শিক্ষার আলো ডেস্ক
শিক্ষাজীবনের বড় একটি অধ্যায় পার করাকে জেল থেকে মুক্তির আনন্দের মতো করে উদযাপন করেছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। তাদের পরনে ছিল কয়েদির পোশাক, মাথায় কয়েদি টুপি আর চোখে-মুখে মুক্তির আনন্দের ঝিলিক। তাদের ব্যতিক্রমী এ উদযাপন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নজর কেড়েছে।
শুধু তাই নয়, কারাগারে থাকা অবস্থায় কয়েদিরা যা যা করেন তার সবই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন ছাত্রছাত্রীরা। ‘কারার ঐ লৌহকপাট, ভেঙে ফেল কর রে লোপাট’ গানের তালে তালে উল্লাসধ্বনি আর নাচে মাতোয়ারা করেন ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক জীবনের শেষ ক্লাসের ‘সেলিব্রেশন ডে’ উদযাপনের জন্য এমন ব্যতিক্রমী সাজে সেজেছিলেন তারা।
ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, কুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শেষ ক্লাস হওয়ার কথা ছিল রোববার (২৩ জানুয়ারি)। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ক্লাস আর হয়নি। তবে তাদের উদযাপন থেমে থাকেনি। নানা আয়োজনে মজায় মজায় দিনটি কাটিয়ে দেন তারা।
কুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বলছেন, কয়েদিরা জেলের মধ্যে আটকা থাকেন। আর তারা আটকা ছিলেন করোনার কারণে। এজন্য শিক্ষাজীবন শেষে কয়েদিদের মতো করেই দিনটি উদযাপন করেছেন তারা।
আয়োজক সূত্র জানায়, রোববার সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্বার বাংলায় জড়ো হয়ে ‘ME-১৬’ (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ১৬) লিখে ছবি তোলেন শিক্ষার্থীরা। এরপর কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে গিয়ে তোলেন আরও নানান ঢঙের ছবি। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শোভাযাত্রা শুরু করে মুক্তমঞ্চের সামনে কিছু সময় উদযাপন করেন তারা।
এরপর একজন শিক্ষার্থী জেলার সেজে ঘণ্টা বাজিয়ে কারাগারের আবহ তৈরি করেন। কয়েদিদের মতো বাকিরা থালা নিয়ে একে একে লাইনে দাঁড়িয়ে ছাত্রকল্যাণ কেন্দ্রের প্রাঙ্গণে খেতে বসে যান। খাওয়া শেষে কয়েদিরা অ্যাপ্লায়েড থার্মোডাইনামিকস ল্যাব কুইজ মোকাবিলা করেন। এরপর মোরগ লড়াই, হাডুডু আর কারামুক্তি ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। কারামুক্তির উল্লাসে কেক কাটা এবং ‘না বুঝি দুনিয়া না বুঝি তোমায়’ গানে কোমরও দুলিয়েছেন যন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
যন্ত্রকৌশল ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং আয়োজকদের একজন ফরিদ-উজ-জামান বলেন, শেষ ক্লাস উদযাপনে ‘ইউনিক’ কিছু করতেই ব্যতিক্রমী এ আয়োজন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, করোনার কারণে আমরা সময়মতো গ্র্যাজুয়েশন শেষ করতে পারিনি। এখনো একটা সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা ও থিসিস বাদ রয়েছে। আমাদের যেসব বন্ধু বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন, তারা তাদের স্নাতক শেষ করে ফেলেছেন। করোনা আমাদের সময়টাকে নিয়ে গেছে। আমাদের হতাশা থেকেই এই থিম বেছে নেওয়া।
‘কয়েদিরা জেলের মধ্যে আটকা থাকেন, আমরাও করোনার জন্য আটকা ছিলাম। আটকা থাকার বিষয়টিকে আমরা “কয়েদি” পোশাক দিয়ে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। আমরা মজা করার জন্য এসব করেছি। এর বাইরে কিছু না।’
আয়োজকদের আরেকজন ইশতিয়াক অয়ন বলেন, করোনা আমাদের শেষ ক্লাসটাও সশরীর হতে দিলো না। তারপরও আমরা আয়োজন করেছি। এই দিন তো আর ফিরে আসবে না। তিন বছর ধরে আত্মীয়-স্বজন সবাই শুধু বলে আর তো মাত্র কয়েকটা দিন, মাত্র কয়েকটা দিন। সেটাই লম্বা হতে হতে অবশেষে শেষ হচ্ছে। আমাদের জীবনটা একটা জেলখানা হয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে বের হতে পারছিলাম না। অবশেষে এ রকম থিমে মুক্তির আনন্দ।সৌজন্যে-জাগো নিউজ
Discussion about this post