আন্তর্জাতিক ডেস্ক
পশ্চিমাদের সামরিক ন্যাটো মিত্ররা নিজেদের সেনাদের সতর্ক অবস্থায় রেখেছে এবং পূর্ব ইউরোপে অতিরিক্ত সেনা পাঠাচ্ছে। এমন সময় তারা এসব উদ্যোগ নিচ্ছে যখন তারা আশঙ্কা করছে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে। ইউক্রেন সীমান্তে লক্ষাধিক সেনা মোতায়েনের পর তাদের এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের কাছে ইউক্রেন আক্রমণের পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করে আসছে রাশিয়া। তারা তাদের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। তারা চায় না পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সম্প্রসারণ এবং সাবেক সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলোকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেওয়া হোক। বুধবার ফ্রান্সে চতুর্মুখী বৈঠকে রাশিয়ার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়া যদি সত্যিই ইউক্রেনে আক্রমণ চালায় তাহলে ন্যাটো কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে, তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ইউক্রেনকে রক্ষায় ন্যাটো কি এগিয়ে আসবে?
সামরিকভাবে না। ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য নয় এবং তাদের মধ্যে যে চুক্তি আছে তাতে ইউক্রেনকে রক্ষার বাধ্যবাধকতা নেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তিনি ইউক্রেনে রাশিয়ার সঙ্গে লড়াই করতে মার্কিন ও মিত্র সেনাদের পাঠাবেন না। তবে ন্যাটোর ঘনিষ্ঠ অংশীদার কিয়েভ এবং ২০০৮ সালের ন্যাটো সম্মেলনে দেশটিকে সদস্য করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
এই মুহূর্তে ৩০ সদস্য রাষ্ট্রের ন্যাটো কাজ করছে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে কাজ করছে। কানাডা একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করছে। ডেনমার্ক কাজ করছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে ন্যাটোর মানে নিয়ে আসতে। জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা ইউক্রেনকে সাইবার হামলা ঠেকাতে সহযোগিতা করবে। সামরিক কমান্ডের জন্য গোপন যোগাযোগের সরঞ্জামও দিচ্ছে ন্যাটো।
ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহের কী অবস্থা?
যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও বাল্টিক দেশগুলো ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠাচ্ছে। এরমধ্যে রয়েছে ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, ছোট আগ্নেয়াস্ত্র ও নৌযান। তুরস্ক ইউক্রেনের কাছে ড্রোন বিক্রি করেছে। এসব ড্রোন ইউক্রেনের সেনাবাহিনী পূর্বাঞ্চলে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে।
জার্মানি ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহের বিরুদ্ধে। বার্লিন একটি ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণ এবং তা পরিচালনায় ইউক্রেনীয় সেনাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেবে। এই প্রকল্পে ব্যয় হবে ৬০ লাখ ডলার।
তাহলে কেন সেনাদের সতর্ক অবস্থায় রেখেছে ন্যাটো?
রাশিয়া ও ইউক্রেনের সম্ভাব্য সংঘাতের রেশ ছড়িয়ে পড়া নিয়ে উদ্বিগ্ন ন্যাটো, বিশেষ করে কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে। ২০১৪ সালে এই অঞ্চলে ক্রিমিয়াকে নিজেদের ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করেছে রাশিয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সাড়ে আট হাজার মার্কিন সেনাকে সতর্ক অবস্থায় রেখেছে। বাল্টিক সাগরে একটি ফ্রিগেট এবং লিথুয়ানিয়ায় চারটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাঠাচ্ছে ডেনমার্ক। স্পেন একটি মাইন সুইপার ও একটি ফ্রিগেট পাঠিয়েছে, যা ভূমধ্যসাগরে ন্যাটোর নৌবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হবে। বুলগেরিয়ায় যুদ্ধবিমান পাঠানোর বিষয়টিও বিবেচনা করছে মাদ্রিদ। এপ্রিল থেকে বুলগেরিয়ায় দুটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান মোতায়েনের প্রস্তাব দিয়েছে নেদারল্যান্ডস। ন্যাটো কমান্ডের অধীনে রোমানিয়ায় সেনা পাঠাতে পারে ফ্রান্স।
মিত্ররা কেন দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে না?
রাশিয়া বলছে ইউক্রেনে হামলা চালানোর কোনও পরিকল্পনা তাদের নেই। রাজনৈতিক ও সামরিক সংস্থা ন্যাটো মস্কোর সঙ্গে আরও আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে। ব্রাসেলসে ন্যাটো-রাশিয়া কাউন্সিলের ফরম্যাটে একটি সমাধানে এই আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন অগ্রাধিকার থাকা ৩০টি দেশের জোট হিসেবে ন্যাটো সিদ্ধান্ত গ্রহণ হতে সর্বসম্মতিক্রমে এবং যৌথ মিশন অনুমোদন তাই সময়সাপেক্ষ।
ন্যাটো মিত্ররা আলোচনা করছে পূর্ব ইউরোপে সেনা উপস্থিতি বাড়ানো হবে কিনা। মধ্য ফেব্রুয়ারিতে ব্রাসেলসে যখন জোটের প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা বৈঠকে বসবেন তখন এই বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে।
কানাডা, জার্মানি, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, এস্তোনিয়া ও পোল্যান্ডে ন্যাটোর ব্যাটালিয়ন আকারের চারটি বহুদেশীয় ব্যাটল গ্রুপ বা যুদ্ধবাহিনী রয়েছে। ন্যাটোর ৪০ হাজার শক্তিশালী রেসপন্স ফোর্সের অগ্রবাহিনী হিসেবে এই ব্যাটল গ্রুপ কাজ করে।
জুনের আগে হয়তো বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না ন্যাটো। ওই সময় মাদ্রিদে সম্মেলনে অংশ নেবেন ন্যাটো নেতারা। ওই সম্মেলনে তারা একটি নতুন মাস্টারপ্ল্যানের বিষয়ে একমত হতে পারেন, এটিকে কৌশলগত ধারণা হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। রাশিয়াকে মোকাবিলায় ন্যাটোর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করাই এর লক্ষ্য।
কৃষ্ণসাগরে কী করতে পারে ন্যাটো
বুলগেরিয়ার সরকার জানিয়েছে তারা আরও ১ হাজার বিদেশি সেনা গ্রহণে প্রস্তুত। হয়তো মিত্র দেশগুলো থেকে আসা আরও সেনাকে জায়গা দিতে পারে তারা। এপ্রিল বা মে মাসে এমন কিছু হতে পারে।
রোমানিয়ায় পশ্চিমা জোটের বহুদেশীয় পদাতিক বাহিনীর ৪ হাজার সেনা রয়েছে। পৃথকভাবে রোমানিয়া ও বুলগেরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কিছু সংখ্যক সেনা মোতায়েন আছে।
ফ্রান্স আরও সেনা পাঠানোর প্রস্তাব দেওয়ায় রোমানিয়ায় হয়তো মিত্র সেনার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। নিজ মাটিতে সেনা বাড়ানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করছে দেশটি। যদিও ২০১৭ সাল থেকে রোমানিয়ায় বহুজাতিক পদাতিক সেনাদের একটি কমান্ড রয়েছে, নেই কোনও বিমান, নৌ বা স্পেশাল ফোর্স কমান্ড।সৌজন্যে-বাংলা ট্রিবিউন
Discussion about this post