শিক্ষার আলো ডেস্ক
যেকোন নিয়োগ পরীক্ষার ইংরেজিতে ভালো না করে সফলতা পাওয়া কঠিন। নিয়মিত কৌশলী হয়ে পড়াশোনা করলেই ইংরেজিতে দক্ষ হওয়া সম্ভব।
যেকোন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ইংরেজিতে ভালো করার কৌশল নিয়ে ৩৮তম বিসিএস অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস ক্যাডার সুপারিশপ্রাপ্ত প্রণয় কুমার পাল ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক আব্দুল আওয়াল যেসব পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রতিযোগিতামূলক চাকরির পরীক্ষায় ইংরেজি বিষয়ের গুরুত্ব
চাকরির প্রস্তুতির আলোচনায় বিসিএসের কথা সবার প্রথমে আসে । বিসিএসে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ইংরেজিতে ৩৫ নম্বর এবং ২০০ নম্বর লিখিত পরীক্ষায় বরাদ্দ থাকে। ইংরেজিতে ২৫-৩০ নম্বর ব্যাংকের প্রিলিমিনারিতে থাকে এবং ৭০-৯০ নম্বর লিখিত পরীক্ষায় বরাদ্দ ।
অন্যান্য চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রিলিমিনারিতেও প্রায় ১৫-২০টি ইংরেজি প্রশ্ন থাকে। তাহলে আপনারা বুঝতেই পারছেন চাকরির পরীক্ষায় আপনার জন্য ইংরেজি কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
চাকরির প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ইংরেজি প্রস্তুতি ৩টি ভাগে বিভক্ত করা যায়
১. গ্রামার
২. লিটারেচার
৩. ভোকাবুলারি।
তবে ইংরেজি সাহিত্য থেকে ব্যাংকের প্রিলিমিনারি ও পরীক্ষায় খুব বেশি প্রশ্ন আসে না। গ্রামার আর ভোকাবুলারি থেকে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন হয় ।
গ্রামার অংশের প্রস্তুতি
ইংরেজি গ্রামার অংশ থেকে বিসিএস পরীক্ষায় ২০ নম্বর থাকে। এছাড়া অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষায় এই অংশ থেকেই বেশির ভাগ প্রশ্ন হয়ে থাকে। বিগত বছরগুলোর প্রশ্নগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এই ২০টি প্রশ্নের বেশির ভাগই গুরুত্বপূর্ণ কমন টপিক থেকে দেয়া হয়।
Sentence Correction হলো এদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । মূলত এটিআলাদা কোনো টপিক নয়, বরং গ্রামার আইটেমের অনেকটাই সমন্বিত টপিক। এগুলোর মধ্যে Subject-Verb Agreement, Illogical Comparisons, Parallelism, Dangling/Misplaced Modifiers, Inversions-সহ অন্যান্য বিষয় অন্তর্ভুক্ত।
তবে উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকলে যেভাবেই Sentence Correction আসুক না কেন, আপনি উত্তর দিতে পারবেন।আপনাকে মনে রাখতে হবে যে বেশির ভাগ প্রশ্ন কিন্তু এগুলো থেকেই আসবে।
* কখনোই গ্রামার মুখস্থ করবেন না। এখানে প্রতিটি বিষয়বস্তু বুঝে অনুশীলন করতে হবে। যত বেশি চর্চা করবেন, তত বেশি অগ্রসর হবেন; আর নিজের ভুলগুলো নিজেই ধরতে পারবেন। নমুনা প্রশ্ন দেখে অনুশীলন করলে পরীক্ষায় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উত্তর করতে পারবেন।
যে বই থেকেই পড়েন না কেন, পড়ার সময় আলাদা একটি নোট খাতা রাখবেন। গুরুত্বপূর্ণ নিয়মগুলো দু-একটি উদাহরণসহ লিখে রাখতে পারেন অথবা পড়ার সময় আপনি বইয়ে হাইলাইটার দিয়ে দাগিয়ে রাখতে পারেন, যেন পরীক্ষার পূর্বে অল্প সময়ে দ্রুত রিভিশন দিতে পারেন।
*Preposition, Idioms and Phrases, Article ও Group Verb—এই টপিকগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকে প্রশ্ন আসবেই। এ ছাড়া আরো কিছু টপিক যেমন—Parts of Speech, Identification of Clause, Conditional Sentence, Embedded Question, Degree of Comparisons, Voice, Narration,—এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ টপিক।
ইংরেজি গ্রামারে অনেক টপিক থাকলেও আশা করা যায় পরীক্ষায় সর্বাধিক কমন পাবেন এই টপিকগুলো পড়লে।
*এসব টপিকের জন্য TOEFL Cliff’s & Barron’s, Common Mistakes in English by T. J. Fitikides-এর পাশাপাশি বাজারের ভালো মানের দু-একটি নিয়োগ প্রস্তুতির বই অনুশীলন করতে পারেন।
গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলোর মধ্যে যেটি যে বইয়ে তুলনামূলক সহজবোধ্য মনে হয়, সেটি সেখান থেকে পড়লেই ভালো।
যেভাবে ভোকাবুলারি প্রস্তুতি নিবেন
ভোকাবুলারি বাদ দিয়ে আপনি ইংরেজিতে ভালো করার কথা চিন্তাই করতে পারবেন না। বেশির ভাগ চাকরির নিয়োগের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ভোকাবুলারিভিত্তিক প্রশ্ন বেশি আসে। তাই এ বিষয়ে কোনোভাবেই হেলাফেলা করা যাবে না।
Synonym, Antonym, Analogy, Correct Spelling ইত্যাদি টপিকস ভোকাবুলারি অংশের মধ্যেই পড়ে। তাছাড়া লিখিত পরীক্ষায় Reading Comprehension, Translation থেকে শুরু করে Free hand writing—প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভোকাবুলারিতে দক্ষতা একান্ত প্রয়োজন।
বাজারে ভোকাবুলারির জন্য প্রচুর বই রয়েছে। তাই একটু কৌশলী হলে দ্রুত ভোকাবুলারি আয়ত্ত করা যায়
* নিয়মিত ইংরেজি পত্রিকা পড়ুন,গুরুত্বপূর্ণ শব্দগুলোর তালিকা করুন। অজানা শব্দগুলোর অর্থ যখন-তখন জানতে স্মার্টফোনে ‘ইংরেজি থেকে বাংলা’ ডিকশনারী অ্যাপ ইনস্টল করে রাখুন।
তাহলে পত্রিকা পড়ার সময় অজানা-দুর্বোধ্য শব্দগুলোর অর্থ সহজেই দেখে নিতে পারবেন।মন চাইলে অবসর সময়েও বসে বসে পড়তে পারবেন।
* GRE Vocabulary Builder-Magoosh GRE-অ্যাপটি আপনার স্মার্টফোনে ইনস্টল করে নিলে এখানে আপনি কুইজ দিতে পারবেন। বিভিন্ন পর্যায়ে আপনার অবস্থান যাচাই করতে পারবেন।
* নেমনিক বা মনে রাখার কৌশল ব্যবহার করে শব্দ শেখা যায়।mnemonicdictionary.com এই ধরনের ওয়েবসাইটে আপনি মনে রাখার মতো কৌশল পাবেন। এ ছাড়া বাজারে নেমনিকসহ এ জাতীয় বিভিন্ন বই পাওয়া যায়, সেগুলোও দেখতে পারেন।
* শব্দের Root, Suffix, Prefix এগুলো বুঝে বুঝে পড়ুন। তাহলে অল্প পড়েই এ সম্পর্কিত বহু শব্দ শেখা হয়ে যাবে।
*এ ছাড়া বাজারে চাকরির পরীক্ষার বিভিন্ন বই থেকেও ভোকাবুলারি পড়তে পারেন। মনে রাখবেন, ভোকাবুলারি পড়ার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সেগুলো রিভাইস ও প্রয়োগ করা।
প্রতিনিয়ত চর্চায় না থাকলে আপনি কখনোই ভোকাবুলারিতে ভালো করতে পারবেন না। তাই নিয়মিত ভোকাবুলারি অনুশীলন করুন। তাহলে দেখবেন, আর মুখস্থ করতে হবে না, এমনিতেই অনেক শব্দ আয়ত্তে চলে এসেছে।
যেভাবে ইংরেজি লিটারেচার অংশের প্রস্তুতি নিবেন
বিসিএস পরীক্ষায় ইংরেজি লিটারেচারে ১৫ মার্কস থাকে। এ ছাড়া সরকারি কর্ম কমিশনসহ অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষায় দু-চারটি লিটারেচারের প্রশ্ন আসতে দেখা যায়। বিসিএসে এই অংশটা প্রিলিমিনারিতে জাদুর মতো সাহায্য করতে পারে।
আপনি এত অল্প পড়ে আর কোনো বিষয়ে এই টপিকের মতো কমন পাবেন না।
* বিসিএসসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় আসা আগের বছরের প্রশ্নগুলো প্রস্তুতির শুরুতেই চর্চা করুন।
* কোন সাহিত্যিক কোন যুগের এটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে Elizabethan, Romantic, Victorian ও Modern যুগ।তাই ইংরেজি সাহিত্যের যুগ সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা রাখুন।
পিরিয়ডের প্রধান প্রধান সাহিত্যিক ও সাহিত্যকর্মের নামগুলো ভালো করে পড়তে হবে।
* William Shakespeare, William Wordsworth, John Keats, Charles Dickens, GB Shaw এর মত বিখ্যাত সাহিত্যিকের বিখ্যাত গ্রন্থ এবং উক্তিগুলো ভালো করে পড়ুন।
* Google এ সার্চ দিয়ে বিখ্যাত গ্রন্থগুলোর মূলভাবটি পড়ে নিতে পারেন। এতে সহজেই মনে থাকবে!
* Literary terms ও সাহিত্যকর্মের ধরনগুলো গুরুত্বসহকারে পড়ুন।
ইংরেজি সাহিত্য অনেক বিশদ একটি বিষয় তাই অনেকের এই বিষয়ে যথেষ্ট ধারণা না থাকাটা স্বাভাবিক। প্রথমে কঠিন মনে হলেও কয়েকবার পড়ে দেখুন, ধীরে ধীরে এটা হয়তো আপনার কাছে ভালো লাগতে শুরু করবে।
বাজারে ইংরেজি সাহিত্যের ওপর বিক্রি হওয়া বইগুলো ঘেঁটে তুলনামূলক সহজ একটি বই সংগ্রহ করতে পারেন।
লিখিত পরীক্ষার ইংরেজির ভিত্তি তৈরির কৌশল
যদি প্রিলিমিনারি পরীক্ষার টপিকগুলো ভালো করে আয়ত্ত করতে পারেন, তাহলে লিখিত পরীক্ষায় আপনি এমনিতেই এগিয়ে থাকবেন। কারণ আপনি ল্যাঙ্গুয়েজের বেসিকটা শিখে ফেলেছেন। এখন শুধু ব্যাকরণ আর বানান—এ দুটি বিষয়ের দিকে নজর রাখলেই চলবে।
* ব্যক্তিগত বা অফিশিয়াল ই-মেইল বা লিখিত যোগাযোগ ইংরেজিতে করুন। লেখায় ভুল হলো কি না, এটা নিয়ে সংশয় থাকলে ব্রাউজারে Grammarly (www.grammarly.com) অ্যাড-অন ইনস্টল করতে পারেন। লেখায় ভুল বানান ধরার জন্য এটি দারুণ একটি ওয়েব টুল।
* প্রতিদিন ইংরেজি কিংবা বাংলা পত্রিকার লেখা অনুবাদ (বাংলা থেকে ইংরেজি ও ইংরেজি থেকে বাংলা) চর্চা করতে পারেন, বিশেষ করে সম্পাদকীয় অংশ। পরীক্ষায় অনুবাদ ও ফ্রি হ্যান্ড রাইটিংয়ে এটি অনেক কাজে দেবে।
* Translation বা অনুবাদের জন্য Dr. Mohiuddin-এর লেখা Translation for competitive exam বইটি অনুশীলন করতে পারেন। বইটিতে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় বিগত সালে আসা প্রচুর Translation (সমাধান, ব্যাখ্যাসহ) দেওয়া আছে। এগুলো বেশি বেশি অনুশীলন করবেন।
Discussion about this post