জিয়াউল হক
রাঙামাটিতে উদ্বোধনের নয় বছরেও চালু হয়নি চার কোটি টাকা ব্যয়ে পাহাড়ি শিশুদের জন্য নির্মিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুটি ছাত্রাবাস। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় নষ্ট হচ্ছে ছাত্রাবাসের আসবাবপত্র। দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে ধরেছে ফাটল। এরপরও ছাত্রাবাস চালুর উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে দুর্গম পাহাড়ে বসবাস করা পরিবারের শিশুদের জন্য জেলায় ছয়টি ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে লংগদু উপজেলার আটারকছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কাউখালী উপজেলার চেলাছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হয়। ২০১২ সালে নির্মাণকাজ শেষ হয়। ওই বছর উদ্বোধনের পর শিশুদের খাবারের খরচ নিশ্চিত না হওয়ার অজুহাতে আজও চালু হয়নি ছাত্রাবাস দুটি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন চালু না হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে ছাত্রাবাসের আসবাবপত্র। দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল। ছাত্রাবাসে বিভিন্ন জিনিসপত্র ও বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলেও ব্যবহার না হওয়ায় অকেজো হওয়ার পথে। ছাত্রাবাসের কর্মচারীরা কাজ করছেন স্ব স্ব উপজেলা শিক্ষা অফিসে। ব্যাহত হচ্ছে সরকারের মূল উদ্দেশ্য। কমেছে ওসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা।
দীর্ঘদিনেও ছাত্রাবাস চালু না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। দ্রুত সময়ের মধ্যে ছাত্রাবাস চালুর দাবি জানিয়েছেন তারা।
রাঙামাটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি ছাত্রাবাসে ৭৫ থেকে ৮০ জন ছাত্রছাত্রী থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। লংগদুর আটারকছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কাউখালী উপজেলার চেলাছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস দুটিতে পাঁচ জন করে রাজস্ব খ্যাতের কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ছাত্রাবাস চালু না হওয়ায় কর্মচারীরা উপজেলা শিক্ষা অফিসে কর্মরত আছেন।
রাঙামাটি জেলায় আরও চারটি ছাত্রাবাস রয়েছে। সেগুলো হলো বাঘাইছড়ি উপজেলার পাকুজ্জ্যাছড়ি, বিলাইছড়ি উপজেলার দীঘলছড়ি, কাপ্তাই উপজেলার চংড়াছড়ি এবং রাঙামাটি সদরের দক্ষিণ কুতুকছড়ি ছাত্রবাস। প্রতি বছর জুন মাসে মন্ত্রণালয় থেকে এই চার ছাত্রাবাসের জন্য খাবারের বরাদ্দ আসে। রাঙামাটি জেলা পরিষদ টেন্ডারের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করে। এই চারটি ছাত্রবাস চালু রয়েছে।
আটারকছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক ছাত্রের অভিভাবক মঙ্গল কুমার চাকমা বলেন, আমার বাড়ি থেকে স্কুল অনেক দূরে। হেঁটে যেতে কষ্ট হয় বলে ছেলেটা স্কুলে যেতে চায় না। ছাত্রাবাস চালু হলে ছেলেকে সেখানে রেখে পড়াতাম। আমরা গরিব মানুষ। ছাত্রাবাস চালু হলে আমাদের অনেক উপকার হবে।
চেলাছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক ছাত্রের অভিভাবক কালাচান চাকমা বলেন, এত টাকা ব্যয় করে কাদের জন্য ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হলো। আমাদের ছেলেমেয়েরা সুযোগ পাচ্ছে না। যে সুবিধার জন্য ছাত্রাবাস করা হলো, তা থেকে ছাত্রছাত্রীরা বঞ্চিত। ছাত্রাবাসটি দ্রুত চালুর দাবি জানাই।
ছাত্রাবাসের কর্মচারী রাসেল মারমা বলেন, নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে আমি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। ছাত্রাবাস চালু না হওয়ায় বাকি কর্মচারীদের শিক্ষা অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে।
আটারকছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কল্যাণ মিত্র চাকমা বলেন, দুর্গম এলাকায় পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যালয়ের পাশে ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু খাবারের খরচের বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ায় দীর্ঘদিনেও চালু করা হয়নি। এই সমস্যা সমাধান করে ছাত্রাবাসটি দ্রুত চালু করা হলে শিক্ষার্থীদের অনেক উপকার হতো। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বেড়ে যেতো।
কাউখালী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মানষ মুকুর চাকমা বলেন, পাহাড়ের শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আবাসিক ব্যবস্থা চালুর জন্য ছাত্রাবাসটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু খাবারের খরচ নিশ্চিত না হওয়ায় চেলাছড়া ছাত্রাবাসটি চালু করা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় অনেক জিনিসপত্র নষ্ট হতে শুরু করেছে। সরকার যে উদ্দেশ্যে ছাত্রাবাসটি নির্মাণ করেছিল, সেটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
রাঙামাটি জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রবিউল আলম বলেন, ভবন ও অন্যান্য সব কিছুই আছে। জনবলও নিয়োগ দেওয়া আছে। তারা রাজস্ব খাত থেকে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। আমাদের দুর্ভাগ্য, ছাত্রাবাস দুটি এখনও চালু করতে পারিনি। আমি রাঙামাটিতে দায়িত্ব গ্রহণের বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করছি, খাবারের খরচের বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে। ছাত্রাবাস দুটি আমরা চালু করতে পারবো। তবে কবে নাগাদ চালু হবে, তা নিশ্চিত করতে বলতে পারছি না।
রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী বলেন, খাবারের খরচ কে দেবে, এই সমস্যায় দীর্ঘদিন ছাত্রাবাস দুটি চালু হয়নি। বিষয়টি আমি জানি। আগামী জানুয়ারি মাসে ছাত্রাবাস দুটি চালুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সৌজন্যে-বাংলা ট্রিবিউন
Discussion about this post