খেলাধূলা ডেস্ক
মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউজিল্যান্ডের পেসারদের ‘অসহায়ত্ব’ ছিল অবাক করার মতো। কেননা ঘরের মাঠে দেশটির পেসারদের দাপট সবসময়। অথচ বাংলাদেশের ব্যাটাররা তাদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছেন। ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে এসে ‘আসল’ চেহারায় আবির্ভূত টিম সাউদি-ট্রেন্ট বোল্টরা। এই দুই পেসারের তোপে এলোমেলো বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ।
আজ (সোমবার) চলছে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা। টম ল্যাথামের ডাবল সেঞ্চুরিতে রানের পাহাড় গড়েছে নিউজিল্যান্ড। ৬ উইকেটে ৫২১ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছে কিউইরা। বোলিংয়ে সংগ্রাম করা বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নেমেও বিপদে পড়েছে। প্রথম ইনিংসে সফরকারীদের স্কোর ২৩ ওভারে ৫ উইকেটে ৬৬ রান। ক্রিজে আছেন নুরুল হাসান (২৪) ও ইয়াসির আলী (২৩)।
যে উইকেটে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটাররা সাবলীল ব্যাটিংয়ে বিশাল সংগ্রহের ভিত গড়েছেন দলের, সেই একই উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংসে ভিন্ন চিত্র। শুরুতেই এলোমেলো সফরকারীরা। মাত্র ১১ রান তুলতে টপ অর্ডারের চার ব্যাটারকে হারায়! কিছুই করতে পারেননি সাদমান ইসলাম, নাঈম শেখ, নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল।
ভালোর শুরুরই ইঙ্গিত ছিল সাদমানের ব্যাটে। যদিও সেটা স্থায়ী হয়নি। ট্রেন্ট বোল্টের বলে ৭ রান করে ধরা পড়েন তিনি ল্যাথামের হাতে। শুরুতেই চাপে পড়া বাংলাদেশ আরও বিপদে পড়ে খানিক পর নাঈম বিদায় নিলে। অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংস মোটেও স্মরণীয় করতে পারলেন না। বরং হয়ে থাকলো যন্ত্রণার। টিম সাউদির বলে বোল্ড হওয়ার সময় রানের খাতা যে খোলা হয়নি তার।
দ্রুত দুই ওপেনারকে হারানোর পর সফরকারীরা ঘুরে দাঁড়াবে কী, উল্টো শান্তও ব্যর্থতার মিছিলে যোগ দেন। বোল্টের দ্বিতীয় শিকার হয়ে মাত্র ৪ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান তিনি। দলের এই অবস্থায় অধিনায়ক হিসেবে বাড়তি দায়িত্ব ছিল মুমিনুলের। চাপ কাটিয়ে ভালো একটা অবস্থানে নিয়ে যেতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা ছিল তার। কিন্তু তিনি নিজেই রানের খাতা খুলতে পারলেন না! সাউদির বলে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন খালি হাতে। ব্যর্থতার মিছিলে তার পর যোগ দেন লিটন দাস। বিগত ইনিংসগুলোয় ধারাবাহিক এই ব্যাটার ১৮ বল খেলে করতে পেরেছেন ৮ রান। তাকে ব্লান্ডেলের গ্লাভসবন্দি করিয়েছেন বোল্ট।
এর আগে ব্যাটিংয়ে রাজত্ব করেছে নিউজিল্যান্ড। ৬ উইকেটে ৫২১ রানে ইনিংস ঘোষণার পথে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ল্যাথাম খেলেছেন ২৫২ রানের ঝলমলে ইনিংস। ডাবল সেঞ্চুরির পথ প্রথম দিনই করে রেখেছিলেন। সুযোগটা নষ্ট করেননি বাঁহাতি ওপেনার। দ্বিতীয় দিনের সকালেই টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি পূরণ করেছেন তিনি। ২০১৮ সালে ওয়েলিংটনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন। আর এবার নিজের শহর ক্রাইস্টচার্চে পেলেন দ্বিতীয় দ্বিশতক। ৩০৫ বলে পৌঁছে যান মাইলফলকটিতে। মুমিনুলের বলে আউট হওয়ার আগে ৩৭৩ বলের ইনিংসটি কিউই অধিনায়ক সাজান ৩৪ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায়।
ল্যাথামের সঙ্গে ৯৯ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করেছিলেন ডেভন কনওয়ে। প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন এই ব্যাটার। যদিও শতক পূরণের পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। রান আউট হয়ে দিনের শুরুতেই তিনি ফিরলে উইকেট উদযাপনের উপলক্ষ দ্রুতই পায় বাংলাদেশ। তার বিদায়ে ভাঙে ল্যাথামের সঙ্গে ২১৫ রানের জুটি। মেহেদী হাসান মিরাজের দুর্দান্ত থ্রোতে বাংলাদেশ পেয়ে যায় দ্বিতীয় উইকেট। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুর্দান্ত সময় পার করা এই ব্যাটার করেছেন ১০৯ রান। ১৬৬ বলের ইনিংসটি কনওয়ে সাজান ১২ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায়।
প্রথম দিনই উইকেট উদযাপনে মেতেছিলেন এবাদত হোসেন। যদিও রিভিউ দুর্ভাগ্যে সেই উদযাপন হতাশায় রূপ নেয়। অবশেষে দ্বিতীয় দিনে এসে সাফল্যের মুখ দেখলেন মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের নায়ক। আবারও জ্বলে ওঠেন ডানহাতি পেসার। রস টেলরকে আউট করে স্বস্তি ফেরানোর পর তুলে নেন হেনরি নিকোলসের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট।
টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলতে নেমেছেন টেলর। অভিজ্ঞ ব্যাটারের শেষের শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি। ২৮ রানে আউট হয়ে গেছেন তিনি। টেলরকে দিয়েই দ্বিতীয় টেস্টে উইকেটের খাতা খুলেছেন এবাদত। তার বলে শরিফুল ইসলামের হাতে ক্যাচ দেন আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ‘নাম্বার ফোর’ ব্যাটার। ৩৯ বলের ইনিংসটি টেলর সাজান ৪ বাউন্ডারিতে।
নিজের দুই ওভার পরই আবার এবাদতের উইকেট উদযাপন। এবার তার শিকার নিকোলস। কিউই এই ব্যাটারকে রানের খাতা খুলতে দেননি। তার বল নিকোলসের ব্যাটে ছোঁয়া লেগে উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসে গেলেও আম্পায়ার আউট দেননি। বাংলাদেশ নেয় রিভিউ। সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের পক্ষে গেলে কিউইরা হারায় চতুর্থ উইকেট।
আগের দিন যেখানে গোটা দিনে ১ উইকেট পেয়েছিল বাংলাদেশ, সেখানে দ্বিতীয় দিনে প্রথম সেশনেই বাংলাদেশের প্রাপ্তি ৪ উইকেট। শরিফুল ইসলামের বলে ড্যারিল মিশেল আউট হওয়ার পরপরই লাঞ্চের বিরতি দেন দুই আম্পায়ার। নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভবন্দি হওয়ার আগে কিউই ব্যাটার করতে পেরেছেন মাত্র ৩ রান।
টম ব্লান্ডেল অপরাজিত ছিলেন ৫৭ রানে। ৬০ বলের ইনিংসটি তিনি সাজান ৮ বাউন্ডারিতে। ইনিংস ঘোষণার সময় তার সঙ্গে ক্রিজে ছিলেন ৪* রান করা কাইল জেমিসন।
বাংলাদেশের দুই পেসার শরিফুল ও এবাদত দুজনই পেয়েছেন ২টি করে উইকেট। আর ১ উইকেট শিকার মিরাজের।
Discussion about this post