ছয়শ’ টাকা করে অনেকটা শখের বসে পকেটমানি থেকে সাশ্রয়ের পয়সায় রোস্ট আর বিরিয়ানি রান্না করে বিক্রি করেছিলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের ২১ বছর বয়সের শিক্ষার্থী আফরোজা সুপ্তি। প্রথম দিনেই তিনশ’ টাকার বিনিয়োগে তিনশ’ টাকা লাভ। মাত্র একবছর আগে গল্পের শুরুটা এভাবেই। এখন তার কয়েক লাখ টাকার ফুড বিজনেস। প্রতিমাসে তার আয় লাখের কোটা পেরিয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে গণ্ডি পার হওয়ার সময় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, বেড়ানো নৈমিত্তিক বিষয়। কিন্তু সেই নৈমিত্তিক স্রোতে পা দেননি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সুপ্তি।
তার খাবারের পরিবেশনার গণ্ডি অনেক দূরে। নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও শহরের বিভিন্ন অনুষ্ঠান, বিয়ে, গায়ে হলুদ, কর্পোরেট আয়োজনে সুপ্তির খাবার পরিবেশিত হয়। লেখাপড়ার সঙ্গে নিজের প্রতিভা কাজে লাগিয়ে অনন্য উচ্চতায় নিজেকে নিয়ে গেছেন সুপ্তি। এখন ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় হোম টাউন ফুড নামে তার ফুড বিজনেস রয়েছে।
আফরোজা সুপ্তি গণমাধ্যমকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই নির্ভরশীলতা বা চাকরি নয়, নিজের চেষ্টায় কিছু করার ইচ্ছা জাগে। কোনো কিছু করার পরিকল্পনা ছিল না। তবে রান্নার শখ বরাবরই ছিল। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় থাকার সময় মজার ছলে পোলাও ও চিকেন রোস্ট রান্না করে দেয়ার অর্ডান নেই। ৩০০ টাকায় পোলাও-এর চাল, মশলা ও মুরগি কিনি। ৩০০ টাকার পুঁজির খাবার ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।
তিনি আরো বলেন, রান্নাকে ব্যবসার হাতিয়ার হিসেবে নেয়ার পরিকল্পনা চলে আসে। তাই ভালোভাবে রান্না শেখার চেষ্টা করি। ধারাবাহিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিন ও পরিচিতদের কাছ থেকে অর্ডার নেয়া শুরু করি। ৮০ টাকা থেকে ২৫০ টাকায় খাবার বেশ সাড়া ফেলে দেয়। ওই বাজেটের মাঝে মজাদার, হাইজেনিক, ঘরে তৈরি দেশি-বিদেশি সব মেন্যুর খাবার পরিবেশন করায় চারদিকে সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তারপর ঢাকার বসুন্ধরা, বারিধারা, বনানীসহ আশেপাশের এলাকায়ও হোম টাউন ফুডের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে।
তিনি জানান, নিজের বাসায় নিজেই রান্না করেন। প্রতিদিন তার বাসায় পোলাও, বিরিয়ানি, রোস্ট, চাইনিজ, কন্টিনেন্টাল, ফাস্টফুড, নানা ধরনের ফ্রোজেন ফুডসহ মুখরোচক ও সাশ্রয়ী দামের সব খাবার তৈরি হয়। মাত্র ২০০ টাকায় ‘বিয়ে বাড়ির সেট মেনু’ এবং চিজ বল সরবরাহ করেন। মাত্র ১০০ টাকায় লাঞ্চ সেট মিল কর্পোরেট অফিসে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সহযোগিতার জন্য বেশ কয়েকজন কর্মী রয়েছেন।
আগামীর পরিকল্পনা সম্পর্কে সুপ্তি বলেন, ফুড বিজনেসের পাশাপাশি আমি এখন ফ্যাশন রিলেটেড ব্যবসাও শুরু করেছি। স্বপ্ন রয়েছে ঢাকা শহরে একটি বড় রেস্টুরেন্ট করার।
৩০০ টাকায় ফুড বিজনেসের যাত্রা করা সুপ্তি প্রতিমাসে লাখ টাকার ওপরে আয় করেন। নিজের লেখাপড়ার ব্যয় ছাড়াও পরিবারের খরচ চালাতে পারেন। করতে পারছেন সঞ্চয়ও।
Discussion about this post