অনলাইন ডেস্ক
জাপানের টোকিওর সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তি হচ্ছে আজ। ১৯৭২ সালের এই দিনে (১০ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় জাপান।
টোকিওর সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব চায় ঢাকা। দুই দেশের মধ্যে গত বছর পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে ঢাকার পক্ষ থেকে কৌশলগত অংশীদারিত্বের প্রস্তাব দেওয়া হয়। বাংলাদেশের প্রস্তাবে সম্মতি দেয় জাপান। দুই দেশের মধ্যে গত ৫০ বছরে যে ব্যাপক অংশীদারিত্ব গড়ে উঠেছে, এখন তা ধীরে ধীরে কৌশলগত অংশীদারিত্বের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সেলক্ষ্যে উভয়পক্ষই এগিয়ে চলছে।
বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহায়তা দিয়ে আসছে জাপান। বাংলাদেশের মেট্রোরেল, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনাল, আড়াই হাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চল, মাতার বাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প, সেতু ও রাস্তা নির্মাণ ইত্যাদি প্রকল্পে জাপান সহায়তা করছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে দিয়ে উভয় দেশই লাভবান হচ্ছে।
দুইদেশের মধ্যে উষ্ণ সম্পর্ক থাকলেও ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় জাপানের ৭ জন নাগরিক মারা যায়। সেই ঘটনায় ঢাকা-টোকিও সম্পর্কে হোঁচট খায়। হোলি আর্টিজানে হামলার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন তৎকালীন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। হোলি আর্টিজান হামলার পরে অনেক জাপানি বাংলাদেশ ছেড়েও চলে যান। তবে, পরবর্তীতে হোলি আর্টিজান হামলার দ্রুত বিচার হয়। একইসঙ্গে বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন জোরালো পদক্ষেপ নেয় সরকার। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ও জাপানের সম্পর্ক ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসে।
১৯৭৩ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জাপান সফর করেন। বঙ্গবন্ধুর জাপান সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বেশ কয়েকবার জাপান সফর করেছেন। শেখ হাসিনা সম্পর্ক শক্তিশালী করতে ১৯৯২, ১৯৯৭, ২০১০, ২০১৪, ২০১৬ ও ২০১৯ সালে জাপান সফর করেন। ২০০০ সালে জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিরো মরি, ২০১৪ সালে জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ঢাকা সফর করেন। ২০১৯ সালে জাপান সম্রাটের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। এসব সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরালো হয়েছে।
বাংলাদেশে জাপানের ব্যবসা, বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের সুযোগ বেড়েছে। এখন দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার। জাপানে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানির পরিমাণ ১ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর জাপান থেকে বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়া বাংলাদেশে জাপানের তিনশটির বেশি কোম্পানি ব্যবসায় নিয়োজিত রয়েছে। বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগও নিয়েছে।
দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা পৃথক বার্তায় সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যাশা করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাপান বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে জাপানের সঙ্গে আগামীতে আরও গভীর বন্ধুত্ব হওয়ার প্রত্যাশা করেন তিনি।
এছাড়াও ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি ৫০ বছরপূর্তিতে আগামীতে দুই দেশের সম্পর্ক শক্তিশালী হবে বলে আশা করেছন।
Discussion about this post