শিক্ষার আলো ডেস্ক
করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষায় যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে ইতমধ্যে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ছুটি বাতিল করে ক্লাস-পরীক্ষা চলমান রাখা হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় এগোচ্ছে দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া প্রাথমিক, মাধ্যমিকেও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও আরও বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় শীতকালীন ছুটি ইতমধ্যে বাতিল করেছে। কেউ কেউ আবার শরৎ-এর ছুটিও বাতিল করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত ১৭ দিনের শীতকালীন ছুটি থাকে এবং শরৎকালীন ছুটি থাকে এক সপ্তাহের মতো। এ ছুটি বাতিলের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের সম্ভাব্য সেশনজট নিরসনের উপায় হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ক্যালেন্ডারের শরৎ ও শীতকালীন ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
জাবির ছুটি বাতিলের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মুহম্মদ হানিফ আলী বলেন, ‘করোনাকালীন শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমের ক্ষতির কথা বিবেচনা করা হয়েছে। সেশনজটসহ শিক্ষা কার্যক্রমে গতি আনতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
উচ্চশিক্ষা ছাড়াও প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকে করোনা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। স্কুল বন্ধের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য বাংলাদেশ সরকার টেলিভিশন, মোবাইল ফোন, রেডিও এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে দূরবর্তী শিক্ষার সূচনা করেছিল। তবে সব শিক্ষার্থীর এ প্ল্যাটফরমগুলোতে অ্যাক্সেস না-থাকায় এ কার্যক্রম খুব একটা ফলপ্রসু হয়নি।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যায় তরুণ বয়সীদের অনুপাত বেশি। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের দ্বারা তাদের দক্ষ শ্রমশক্তিতে পরিণত করে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করা সম্ভব। তা ছাড়া শিক্ষিত যুবসমাজ হবে সমাজের আলোকিত অংশ। কাজেই চলমান করোনা মহামারিকালে তাদের মূল্যবান সময়ের সদ্ব্যবহারের বিষয়ে দিকনির্দেশনা ও সঠিক কার্যক্রম প্রয়োজন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, করোনা পরবর্তী সময়ে আমাদের পৃথিবী, সমাজ আর আগের মতো হবে না। করোনার বন্ধে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ও বন্ধ ছিল। কিন্তু ন্যানোমিটার দৈর্ঘ্যের করোনাভাইরাস আমাদের ঠিকই পরীক্ষা নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পরীক্ষার বিষয় মানবিক গুণাবলি। এই পরীক্ষায় অনেক সমৃদ্ধ, সম্পদশালী দেশ পাস মার্ক পায়নি। কাজেই এই বৈশ্বিক সমস্যা সফলভাবে মোকাবিলা করতে আমাদের মানবিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ হতে হবে, কাজ করতে হবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এসএম হাফিজুর রহমান বলেন, ক্ষতি কতটুকু হলো, তা পর্যালোচনা করতে হবে আগে। এরপর তার ভিত্তিতে ক্ষতি পোষানোর জন্য মহাপরিকল্পনা করে এগোতে হবে। পরীক্ষা ছাড়া বা সামান্য কিছু পড়িয়ে উপরের শ্রেণিতে ওঠালে দীর্ঘমেয়াদে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
তিনি আরো বলেন, কোভিড-পরবর্তী শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শেখার সব টুলসে সহজ অ্যাক্সেস নিশ্চিত করা, কার্যকর বিকল্প শিক্ষার সুযোগ সরবরাহ করা, শিক্ষার্থীদের ড্রপআউট হ্রাস করা, অংশগ্রহণমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাবর্ষের পুনরাবৃত্তি করা, কারিকুলাম ও পাঠ্যক্রম সংকুচিত করা, মেকআপ ক্লাস বৃদ্ধি করাসহ এ সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
Discussion about this post