ মিনিটে বসুন্ধরার বসনিয়ান রিক্রুট স্তোয়াইন ভ্রেনিস হঠাৎ এক জোরালো শটে চমকে দিয়েছিলেন গোলকিপার মাহফুজ হাসান প্রীতমকে। দুই হাতে ফিস্ট করেন আবাহনী স্টপার। ২ মিনিট পর ভ্রেনিসের ফ্রি কিক ক্রসবারের ওপর দিয়ে যায়। ২৬ মিনিটে আবাহনী আবারও সুযোগ পায়। বিপলু আহমেদকে কাটিয়ে বল বের করে নিতে চেয়েছিলেন অগাস্তো, তবে বলে গতি থাকায় তা চলে যায় জিকোর হাতে।
গোলশূন্য স্কোরলাইন রেখে বিরতিতে যায় দুই দল। সেখান থেকে ফিরে আবাহনীর প্রায় একচেটিয়া প্রাধান্য। এই মৌসুমে প্রথমবার খেলতে এসে রাকিব ছিলেন দুর্বার। সঙ্গে চোট কাটিয়ে ফিরে আসে ব্রাজিলিয়ান দোরিয়েন্তনও দুর্দান্ত। তাদের তিনটি গোলই এসেছে এই অর্ধে।
৫৪ মিনিটে প্রথম গোল আসে। অগাস্তোর চমৎকার থ্রু থেকে রাকিব বক্সে ঢুকে আগুয়ান গোলকিপারের পাশ দিয়ে বুদ্ধিদীপ্ত প্লেসিং করে জাল কাঁপান। সমর্থকরা ফেটে পড়েন উল্লাসে। তরুণ ডিফেন্ডার ইয়াসিন আরাফাত গায়ের সঙ্গে সেঁটে থাকলেও গতির কাছে হার মানেন।
৬১ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ হয়। কলিনদ্রেসকে নিজেদের সীমানায় ফেলে দেন রিমন হোসেন। রেফারি সাইমন সানি পেনাল্টির নির্দেশ দেন। স্পট কিক থেকে গোলকিপারের ডান দিক দিয়ে বুলেট গতির শটে জাল কাঁপান দোরিয়েন্তন।
৭২ মিনিটে আবারও স্কোরশিটে নাম তোলেন এই ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার। অগাস্তোর কর্নার থেকে মিলাদ শেখ সোলায়মানির বাইলাইন থেকে হেড, দোরিয়েন্তন তা পেয়ে ডান পায়ের শটে ৩-০ করেন। বাকি সময়ে বসুন্ধরা ম্যাচে ফেরার চেষ্টাই যা করেছে, কিন্তু কাজে আসেনি। আবাহনীর দাপুটে ফুটবলের সামনে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে তাদের। সমান্তরালে শিরোপা জয়ের উল্লাসে নতুন মৌসুমের প্রত্যাশা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি।
Discussion about this post