শিক্ষার আলো ডেস্ক
সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অধ্যাদেশের বরাত দিয়ে শিক্ষার্থীদের মেনে চলতে ১৭টি নির্দেশনা সংবলিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। শিক্ষার্থীদের সমালোচনার মুখে পরবর্তীতে নির্দেশনাগুলো প্রত্যাহার করে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, নির্দেশনা প্রত্যাহার কোনও স্থায়ী সমাধান নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে পরবর্তীতে যে কোনও সময় অধ্যাদেশের দোহাই দিয়ে নিয়মগুলো শিক্ষার্থীদের ওপর প্রয়োগ করবে। প্রায় ৫০ বছরের আগের অধ্যাদেশের বরাতে নির্দেশনা দেওয়া অযৌক্তিক। তাই এসব বিষয় সংস্কার করে যুগোপযোগী করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যে অধ্যাদেশ সংশোধন করে কিভাবে যুগোপযোগী করা যায় সে বিষয় পর্যালোচনা করতে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ ডিসেম্বর ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর লিয়াকত আলী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, হল সংসদ ও বিভাগীয় সমিতি ছাড়া কোনও ক্লাব বা সমিতি বা ছাত্র সংগঠন গঠন করা যাবে না। এছাড়া, রাতের খাবারের পর আবাসিক ছাত্রদের রোল কল করতে হবে, নভেম্বর- ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাত সাড়ে ৯টা এবং অন্যান্য সময় সাড়ে ১০টায় হলের গেট বন্ধ করা হবে এবং সকাল ৫টার আগে খোলা হবে না। আবাসিক ছাত্রীদের সান্ধ্য আইনের আওতায় শীতকালে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে সকাল ৬টা এবং গ্রীষ্মকালে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত হলে অবস্থান করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ অন্তর বলেন, প্রক্টর দফতর থেকে অধ্যাদেশ উল্লেখ করে দেওয়া নোটিশের আইনগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটি মুক্তবুদ্ধির চর্চা বাধা দেবে। শিক্ষার্থীদের সমালোচনার মুখে নোটিশ প্রত্যাহার করা হলেও আইনগুলো কিন্তু অধ্যাদেশে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে যেকোনও সময় এই আইনের দোহাই দিয়ে শিক্ষার্থীদের অধিকার খর্ব করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, আইনগুলো বেশ পুরনো। সময়ের সঙ্গে সামাজিক, অর্থনৈতিক পরিবর্তন হয়েছে। এই আইনগুলো সংস্কার করা এখন সময়ের দাবি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডাইভারসিটি রয়েছে। শিক্ষা, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ও মুক্তচিন্তার পরিবেশ তৈরি করার জন্য উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করতে হবে।
বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর রাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক রঞ্জু হাসান বলেন, নোটিশ দেওয়ার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেওয়া প্রক্টরের বক্তব্যে এটি স্পষ্ট যে, তিনি ব্যক্তিগতভাবে এই নোটিশ দিয়েছেন। তার মানে এই আইনগুলো ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা মনে করি ৭৩ সালের অধ্যাদেশের অনেক আইনই এখন বর্তমান পরিবেশের সঙ্গে মানানসই নয়। এগুলো বাতিল বা সংস্কার করতে হবে। শিক্ষার্থীদের অধিকারের টুটি চেপে ধরা যায়, এমন আইন সংশোধন নয় বাতিল করতে হবে।
রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, নোটিশ প্রত্যাহার কোনও সমাধান নয়। কারণ এই আইন যে পরবর্তীতে ব্যবহার হবে না, সেই নিশ্চয়তা নেই। এই আইনগুলো খুবই সেকেলে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষার যে অগ্রগতি, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে এই আইনগুলো সংশোধন এখন সময়ের দাবি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরাও বলছেন এই আইন সংশোধন করা প্রয়োজন। ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেম বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয় আইন, অধ্যাদেশ ও স্ট্যাটিউট দিয়ে। এর মধ্যে আইন ১৯৭৩ সালে সংসদে পাশ করা হয়। যা ৭৩ এর অ্যাক্ট হিসেবে পরিচিত। এছাড়া সিনেট থেকে নিয়মকানুনগুলো তৈরি হয় সেটি স্ট্যাটিউট এবং সিন্ডিকেট থেকে পাস হওয়া নিয়ম অধ্যাদেশ হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দফতর থেকে দেওয়া নোটিশে যে নিয়মগুলো উল্লেখ করা হয়েছে এগুলো অধ্যাদেশে রয়েছে। সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্যরা চাইলে এগুলো সংশোধন করতে পারেন। যেহেতু নিয়মগুলো অনেক পুরনো এবং সময়ের সঙ্গে অনেক কিছুই পরিবর্তিত হয়েছে। তাই নিয়মগুলো সংস্কার করে যুগোপযোগী করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন ইতিহাসবিদ আবুল কাশেম।
সাবেক উপ-উপাচার্য চৌধুরী সরওয়ার জাহান বলেন, সময় পাল্টেছে। যার প্রেক্ষাপটে আইনকানুনে সংশোধন করা প্রয়োজন পড়ে। অধ্যাদেশের যে নিয়মগুলো বর্তমান প্রেক্ষাপট, সমাজ, সংস্কৃতির সঙ্গে চলে না সেগুলো সংস্কার করা প্রয়োজন।
Discussion about this post