বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক
ইন্টারনেট, যার উপর ভর করে চলছে পৃথিবী। বর্তমান যুগে ইন্টারনেট ছাড়া যেন এক মুহূর্তও কল্পনা করা যায় না। সারা বিশ্বে প্রায় ৪.৫৭ বিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। শিক্ষা, যোগাযোগ, ব্যাংকিং, বিনোদন সবকিছুর জন্য ইন্টারনেট প্রধান কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে বর্তমানের এই দ্রুতগতির ইন্টারনেট আসার পেছনের ইতিহাস জানা নেই অনেকেরই।
ইন্টারনেট হলো ইন্টারকানেক্টেড নেটওয়ার্কের সংক্ষিপ্ত রূপ। ইন্টারনেট মানে অন্তর্জল যা কি না পৃথিবী জুড়ে বিস্তৃত নেটওয়ার্কের জাল।অসংখ্য নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত বিশ্বব্যাপী বৃহৎ কম্পিউটার নেটওয়ার্ককেই বলা হয় ইন্টারনেট।
লিওনার্ড ক্লেইনরক ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া ,১৯৫০ সালে লস অ্যাঞ্জেলস থেকে একটি বার্তা স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে পাঠান যা ছিল ইন্টারনেটের পাঠানো প্রথম তথ্য। এছাড়া উদ্ভাবনের প্রাথমিক কারণটি সামরিক হলেও পরবর্তীতে যোগাযোগ মাধ্যমকে ধ্বংসের কবল থেকে রক্ষার চিন্তায় টেলিফোনের বিকল্প হিসেবে ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু হয়। এরপরে ১৯৬৯ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষা সংস্থা বিশ্বব্যাপী তাদের গোপন যোগাযোগ রক্ষার জন্য এর ব্যবহার শুরু করে। ‘পেন্টাগন’ তখন ৪টি কম্পিউটারের মাধ্যমে তথ্যের আদান প্রদান করতো টেলিফোনের বিকল্প হিসেবে। এ যোগাযোগের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ডার্পানেট’। তিন বছর যেতে না যেতেই এই নাম বদলে নতুন নাম দেওয়া হয় ‘আর্পানেট’। কম্পিউটারের সংখ্যা তখন ৪টি থেকে ৩৩ এ উন্নীত হয়েছে।
১৯৭০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রোগ্রামার রেমন্ড স্যামুয়েল একটি ই-মেইল সিস্টেম বানান। তার পরের বছরেই আর্পারেটের উপযোগী ই-মেইল সিস্টেম বানানো হয়। ১৯৭২ সালে মেইল ঠিকানায় @ চিহ্নের ব্যবহার শুরু হয়। এরপর ১৯৮০’র পর বেশ কিছু নেটওয়ার্ক চালু হয়, যার মধ্যে বিটনেট জনপ্রিয়তা পেয়েছিল বেশি। প্রায় অর্ধশত দেশের হাজারেরও বেশি প্রতিষ্ঠান যুক্ত ছিল এই নেটওয়ার্কে।
এদিকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার টিম বার্নস লি নতুন একটি কম্পিউটার প্রোগ্রামের কথা চিন্তা করেন। যা কাজ করবে ব্রেইনের মতো। এরপর তিনি তৈরি করেন নতুন একটি সফটওয়্যার। যার নাম দেওয়া হয় হাইপার টেক্সট। এরপর তিনি HTML সিস্টেম আবিষ্কার করেন। যেটা হাইপার টেক্সট ট্রান্সফার প্রটোকল নামে পরিচিত।
ভিন্ট সার্ফ এবং রবার্ট কার্নের আবিষ্কৃত TCP/ IP এড্রেস দিয়ে ইন্টারনেটের যেকোনো প্রকার কমিউনিকেশন HTTP অথবা FTP পরিচালিত হতে থাকে। সার্ভারের বিভিন্ন ফাইল এক্সেস করার জন্য বড় বড় নম্বরের IP এড্রেস ব্যবহার করা যায়। কিন্তু এসব নম্বর মনে রাখা কষ্টকর হওয়ায় একটি নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যার নাম হলো ডোমেইন নেম সিস্টেম (DNS)। ডোমেইন নেম সিস্টেম হচ্ছে IP এড্রেসের একটি আলফা নিউমেরিক ( ক্যারেক্টার ও নম্বর সম্বলিত) ঠিকানা। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জন্য .com ,অবাণিজ্যিক জনহিতকর প্রতিষ্ঠানের জন্য .org , সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য .gov , আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের জন্য . int এসব ডোমেইন চালু হয়।
১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন ‘এনএসএফনেট’ নামে সর্বসাধারণের জন্য অন্য রকম একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করে। তখন তা ছিল কেবল গবেষণার কাজে তথ্য বিনিময়ের মাধ্যম। তিন বছরের মধ্যে এটি সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পরে। তখন প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক বিনিয়োগকারী আকর্ষণের ক্ষমতা অর্জন করে ইন্টারনেট। ১৯৮৮ সালে আন্তর্জাতিক রূপ নেয় প্রাথমিক যুগের ইন্টারনেটটি। এরপর ১৯৮৯ সালে সুইডিশ বিজ্ঞানী টিম বার্নাল লি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (WWW) আবিষ্কার করেন। এতে করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আরও দ্রুত তথ্য আদান প্রদান সম্ভব হয়েছে।
১৯৯০ সালেই ইন্টারনেটের বহুমুখী ব্যবহার শুরু হয়। ই-মেইল, ভিডিও কল, ইনস্ট্যান্ট ম্যাসেজিং, ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল ফোন কল, সামাজিক যোগাযোগ, অনলাইনে কেনা বেচা, ব্যবসা বাণিজ্যের ওয়েব সাইট চালু হয়। ৯২ সাল থেকে সারা ইউরোপে ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালু হয়। ১৯৯৩ সালের এপ্রিলে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম প্রথম বারের মতো ‘মোজাইক’ নামক ওয়েব ব্রাউজার চালু করে।
১৯৯৪ সালে জেফ বেজোস প্রতিষ্ঠা করেন আমাজন, যার মাধ্যমে ই- কমার্সের নতুন দুনিয়ার শুরু হয়। বাংলাদেশে ইন্টারনেট চালু হয় ১৯৯৬ সালে। ১৯৯৮ সালে প্রথম গুগলের অফিস চালু হয়। ২০০১ সালে জিমি ওয়েলস এবং ল্যারি স্যাংগার তৈরি করেন উইকিপিডিয়া। যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় এনসাইক্লোপিডিয়া।
মার্ক জাকারবার্গ ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে ফেসবুক চালু করেন । সামাজিক যোগাযোগের এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আসে ফেসবুকের হাত ধরে। এরপর স্মার্ট-ফোনের যুগে প্রবেশ করার পর বর্তমানের যুগ। আজকাল ইন্টারনেট ছাড়া একটা দিন কল্পনা করুন তো?
Discussion about this post