নিজস্ব প্রতিবেদক
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নেটওয়ার্ক’ নামের একটি সংগঠন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। এটি দেশের ২৬টি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি প্ল্যাটফর্ম ।
আজ মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে ২৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, গত বৃহস্পতিবার শাবিপ্রবির বেগম সিরাজুন্নেসা ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা প্রভোস্ট বডির পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিল। এরপর শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ক্যাম্পাসের গোল চত্বরে ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ এবং প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. আলমগীর কবিরের উপস্থিতিতে আন্দোলনরত ১০-১২ জন শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
“হামলাকারীদের হাত থেকে তাদের বাঁচাতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হন আন্দোলনরত কয়েকজন ছাত্রী। এরপরের দিন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আইআইসিটি ভবনে ভিসিকে অবরুদ্ধ করলে ভিসির নির্দেশে পুলিশ এসে শিক্ষার্থীদের উপর বর্বর হামলা চালায়। এতে প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। এটা স্পষ্ট যে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর সকল হামলা সংঘটিত হয়েছে প্রশাসনের মদদে। প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে প্রশাসন গদির ভয়ে এরূপ নৃশংস পথ বেছে নিয়েছে।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে শাবিপ্রবি ভিসি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা আগে থেকেই ইট পাটকেল নিয়া প্রস্তুত ছিলো এবং শিক্ষার্থীরাও পুলিশের ওপর গুলি ছুড়েছে। নিজের অপকর্ম ঢাকতে এহেন মিথ্যাচারের জন্য শাবিপ্রবি ভিসিকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে আহ্বান জানান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নেটওয়ার্ক এর শিক্ষার্থীরা।
তারা আরও বলেন, “বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রশাসন, ছাত্রলীগ ও পুলিশ বাহিনীর এরূপ যোগসূত্র আমরা দেখতে পাচ্ছি। দুর্নীতিবাজ, দায়িত্বজ্ঞানহীন ও সরকারী তোষামোদি প্রশাসনগুলো তাদের অপকর্ম ঢাকতে এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী কন্ঠ ও আন্দোলন দমাতে বরাবরই পেটোয়া বাহিনীর (ছাত্রলীগ ও পুলিশ) সাহায্য নিচ্ছে। এরকম উদাহরণ হলো ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবরুদ্ধ ভিসিকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলা এবং ২০১৯ সালে জাবিতে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বায়ত্তশাসন জলাঞ্জলি দিয়ে প্রশাসনগুলো ফ্যাসিস্ট কায়দায় আন্দোলন থামাচ্ছে। কিন্তু সংগ্রামী শিক্ষার্থীদের এভাবে থামানো সম্ভব নয়। ইতিহাস বলে দেয় সবসময়ই ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরাই জয়ী হয়েছে, ফ্যাসিস্টরা পরাজয় বরণ করেছে।”
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন “শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির সাথে সংহতি জানিয়ে আমরা আরো দাবি জানাচ্ছি, ভিসিসহ প্রক্টরকেও পদত্যাগ করতে হবে। একই সাথে আমরা দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আহবান জানাচ্ছি, শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর। নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবাদ জানানোর আহবান জানাচ্ছি।”
বিবৃতিদানকারী ২৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মধ্যে রয়েছে-
১) আরাফাত সাদ—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২) আদনান আজিজ চৌধুরী—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩) রাকিবুল রনি—জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৪) ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলী—জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৫) আলিসা মুনতাজ—বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
৬) সুজয় শুভ—বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
৭) শুভদ্বীপ অধিকারী—বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
৮) নাজমুস সাদাত—খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
৯) আসাবুর রহমান—খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
১০) মো. হেলাল উদ্দিন—খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
১১) রায়হান মাহমুদ হৃদয়—খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
১২) আজিজুল হক—রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
১৩) মহব্বত হোসেন—রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
১৪) মিঠুন চন্দ্র মহন্ত—রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
১৫) সাচিং মারমা—চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
১৬) আশরাফী নিতু—চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
১৭) আরিফ উদ্দিন—চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
১৮) শাহ মোহাম্মদ শিহাব—চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
১৯) জি. কে. সাদিক—ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
২০) আহমেদ তৌফিক—ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
২১) রথীন্দ্র নাথ বাপ্পি—বশেমুরবিপ্রবি
২২) নাজমুল মিলন—বশেমুরবিপ্রবি
২৩) ইশতিয়াক আহমেদ রিফাত—বশেমুরবিপ্রবি
২৪) উজ্জ্বল মন্ডল—বশেমুরবিপ্রবি
২৫) রোমিয় রহমান—বশেমুরবিপ্রবি
২৬) মনীষা ওয়াহিদ—মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি
২৭) স. মুহম্মদ নাহিন রহমান—খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
২৮) এম আই বকুল—বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
২৯) সাইফুর রূদ্র—বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ
৩০) মুশফিকুর রহমান—হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
৩১) মুবতাছিম ইসলাম—বিইউপি
৩২) মাহমুদুল হাসান সুমিত—ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
৩৩) তাসনিম মাজহার রাফি—নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়
৩৪) তাহমিদ হোসেন—বুয়েট
৩৫) নাজিফা জান্নাত মার্জিয়া—ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি
৩৬) আফসানা আহমেদ—বাকৃবি
৩৭) মোহাম্মদ তানভীর হোসেন—আইইউবিএটি
৩৮) আশিকুর রহমান—আইইউবিএটি
৩৯) তানজিদ সোহরাব—আইইউবিএটি
৪০) আসিফ ইকবাল—চুয়েট
৪১) আবু সাঈদ—যবিপ্রবি
৪২) আল আমিন শেখ—নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি
৪৩) উসুইহ্লা মারমা—কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
৪৪) আপ্রুসি মারমা—নোবিপ্রবি
৪৫) বর্ষা রায় চৌধুরী—জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
Discussion about this post