নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দাবিতে আজ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ২০২০ সালের এইচএসসি উত্তীর্ণরা। আজ রবিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হয়েছে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ছাত্রছাত্রীরা।
আন্দোলনরতরা জানান, আমরা আজ বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করব। পূর্বেও আমরা অনেকবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখনও কোন সদুত্তর পাইনি। তাই আমরা কঠোর কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
বরিশাল থেকে আগত কাউছার বলেন,একবারে একজন শিক্ষার্থীকে কোনোভাবেই বিচার করা যায় না। তার মেধাকে কাজে লাগাতে আরো একবার সুযোগ দেওয়া উচিত। পৃথিবীর বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ রয়েছে যেগুলোর অবস্থান ৫০০ এর ভিতরে। আমরা চাই আমাদের এই ন্যায্য দাবি মেনে নেয়া হোক। তিনি এই আন্দোলনে সকলকে শামিল হবার উদাত্ত আহ্বান জানান এবং দাবি আদায় করে ঘরে ফেরার প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন।
অন্যতম মুখপত্র সংগ্রাম খান জানান, এ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ ভাবে কর্মসূচী চলছে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের স্যাররা যথেষ্ট সহযোগিতা করছেন।স্যাররা বলেছেন, কর্মসূচী পালন করো, তবে যেন শান্তিপূর্ণ হয়।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যান ও শিক্ষামন্ত্রী ২য় বার ভর্তি পরীক্ষার প্রতি তাঁদের সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। আজকের অবস্থান কর্মসূচি চলাকালীন ঢাবি প্রশাসন যদি আমাদের দাবি মেনে না নেয় তাহলে আজ থেকেই আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করবো। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে ।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মহিবুল ইসলাম দাউদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনেক ভুল সিদ্ধান্তের কারণে শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন শেষ হয়ে যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেকেন্ড টাইম দেয়ার বিষয়ে কোন ধরনের কর্ণপাত করেনি। শিক্ষামন্ত্রী থেকে শুরু করে অনেক শিক্ষক সেকেন্ড টাইম দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। মেডিকেল কলেজে সেকেন্ড টাইম থাকে কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নাই। এটা হতে পারে না। এটা একজন শিক্ষার্থীর অধিকার। আমাদের দাবি মেনে নেয়া না হলে আমরা অনশনে যাব। ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করব।
অপর একজন শিক্ষার্থী ওয়ালিউল্লাহ বলেন, করোনা সংকটে হাজারো ছাত্রছাত্রী শহর ছেড়ে গ্রামে আশ্রয় নেয়। তারা অর্থ সংকট ,ইন্টারনেট সংকট ইত্যাদি কারণে ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি ভালোভাবে নিতে পারে নাই। গুচ্ছ পদ্ধতি না হলে ২০টাতে ২০টি পরীক্ষা দেওয়া যেত যার ফলে কোন কারণ বশত একটি পরীক্ষা খারাপ হলেও আরেকটা ভালো করার সুযোগ থাকতো কিন্তু গুচ্ছে সুযোগ একটি পরীক্ষাই মাত্র। তাছাড়া গুচ্ছ পদ্ধতির কারণে অনেকেই পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ ই পায় নি কিন্তু গুচ্ছ পদ্ধতি না থাকলে cou,nstu,sust, etc আরও অনেক গুলাতে কম জিপিএ নিয়েও অন্তত একটা পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেকে খানিকটা প্রমান করার সুযোগটা পেতো কিন্তু গুচ্ছের সিলেকশন পদ্ধতির কারণে অনেকেই এই সুযোগটুকু পাইনি। অথচ আজ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শত শত আসন খালি পড়ে আছে।
প্রসঙ্গত, দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ রাখলে অনেক মেধাবী ছাত্র ঢাবিতে পড়ার সুযোগ পাবেন না- এ ধারণা থেকে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর ঢাবি কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করে। ঢাবির এ সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তিচ্ছুরা তখন আন্দোলন করেছিলেন। এছাড়া ঢাবি কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে ২৬ জন অভিভাবক আদালতে রিটও করেছিলেন।
কিন্তু এ পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরপর বেশ কটি বিশ্ববিদ্যালয় একই পথ অনুসরন করে।
সবশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচীর ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনকারীরা।
Discussion about this post