শিক্ষার আলো ডেস্ক
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সৃষ্ট শিক্ষার ক্ষতি পূরণে একটি সুনির্দিষ্ট সমন্বিত প্রতিকারমূলক প্যাকেজসহ বিকল্প পাঠদান পদ্ধতির ওপর জোর দিয়েছেন বক্তারা।
গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বেসরকারি সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ আয়োজিত ‘কোভিড-১৯ মহামারির সময় ছাত্রদের লার্নিং গ্যাপ : চরাঞ্চলে ফ্রেন্ডশিপের অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তাদের কাছ থেকে নানা পরামর্শ উঠে আসে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর) দেশের চরাঞ্চলে ফ্রেন্ডশিপের মাধ্যমে বিভিন্ন স্কুল ও লার্নিং সেন্টারের শিক্ষার্থীদের ওপর গবেষণা চালায়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে আইইআর-এর প্রফেসর ড. আব্দুল মালেক সভাপতিত্ব করেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সেমিনারে বক্তৃতাকালে বলেন, করোনা মহামারিতে বিদ্যালয়ে পাঠদান এবং ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার সাথে সংযুক্ত রাখা ছিল খুবই কঠিন। তবুও সরকার এবং উন্নয়ন সহযোগিদের প্রচেষ্টায় বিকল্প উপায়ে কোমলমতি ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এমন দুর্দিনে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত প্রায় ৪ কোটি ছাত্র-ছাত্রীর লেখাপড়া চালিয়ে নিতে বিকল্প পদ্ধতিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়। পাঠদানের মধ্যে অন্যতম ছিল- অনলাইন ক্লাস, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ জাতীয় গণমাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ের ক্লাস সম্প্রচার ইত্যাদি।
করোনকালে বিকল্প উপায়ে পাঠদান নিয়ে আয়োজিত সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফ্রেন্ডশিপের প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক রুনা খান। তিনি জানান, ২০০২ সাল থেকে চরাঞ্চলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়নে চেষ্টা চালাচ্ছে ফ্রেন্ডশিপ। সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায়। তাই করোনা মহামারির সময় স্বাভাবিক জনকল্যাণমূলক কাজের পাশাপাশি ৪৩টি প্রাথমিক, ১৬টি মাধ্যমিক এবং ৪৯টি বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে ৪ হাজার ২৯৬ জন ছাত্র-ছাত্রী এবং ৯৮০ জন বয়স্ক শিক্ষার্থীর লেখাপড়ায় বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে ।
কোভিড-১৯ মহামারীকালে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ঘাটতি এবং চরাঞ্চলে ফ্রেন্ডশিপ শিক্ষা কর্মসূচির অভিজ্ঞতা নিয়ে গবেষণা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট। গবেষণায় ‘বিকল্প পাঠদান পদ্ধতি এবং এর সুফল’ তুলে ধরেন ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান এবং সহযোগী অধ্যাপক শাহ শামিম আহমেদ।
তারা জানান, মহামারির সময় প্রত্যন্ত চরে ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ায় যুক্ত রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অংশগ্রহণ করানো হয় অনলাইন ক্লাসে। শিক্ষকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সুস্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে সচেতন করেন অভিবাবক ও শিক্ষার্থীদের। মোবাইল ফোনে নেওয়া হয় তাদের খোঁজ-খবর। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষকরা বাড়িতে গিয়ে সহযোগিতা করেন লেখাপড়ায়।
সেমিনারে বক্তব্য রাখেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক প্রফেসর ড. এ কিউ এম শফিউল আজম, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য প্রফেসর ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক ড. উত্তম কুমার দাস এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এটুআই পলিসি স্পেশালিস্ট আফযাল হোসেন সারোয়ার।
দীর্ঘ সময় বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের লেখা-পড়ায় ঘাটতি এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্য বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি মেধার বিকাশ এবং মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান তারা। বাসস।
Discussion about this post