নিজস্ব প্রতিবেদক
উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগের দাবিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা গণ-অনশন শুরু করেছেন। গতকাল শনিবার রাত ৮টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গণ-অনশনের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় আরো তিন শিক্ষার্থী নতুন করে অনশনে যোগ দেন।
এর আগে কাফনের কাপড় পরে ক্যাম্পাসে মৌন মিছিল করেন আন্দোলনকারীরা।
এ সময় সামনে খাটিয়ায় একটি প্রতীকী মরদেহ রাখা হয়। গতকাল বিকেল ৩টার দিকে মিছিলটি গোলচত্বর থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়।
পদত্যাগ সচক্ষে না দেখা পর্যন্ত আমরণ অনশন চলবে
গণঅনশনকারীদের এক ববিৃতিতে বলা হয়, শাবিপ্রবি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ৭৪ ঘন্টা টানা অনশন করে শিক্ষার্থীরা যখন মৃত্যুর দোর গোঁড়ায়, এখনও ফরিদ উদ্দিন আহমেদ নির্বিকার এবং উপাচার্যের পদ থেকে পদত্যাগ করেননি। অনশনরত শিক্ষার্থীরা তাদের অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন। এবং শাবিপ্রবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাঁদের সহযোদ্ধাদের মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে দেখে গণঅনশনে বসার সংকল্প নিয়েছে। আর সময়ক্ষেপণ না করে উপাচার্যকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে, না হয় শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ভার ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে নিতে হবে। উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ সচক্ষে না দেখা পর্যন্ত আমরণ অনশন চলবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন বিনা উস্কানিতে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ দিয়ে লাঠিচার্জ করিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের ওপর রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করিয়েছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। আহতরা যখন হাসপাতালে লাইন ধরছে, তখন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন গণমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকাল বন্ধ ঘোষণা করেন। এই ঘটনার বানোয়াট মনগড়া বর্ণনা দেন। এই ন্যক্কারজনক ঘটনায় তিনি শিক্ষার্থীদের দায়ী করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে একেবারে শুরু থেকেই কোনো সন্দেহ নেই যে, ভিসি মিথ্যুক-নির্লজ্জ ও অযোগ্য ব্যক্তি!
এতে আরও বলা হয়, শিক্ষার্থীরা ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে পদত্যাগের আন্দোলনে নামে। এরই ধারাবাহিকতায় শিক্ষার্থীরা অনশনের ঘোষণা দেয় এবং ২৩ জন শিক্ষার্থী ৭৫ ঘণ্টার বেশি সময় অনশনে থাকলেও এখন পর্যন্ত এই উপাচার্য পদত্যাগ করেননি।
শিক্ষামন্ত্রীর সাথে কথা বলতে চান শিক্ষার্থীরা :
বিবৃতিতে বলা হয়, এরইমধ্যে শিক্ষামন্ত্রী সমস্যা নিরসনে শিক্ষার্থীদের আলোচনায় বসার আহ্বান জানালে শিক্ষার্থীরা সম্মত হলেও অনশনরত শিক্ষার্থীদের অবস্থা বিবেচনা করে শিক্ষার্থীরা শিক্ষামন্ত্রীকে সিলেটে এসে অনশনরত শিক্ষার্থীদের ভয়াবহ অবস্থা স্বচক্ষে দেখে যাওয়ার অনুরোধ করেন। নয়তো অনলাইনে কথা বলার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। ২১ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে আলোচনায় বসার আমন্ত্রণ জানানোর পরও এখন পর্যন্ত কোনো যোগাযোগ করা হয়নি।
ঢাকায় প্রতিনিধিদল গিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে আগের দিন প্রথমে রাজি হয়ে পরে তা থেকে সরে আসার পর গতকাল শনিবার ফের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা করার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ক্যাম্পাসে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তাঁরা এ কথা জানান।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরণ অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়া সহপাঠীদের রেখে আমরা ঢাকায় যেতে চাই না। বর্তমানে অনলাইনে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আলোচনার মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান হচ্ছে। আমাদের সহপাঠীদের শারীরিক অবস্থা ভালো নেই। খারাপের দিকে যাচ্ছে। আমরা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলতে চাই।
টানা তিন দিনের অনশনে দুর্বল শিক্ষার্থীরা
অন্যদিকে, অনশনে অংশ নেওয়া আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা একে একে অসুস্থ হতে থাকলে দ্রুত তাঁদের হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অনেকের উঠে বসার শক্তি নেই। স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে না পারায় কাউকে কাউকে দেওয়া হচ্ছে অক্সিজেন সাপোর্ট। হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছেন তাঁরা। এ পরিস্থিতির মধ্যেও তাঁদের এক কথা—‘মৃত্যু মেনে নেব, তবু এই ভিসিকে মানব না। ’
টানা তিন দিনের অনশনে দুর্বল শিক্ষার্থীরা বললেন, ‘৭৩ ঘণ্টা হয়ে গেছে ভিসি পদত্যাগ করেননি। যতক্ষণ না পদত্যাগ করছেন, ততক্ষণ অনশনে থাকব। এই ভিসিকে ছাড় দেব না। ’
ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক জাহিদ আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে না খাওয়ার কারণে অনেক শিক্ষার্থীর সমস্যা হচ্ছে। যাদের আগে শারীরিক সমস্যা ছিল, এখন তাদের বেশি সমস্যা হচ্ছে। একজনের হার্টে সমস্যা থাকায় তার একটু জটিলতা দেখা দিয়েছিল। তবে এখন সবার অবস্থা স্থিতিশীল। আমরা তাদের পর্যবেক্ষণে রেখেছি। প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। ’
এ নিয়ে অনশনরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়াল ২৬ জনে। এর মধ্যে বর্তমানে ১৬ জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কেউ কেউ চিকিৎসা নিয়ে ফের ফিরে আসছেন অনশনস্থলে।
Discussion about this post