নিজস্ব প্রতিবেদক
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধসহ ৫ দফা দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছিল শিক্ষক সমিতি। তবে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের যে দাবি তাদের ছিল, সেই অবস্থান থেকেও তারা সরে এসেছেন।
বুধবার (৫ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান, হাসান আব্দুল কাইয়ুম, মোহাম্মদ কামরুজ্জামান রাজ্জাক ও রিয়াজ খান নিলয়কে আজীবন বহিস্কারসহ ৪৪ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় প্রশাসন। এ ঘটনায় কুয়েট শিক্ষক সমিতি, কুয়েট প্রশাসন, গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যসহ সংশ্লিষ্টি সবাইকে অভিনন্দন জানানো হয়। একই সঙ্গে চলমান অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধসহ সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষকরা। অ্যাকাডেমিকসহ সব কার্যক্রম চালু রেখে তাদের আরও তিন দফা দাবি সংয়ুক্ত করেন তারা।
আজ বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শিক্ষকেরা। আগামী ৯ জানুয়ারি থেকে তারা ক্লাসে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন।
কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রতীক চন্দ্র বিশ্বাস জানান, এদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সভায় কুয়েটের ১১৪ জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। সভায় ক্লাস বর্জন কর্মসূচি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভায় সমিতির পক্ষ থেকে শিক্ষকদের ১ দিনের বেতন ও ফান্ড থেকে মোট ১০ লক্ষ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনে ড. সেলিমের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি জানান, সভায় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে ৪৪ ছাত্রের শাস্তি যাতে বহাল থাকে সে পদক্ষেপ গ্রহণে কুয়েট কর্তৃপক্ষকে সজাগ থাকার আহবান জানানো হয়।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৩০ নভেম্বর বিকেলে কুয়েটের ইইই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেন মারা যান। তার মৃত্যুর পর সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ ওঠে এই মৃত্যুর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ তার অনুগত ছাত্ররা দায়ী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের লালনশাহ হলের ডিসেম্বর মাসের খাদ্য ব্যবস্থাপক (ডাইনিং ম্যানেজার) নির্বাচন নিয়ে ড. সেলিমকে চাপ দিয়ে আসছিলেন ফজলুল হক হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান।
এরই ধারাবাহিকতায় ঘটনার দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বাধীন কয়েকজন শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের রাস্তায় ড. সেলিমকে জেরা শুরু করেন। পরে তারা শিক্ষককে অনুসরণ করে তার ব্যক্তিগত কক্ষে (তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) প্রবেশ করেন।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তারা আনুমানিক আধা ঘণ্টা শিক্ষকের রুমে অবস্থান করেন। পরে কক্ষ থেকে বেরিয়ে ড. সেলিম দুপুরের খাবার খেতে ক্যাম্পাস থেকে নিজ বাসায় যান। দুপুর আড়াইটার দিকে তার স্ত্রী লক্ষ্য করেন তিনি বাথরুম থেকে বের হচ্ছেন না। দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
Discussion about this post