শিক্ষার আলো ডেস্ক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসন সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের নিয়ম-শৃঙ্খলা বিষয়ক একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীদের জন্য ১৭টি নিয়ম উল্লেখ করা হয়ে। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। এ বিষয় প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনও।
রোববার (১৯ ডিসেম্বর) ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর লিয়াকত আলী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য প্রকাশ করে।
রাবি সূত্রে জানা যায়, স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত আইনগুলোর মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, হল সংসদ ও বিভাগীয় সমিতি ছাড়া কোনও ক্লাব বা সমিতি বা ছাত্র সংগঠন গঠন করতে পারবে না। এ ছাড়া প্রক্টরের অনুমতি ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কোনও মিটিং, পার্টি বা আপ্যায়ন অথবা বাদ্যযন্ত্র বাজানো যাবে না, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষক এবং অফিসারের প্রক্টরিয়াল ক্ষমতা থাকবে, রাতের খাবারের পর পর ছাত্রদের রোল কল করতে হবে, রোল কলের সময় শিক্ষার্থীদের অবশ্যই তাদের রুমে থাকতে হবে। নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাত সাড়ে ৯টা এবং অন্যান্য সময় সাড়ে ১০টায় হলের গেট বন্ধ করতে হবে এবং সকাল ৫টার আগে খোলা যাবে না। আবাসিক ছাত্রীদের সান্ধ্য আইনের আওতায় শীতকালে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে সকাল ৬টা এবং গ্রীষ্মকালে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত হলে অবস্থান করতে হবে।
ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর লিয়াকত আলী বলছেন, পুরনো আইন নতুন করে সামনে আনার পেছনে অন্য কোনও ‘মতলব’ রয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছেন, এটা নতুন কোনও নিয়ম নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ৭৩-র অধ্যাদেশ রয়েছে সেটাই এখানে উল্লেখ করা হয়েছে।
ছাত্রনেতারা বলছেন, যেই আইনগুলো বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশ করা হয়েছে, তার কয়েকটি সংশোধনের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। এ অবস্থায় এই বিজ্ঞাপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়ভীতি প্রদর্শন করার চেষ্টা চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মহব্বত হোসেন মিলন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে নিজেদের কঠোর অবস্থানের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অথচ প্রশাসনের উচিত ছিল ৭৩-এর অধ্যাদেশের যেসব আইন সংশোধন করা প্রয়োজন, সেগুলো সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া। কিন্তু সেটা না করে পুরনো আইন সামনে আনার পেছনে দুরভিসন্ধিমূলক কোনও উদ্দেশ্য আছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।
রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ অন্তর জানান, আমরা বেশকিছু দিন ধরে সান্ধ্য আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছি। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুরনো আইনগুলো নোটিশ আকারে প্রকাশের মাধ্যমে নতুন শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন হতে না পারে।
তিনি আরও জানান, নোটিশের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে যে, ‘আন্দোলন করে লাভ নেই। আইনে এটা বলা হয়েছে। প্রয়োজনে আমরা পুরনো আইন বাস্তবায়নে কঠোর হবো’।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, শিক্ষার্থীরা যখন সান্ধ্য আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে ঠিক তখনই পুরনো আইন বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সামনে নিয়ে আসা হলো। এটা কেন করা হলো বোধগম্য নয়। এর পেছনে কোনও দুরভিসন্ধিমূলক উদ্দেশ্য আছে কি-না সে ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছি।
এ বিষয় ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর লিয়াকত আলী বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীন শিক্ষার্থীরা আসছে। তাদের জানানোর জন্য এই আইনগুলো নতুন করে সামনে নিয়ে আসা। শিক্ষার্থীরা অবগত হোক যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশে শৃঙ্খলা বিধানের জন্য এসব নিয়ম রয়েছে। তাছাড়া এগুলো যে মানতে হবে এমনটা নয়।
Discussion about this post