অনলাইন ডেস্ক
৫০ বছরেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম লেখাতে পারেননি বরিশালের বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন খান আনু। একাত্তরের রণাঙ্গনের তেজোদীপ্ত এই যোদ্ধা এখন লড়ছেন জীবনযুদ্ধ।
এক সময় পরিবারের সচ্ছলতা থাকলেও এখন ৮৮ বছর বয়সী এই মুক্তিযোদ্ধা থাকেন নগরীর লালাদিঘী পাড়ের ভাড়া বাড়িতে। তিনি সংসার চালান রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে মধু বিক্রি করে।
অথচ মানুষের মুখে মুখে এখনও তিনি পরিচিত ‘আনোয়ার কমান্ডার’ নামে। একাত্তরে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘুরে ঘুরে মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ জোগাতেন তিনি।
একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আনোয়ার হোসেন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের সদস্য। সেখান থেকে পালিয়ে বরিশালে এসে যোগ দেন বেলস পার্কে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে।
সেই সময়ের কথা স্মরণ করে আনোয়ার হোসেন খান আনু জানান, বরিশালের মোট আট থানা এলাকায় পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন তিনি।
চাচৈর, বরিশাল, নলছিটি, পটুয়াখালীর লেবুখালী, ঘোপেরহাট যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছেন। যুদ্ধে তিনি নিজেও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধুর কাছে গেলে আনোয়ার হোসেনের বীরত্বের কথা শুনে সাবাশ বাঙ্গলার টাইগার বলে পিঠ চাপড়ে দিয়েছিলেন, তিনি।
বীরত্বের সনদ দেয়ার পাশাপাশি ঢাকার জাকির হোসেন সড়কে দ্বিতল বাড়ি দিতে চাইলে তা যুদ্ধে আহত সহযোদ্ধা ইউসুফকে পাইয়ে দেন আনোয়ার হোসেন।
পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল দেশব্যাপী। মোশতাকের সৈন্যবাহিনী এই গ্রেপ্তার অভিযান চালায়। সেই অভিযানে আনুকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
সাজানো অস্ত্র মামলায় তার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়। বরিশাল থেকে নেয়া হয় যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখানে জল্লাদের দায়িত্ব পালন করে সাজা মওকুফ করে ১৮ মাস পর মুক্তি পান।
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম তোলার জন্য কমান্ডারদের টাকা দিয়েও কোন সুরাহা হয়নি। এখন তার একটাই দাবি, মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি।
টাকা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় ওঠানোর বিষয়টি সঠিক বলে জানান মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দুই কমান্ডার। তারা চাচ্ছেন সত্যিকার বীরযোদ্ধা আনোয়ার হোসেনের নাম তালিকাভুক্ত হোক।
আনোয়ার হোসেনের কষ্টের কথা শুনে আপ্লুত জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার। তিনি দ্রুত আনোয়ার হোসেনকে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে যোগাযোগ করতে বলেন।
সবশেষ আবেদনে আনোয়ার হোসেনের পিতার নাম ভুল আসায় তিনি মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম তোলাতে পারেননি।সৌজন্যে-একাত্তর.টিভি
Discussion about this post