জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে শুরু করে পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্সসহ দেশের অভ্যন্তরে গুরুত্বপূর্ণ কার্যকলাপের জন্য একটি অপরিহার্য নথি জন্ম নিবন্ধন সনদ। জন্মসূত্রে একজন ব্যক্তির নাগরিকত্বের পরিচয় ধারণ করে এই জন্ম নিবন্ধন সনদপত্রটি। তাই শিশু জন্মের পর পরই অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজের পাশাপাশি বাবা-মায়ের উচিত সরকারি খাতায় শিশুর নামটি লিপিবদ্ধ করানো। পূর্বে জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অফলাইনে হলেও বর্তমানে সরকারি ডাটাবেসে নাগরিকদের তথ্য সংরক্ষণের স্বার্থে অনলাইনের মাধ্যমে তথ্যগুলো নেয়া হচ্ছে। চলুন জেনে নিই, জন্ম নিবন্ধন করার সর্বাধুনিক প্রক্রিয়া।
জন্ম নিবন্ধন করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
জন্ম নিবন্ধনের জন্য প্রথমেই কিছু কাগজপত্র প্রস্তুত রাখতে হবে। এর জন্য বিভিন্ন বয়সের লোকদের জন্য কাগজপত্রেও ভিন্নতা রয়েছে।
১। অনলাইনে আবেদনকৃত ফর্মের প্রিন্ট কপি।
২। শিশুর এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
৩। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল স্বীকৃত এমবিবিএস বা তদূর্ধ্ব ডিগ্রিধারী চিকিৎসক-এর নিকট থেকে প্রত্যয়ন পত্র।
৪। পিএসসি(প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী), জেএসসি (জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট) বা এসএসসি (মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট)।
৫। বাংলা-ইংরেজি দুই ভাষাতেই বাবা-মায়ের অনলাইনে নিবন্ধিত জন্ম সনদ।
৬। বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র।
৭। জন্মস্থান বা স্থায়ী ঠিকানা প্রমাণের সাপেক্ষে বাবা/মা/দাদা/দাদির স্বনামে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে উল্লেখিত জায়গার বিপরীতে নবায়নকৃত কর প্রদানের প্রমাণপত্র
বর্তমানে হাতে লিখে ফর্ম পূরণের মাধ্যমে আর জন্ম নিবন্ধনের আবেদন নেয়া হয় না। অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করে অতঃপর সেই পূরণকৃত ফর্ম প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ নিকটস্থ স্থানীয় সরকারের কার্যালয়ে জমা করতে হয়।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন-এর জন্য আবেদন করতে প্রথমে যেতে হবে বাংলাদেশ সরকারের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের ওয়েবসাইটে।
প্রথম স্ক্রিনে জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহের জন্য স্থানীয় সরকারের অফিস নির্বাচন করতে হবে। প্রার্থী তার নিজের জন্মস্থান, স্থায়ী ঠিকানা অথবা বর্তমান ঠিকানা থেকে সনদ নিতে পারবে।
এরপরের ধাপে আসবে প্রার্থীর নাম-ঠিকানা ও বাবা-মার তথ্য দেয়ার পালা। প্রার্থীর জন্ম ২০০১-এর আগে হলে বাবা-মার শুধুমাত্র নাম দিলেই হবে। অন্যথায় বাবা-মার জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার দিতে হবে।
সবশেষে প্রার্থীর ফোন নম্বর দিতে হবে যেখানে জন্ম সনদের আবেদন সংক্রান্ত বার্তা আসবে।
অনলাইন আবেদন সম্পন্ন হলে প্রাপ্ত আবেদনপত্রটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করতে হবে। অতঃপর এর সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো সংযুক্ত করে নিকটস্থ স্থানীয় সরকারের কার্যালয়ে সর্বোচ্চ ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন ফি’সহ জমা দিতে হবে।
জমা দেয়ার সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অফিস কপি রেখে একটি গ্রাহক কপি দিবে। অবশেষে মোবাইলে জন্ম সনদ নিশ্চিতকরণ বার্তা এলে সনদটি নেয়ার দিন এই গ্রাহক কপিটি সাথে নিয়ে যেতে হবে।
অনলাইন আবেদন শেষ করার পর একটি অ্যাপ্লিকেশন আইডি দেয়া হয়। এই আইডিটি ও প্রার্থীর জন্ম তারিখ প্রদান করে অনলাইনেই জন্ম নিবন্ধন আবেদনের চলমান অবস্থা জানা যাবে।
জন্ম নিবন্ধন-এর জন্য প্রয়োজনীয় ফি ও সময়
১। ৪৫ দিন বয়সী শিশুর জন্ম নিবন্ধন বিনামূল্যেই করা যাবে।
আবেদনপত্রের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা/ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে জমা দেয়ার সময় জন্ম নিবন্ধন ফি প্রদান করতে হবে। সাধারণত আবেদনের দিন থেকে ৫ কর্ম দিবসের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু প্রায়শই মাস খানেকের মত সময় লেগে যায় জন্ম সনদটি হাতে পেতে।
জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধনের শর্তাবলি
বাবা অথবা মায়ের নাম সংশোধন করার ক্ষেত্রে তাদের অনলাইনে নিবন্ধিত জন্ম সনদ নম্বর দিয়ে তথ্য সংশোধনের এর আবেদনপূর্বক তাদের নাম সংশোধন করতে হবে। তারপর প্রার্থীর জন্ম নিবন্ধনে বাবা-মায়ের নাম সংশোধনের জন্য আবেদন করা যাবে।
বাবা-মায়ের জন্ম সনদ না থাকলে এবং প্রার্থীর জন্ম তারিখ ২০০১-এর আগে হলে, তার জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য আবেদনের সময় বাবা-মায়ের নাম ঠিক করা যাবে। সেক্ষেত্রে তাদের কেউ মৃত হলেও মৃত্যুর কোনো প্রমাণ দেখাতে হবে না। সেই সাথে আলাদা করে তাদের জন্ম নিবন্ধন সনদ সংশোধনেরও কোনো ব্যাপার থাকছে না।
কিন্তু প্রার্থী ২০০১ এর পরে জন্মগ্রহণকারী হলে জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদনের সময় পিতা বা মাতার নাম সংশোধনের জন্য তাদের মৃত্যুর প্রমাণপত্র দাখিল করতে হবে।
এখানে প্রথমেই খেয়াল রাখতে হবে যে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য জন্ম সনদটি অবশ্যই অনলাইনে নিবন্ধিত থাকতে হবে। অন্যথায় অনলাইন জন্ম নিবন্ধন করে নিতে হবে।
জন্ম নিবন্ধন সনদের তথ্য সংশোধনের জন্য একই ওয়েবসাইটের জন্ম তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন অংশে প্রবেশ করতে হবে। প্রথমেই সংশোধনের নির্দেশনাসহ দুইটি খালি বক্স দেখা যাবে।
প্রথমটিতে জন্ম সনদে উল্লেখিত ১৭ সংখ্যার জন্ম নিবন্ধন নম্বর আর দ্বিতীয়টিতে জন্ম তারিখ প্রদান করতে হবে। অতঃপর ক্যাপচা প্রদর্শনের পর তা পূরণ করলেই সার্ভারে লিপিবদ্ধ ব্যক্তির জন্ম সনদ সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যাবলি দেখা যাবে। এখানে তথ্যগুলোর প্রয়োজনীয় সংশোধনের মাধ্যমে আবেদন করা যাবে।
আবেদন সম্পন্ন হলে পূরণকৃত ফর্মটি প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা/ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে জমা দিতে হবে। এখানে ১০ থেকে ১৫ কার্যদিবসের কথা উল্লেখ থাকলেও সাধারণত আরো বেশি সময় লাগতে পারে সংশোধিত জন্ম সনদটি হাতে পেতে।
এখানে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলোর মধ্যে যেগুলো প্রস্তুত রাখতে হবে তা হলো-
৩। শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদপত্র কিংবা টিকা সনদ
জন্ম নিবন্ধন সনদ-এর জন্য আবেদনের অনলাইন প্রক্রিয়াটি গুরুত্বপূর্ণ এই কার্যক্রমটিকে আরও গতিশীল ও ঝামেলাহীন করেছে। এখন আবেদন জমা দেয়ার পরের প্রক্রিয়াটি আরও নিরবচ্ছিন্ন করা প্রয়োজন। গ্রাহকদের অনেকেই জন্ম নিবন্ধন ফি এবং সনদ প্রাপ্তি নিয়ে নেতিবাচক অভিমত ব্যক্ত করছেন। এই সমস্যা নিরসনে ব্যাক-অফিসে কারিগরি দিক থেকে দক্ষ লোকবল এবং নতুন-পুরাতন জন্ম নিবন্ধনগুলোর প্রক্রিয়াকরণে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। ইতোমধ্যে জন্ম নিবন্ধিত নাগরিকদের পুনরায় অনলাইনে নিবন্ধন করার বিষয়টি ব্যবস্থাপনায় অকর্মদক্ষতা প্রকাশ করে। অনলাইনে আবেদন করে যাচাই-বাছাইয়ের নির্দিষ্ট কার্যদিবস পর অনলাইন থেকেই সরকার কর্তৃক ইস্যুকৃত জন্ম নিবন্ধন প্রাপ্তিই দেশকে চূড়ান্তভাবে ডিজিটালকরণ করতে পারে।
Discussion about this post